বরগুনায় দুই কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
প্রাইমনিউজ ডেস্ক :বরগুনায় দুই কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন এক গৃহবধূ। ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে বরগুনা থানার ওসিকে এফআইআর করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আদালত এ আদেশ দেন। পরে অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে বড় ভাইকে জব্দ করতেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগে রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বরগুনা কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সামনে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
ধর্ষণের অভিযোগে মামলার দুই আসামি হলেন, বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের শাহজাহানের ছেলে কামরুল হাসান। তিনি বামনা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। অন্যজন একই এলাকার আ. সোবাহানের ছেলে বণি আমিন। তিনি তালতলী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। দুজনে সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই। সেই সঙ্গে কামরুল হাসান ওই গৃহবধূর আপন ভাশুর।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বরগুনা কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ও মামলার বাদী ওই গৃহবধূর স্বামী এনামুলকে মিথ্যা মামলায় কারাগার থেকে মুক্ত করার প্রলোভন দেখায় আসামিরা। গত ১৮ই জানুয়ারি বিকেলে বরগুনা কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের নৈশপ্রহরীর কক্ষে দুই নম্বর আসামি বণি আমিনের সহায়তায় স্বামী এনামুলের আপন বড় ভাই কামরুল হাসান জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। মামলার বাদী ওই গৃহবধূর স্বামী এনামুল এ প্রতিবেদকের কাছে মামলার অভিযোগের বিষয় সত্য দাবি করে, ডাক্তারি পরীক্ষার দাবি জানান।
এ মামলার এক নম্বর আসামি বামনা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, নিজের অনিয়ম আড়াল করতে এবং আমাকে হয়রানি করতেই আমার আপন ছোট ভাই এনামুল তার স্ত্রীকে দিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলায় উল্লেখিত তারিখে আমি কর্মস্থলে সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এছাড়া আমার বামনা ডরমিটরি রেজিস্ট্রারেও স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি মামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার বাদীর ডাক্তারি পরীক্ষার অনুরোধ জানান।
অন্য আসামি বণি আমিন মামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, মামলায় বর্ণিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে আমি স্ত্রী-সন্তানসহ বরিশালে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমার কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ প্রমাণ আছে, সেগুলো আদালতে পেশ করব। বাদীর স্বামী এনামুলকে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সভাপতির অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান থেকে সাময়িক বরখাস্ত করায় এমন মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে বরগুনা থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আদালতের আদেশে অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিক্টিমের ডাক্তারি পরীক্ষাসহ মামলার অন্যান্য তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।
অপরদিকে বড় ভাইকে জব্দ করতেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে এমনি অভিযোগে রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বরগুনা কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সামনে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী ভুক্তভোগী গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানান, বৃদ্ধের সরকারি বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এনামুলের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন তখনকার বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা। সে মামলায় গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিকেলে এনামুলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া এনামুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে চলমান। সেসব মামলার অভিযোগের দায় থেকে রেহাই পেতেই মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে নিজের স্ত্রীকে দিয়ে আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এনামুল। আদালতের আদেশকে সম্মান জানিয়ে ডাক্তারি প্রতিবেদন আদেশ পুর্নবিবেচনা করতে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয়রা।
মামলার বাদী ওই গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি ঘটনার অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কয়েকদিন আগেও বড় ছেলে বামনা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা কামরুল হাসানের স্ত্রী ও বরগুনা কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সাবিনা আক্তারকে জেল খাটিয়েছে আমাদের ছোট ছেলে এনামুল। এখন আবার কামরুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।