সব

যারা অপরাধী অভিযুক্ত তারা মুক্তি পেয়ে পরিবারে ফিরছে, শহীদ বাবা যদি ফিরে আসতো!

AUTHOR: Mojammel
POSTED: Wednesday 29th January 2025at 11:41 pm
27 Views

প্রাইমনিউ ডেস্ক :   ‘আজকে দুঃখ হয়, ভাবতে কষ্ট হয়, যারা অপরাধী, অভিযুক্ত তারা মুক্তি পেয়ে পরিবারে ফিরছে, সন্তানদের কোলে নিচ্ছে, কোলাকুলি-গলাগলি করছে। সেটা দেখে এখন আমার মনে হচ্ছে, টাইম মেশিনের মতো হলেও যদি শহীদ বাবারা ফিরে আসতো? তাহলে কতই না খুশি হতো সন্তানেরা। কথাগুলো বলছিলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তা শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজমের স্ত্রী মুনমুন আক্তার। শুধু তিনি না, নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার ও বেঁচে ফেরা সেনা কর্মকর্তারা এমন আক্ষেপ করেছেন। তারা সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যায় জড়িত ‘অপরাধী-অভিযুক্ত’ সৈনিকদের মুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছেন। বুধবার রাজধানীর মহাখালী রাওয়া ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পিলখানায় নির্মমভাবে নির্যাতনে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজমের স্ত্রী মুনমুন আক্তার বলেন, উপল-৮/সি-তে আমরা ৮টা পরিবার ছিলাম। তারমধ্যে ৬টি পরিবারই সেদিন শহীদ হয়েছেন। যখন গোলাগুলি হচ্ছিল তখন ভীতু অবস্থায় বসে ছিলাম। স্বামী ফোন করে বলে সেফ জোনে যেভাবেই হোক চলে যেতে। কিছুক্ষণ পরেই লাথি দিয়ে দরজায় আঘাত করা হয়। ওইদিন আমার বাসায় কিছু অতিথি ছিল। আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম। ওরা (সৈনিকরা) ঘরে ঢুকে বের হতে বলে। দুইটা ভ্যানে করে আমাদের তুলে নেওয়া হয়। সৈনিকদের লাল কাপড় বাঁধা ও অস্ত্র। অন্য পরিবারের সন্তানদের নিয়ে আরেকটা ভ্যানে করে যেতে বলেন। আমি রাজি হইনি। জোর করেই একটা ভ্যানে করে বের হই। কোয়ার্টারে যাবার পর আলাদা করার চেষ্টা করছিল। সেদিন আমি অনেক বাচ্চাকে কোলে আগলে রেখেছিলাম। রক্তচক্ষু দেখিয়ে আমাদের সেদিন ভ্যানে ওঠানো হয়েছিল। আমরা দু দিন কোয়ার্টারে আটকে ছিলাম। আজকে সেই রক্তচক্ষুর সেই দৃশ্য এখনো মনে পড়ে। দেখেছি কিভাবে একটা সৈনিক কতটা হিংস্র হতে পারে। আমি যখন দেখি, আমার বাসায় নাস্তা করা সৈনিকটা ঘণ্টা খানেক পর লাল কাপড় বেঁধে স্লোগান দেয় তখন অবাক হয়েছি। কষ্ট করে, জীবন দিয়ে যারা দেশের জন্য কাজ করেছেন, তাদের নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছেন তারা জেল থেকে বের হচ্ছে দেখে অবাক হচ্ছি। মুনমুন বলেন, টাইম মেশিনের মতো আমাদের বাচ্চাদের বাবারা যদি ফিরে আসতো, আর বলতো এই দেখো বাবারা, আমরাও ফিরে এসেছি। দেখতেন ওরা কত খুশী হতো। এটাই সত্য যে, এটা কখনো সম্ভব হবে না।

মুনমুন আক্তার শহীদ পরিবারের সংগ্রাম লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন, বাবা মারা যাবার পর চারটি পরিবারের সন্তান জন্ম নিয়েছে। আমাদের কষ্টগুলো কেউ জানতে চায় না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখেছি, তার ডান পাশের পাজরের পাঁচটি হাড় ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মাথার এক সাইট দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে গুলি বের হয়ে গেছে। আজকে যখন দেখি খুনি সৈনিকরা জেল থেকে বের হচ্ছে তখন সন্তানদের মুখে তাকাতে পারি না। আমার ছোট ছেলে গেঞ্জি রেখে দিয়েছিল। এক কাপড়ে বের হয়েছিলাম। আমার সেই তখনকার সাত বছরের ছোট ছেলেটা বলে ওই গেঞ্জিটা হারাইও না। দুঃখ লাগে আজকে সেই খুনি সৈনিকরা জেল থেকে বের হয়ে পরিবারের সঙ্গে কোলাকুলি, গলাগলি করছে। আজকে এতোদিন একা একা সন্তানদের মানুষ করেছি। কষ্টের কথা কেউ শুনতে আসেনি।

এ সময় পিলখানায় শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ লে. কর্নেল সাইফের পরিবার, পিলখানায় শহীদ লে. ক লুৎফর রহমান খানের মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা, শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌস, বেঁচে ফেরা লে. কর্নেল (অব.) ডা. সালাম লে, কর্নেল(অব.) রিয়াজ, পিলখানায় শহীদ মেজর আব্দুস সালামের বড় ছেলে সাকিব মাহমুদ খান, বিডিআরের কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর শহীদ নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নানসহ অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ খবর