রাষ্ট্রের ২ অঙ্গ ব্যর্থ হলে, বিচার বিভাগ দর্শক হতে পারে না: এস কে সিনহা
আমারবাংলা ডেস্কঃ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, রাষ্ট্রের দুইটি অঙ্গ যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন বিচার বিভাগ নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না।
মঙ্গলবার ‘বিচারিক স্বাধীনতা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট ও কমনওয়েলথ ম্যাজিস্ট্রেট অ্যান্ড জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন ও নির্বাহী বিভাগের কাজের ওপর আদালত বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষকের (ওয়াচডগ) দায়িত্ব পালন করছে। সাংবিধানিক পদ্ধতির অধীনে স্বাধীন বিচার বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রের ৩টি অঙ্গের ভূমিকা সঠিকভাবে অঙ্কন করার মাধ্যমে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান অবদান।
তিনি বলেন, যখন রাষ্ট্রের দুইটি অঙ্গ তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন বিচার বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না। আইনের সীমার মধ্যে থেকে সুপ্রিম কোর্ট সবসময় সংবিধানের অন্যতম অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
এস কে সিনহা আরও বলেন, বিচারিক স্বাধীনতা মানে কোনো ধরণের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ ছাড়া বিচারকের ক্ষমতা প্রয়োগ করা। বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতার মূল ও ঐতিহ্যগত অর্থ হলো- সরকারের রাজনৈতিক শাখাগুলো থেকে বিশেষত নির্বাহী সরকার থেকে বিচারকদের সামষ্টিক ও স্বতন্ত্র স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণা কোনো শস্যভাণ্ডারের মতো নয় যা শুধু বিচারকদের ওপর নির্ভর করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা আইনি কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই কাঠামোর মধ্যে থেকে বিচার বিভাগকে কাজ করতে হয়। এতে সরকারের সমর্থন এবং রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোর বিচারব্যবস্থা একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আমাদের বিচারিক দায়িত্বশীলতার, সহজে বিচার পাওয়ার সুযোগের, কাঠামোগত স্বাধীনতার, বিচার বিভাগে তথ্য-প্রযুক্তিগত সুবিধার, শক্তিশালী নাগরিক সমাজের, রাজনৈতিক সদিচ্ছার এবং সচেতনতার অভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত বাজেট ও বেতনের পাশাপাশি আইনজীবী সমিতি ও বেঞ্চের (আদালত) মধ্যে সুসম্পর্কের অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতা উন্নয়নের পথে বাধা।
এস কে সিনহা বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এবং আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য কমনওয়েলথ দেশগুলোর বিচার বিভাগগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্ধেকের বেশী মানুষ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণটি কী তা জানে না। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে পৃথক করার জন্য মানুষের কোনো শক্তিশালী আন্দোলন নেই। সচেতনতার অভাবই এর কারণ।
কমনওয়েলথ দেশগুলোর সরকারগুলোকে কমনওয়েলথ লিগ্যাল রিচার্স জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এমন একাডেমিতে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। একইসঙ্গে সন্ত্রাস সম্পর্কিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মামলার বিষয়েও আলাপ আলোচনা করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট রয় রিনাউডে, ইংল্যান্ডের বিচারক শামীম কোরাইশী, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের আইন উপদেষ্টা মার্ক গোথরে প্রমুখ।