এই আইন বাল্য বিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ আইন: আবুল মকসুদ
স্টাফ রিপোর্টারঃ লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, এই আইনের নাম বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন না হয়ে হতে পারে বাল্য বিবাহ জায়েজ আইন বা বাল্য বিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ আইন। তিনি জনমত বিবেচনায় আইনটি সংশোধনের দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর উদ্যোগে আজ ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ এর বিশেষ বিধান (১৯ নং ধারা) বাতিলের দাবিতে নারী সমাবেশে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে তোপখানা রোড, পল্টন ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সভাপতি রওশন আরা রুশো এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক দিলরুবা নূরী।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আক্তার হোসাইন, সিপিবি নারী সেল এর আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়–য়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর সভাপতি ইমরান হাবীব রুমন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরাম এর সদস্য ডা. মনিষা চক্রবর্তী।
খালেকুজ্জামান বলেন, “বেগম রোকেয়া আজ থেকে একশ বছর আগে বলেছিলেন মেয়েদেরকে ২২ বছরের আগে বিয়ে না দিতে। একজন নারীর স্বাধীন মানবিক সত্ত্বা বিকশিত হওয়ার সময় ও সুযোগ তাকে দিতে হবে। তাকে শিক্ষাপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানেও নারী-পুরুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। তাই আমরা দাবি করি এ সময়ের প্রেক্ষিতে বরং বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানো উচিত। নারী-পুরুষ কাউকেই বরং ২৫ বছরের আগে বিয়ে না দেবার বিধান হতে পারে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, এই আইনের বিশেষ প্রেক্ষাপট আইনে ব্যাখ্যা করা না থাকলেও সরকারের মন্ত্রী এমপিরা বলছেন ধর্ষিত হয়ে নারী যদি অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে যায় তাহলে এই আইনে বিয়ে হবে। তার অর্থ দাঁড়ায় যে আমাকে অপমান করলো, লাঞ্ছিত করলো, ধর্ষণ করলো তার গলায় আমাকে পড়াতে হবে বরমাল্য এ কেমন বিধান?
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, বাবা-মায়ের সম্মতিতে অর্থ বাবা-মা জোড় করে বিয়ে দিতে পারেন এবং আমাদের দেশে যেগুলো অহরহ ঘটছে। ফলে এই বিশেষ বিধান সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়–য়া বলেন, শুধু প্রতিবাদ নয় এবার থেকে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেখানেই বাল্য বিয়ের চেষ্টা হবে সেখানে বাঁধা দিতে হবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে।
সভাপতির বক্তব্যে রওশন আরা রুশো বলেন, নারীর অসহায়ত্বকে দেখিয়ে বিয়ের বয়স কমানো নয় বরং নারীর দক্ষতা, যোগ্যতা, মর্যাদাবোধ, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।