সব

যদি মেরেই ফেলেন তাহলে অন্তত লাশটা দেন?

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 29th August 2017at 11:05 am
42 Views

স্টাফ রিপোর্টারঃ এখনো এক সাথে ঈদ করার সপ্ন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা ঈদুল আযহার আগেই তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি গত ছয় দিনে তিনজন প্রথিতযশা ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে প্রকাশ্যে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে তাঁদের অপহরণ করা হয়।

দুটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে আছে, কিন্তু কোনো কিনারা করতে পারছে না তারা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচমাসে ৪৮ জন নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েক জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীও রয়েছেন।

গুম হয়ে যাওয়া ব্যাক্তির পরিবার গুলো এখন শুধু আতঙ্ক নিয়ে থাকে কোন অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পাওয়ার খবর নিয়ে।

তেমনই অজ্ঞাত লাশের কথা শুনে ছুটে যান আয়েশা খন্দকার বা তার পরিবারের লোকজন । এই বুঝি আরমানের লাশ পাওয়া গেলো !! ছেলের খোঁজ না পেয়ে একদম পাগলপাড়া মা আয়েশা খন্দকার।

এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলো আজমী আযম এবং আরমান বিন কাশেম ফিরে আসেন নি। এখনো পথ চেয়ে বসে আছে তাদের পরিবারগুলো।

গত বছরের ৯ আগষ্ট মানবতা বিরোধী অপরাদ অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিষ্টার আহমদ বিন কাশেম (আরমান) এবং ২২ আগষ্ট অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে বিগ্রেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আজমীকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

পরিবার বলছে ,‌‌‌’সরকারের হাতেই বন্দি রয়েছেন ব্যারিস্টার আরমান। তার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করে আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার হোক। আর যদি ছেলেকে বাঁচিয়ে নাও রাখে তাহলে অন্তত ছেলের লাশটা ফেরত দিক। ‘

বার বার প্রশাসন , রাষ্ট্রের কাছে স্বজনরা দৌড়ঝাপ করলেও কোন হদিস দিতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনের কাছে নেই বললেও কোথায় তারা থাকতে পারেন তারও কোন হদিস দিতে পারেনি প্রশাসন।

নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত মিরপুর ডিওএইচএস-এর বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারিষ্টার আহমদ বিন কাশেম আরমানকে।

তাঁকে উঠিয়ে নেয়ার আগের রাতে ইউনিফর্ম পরিহিত পোশাকে র‌্যাব গিয়েছিল বাসায়। তখন তাঁকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে আরমান জানতে চায় কেন যেতে হবে। তাদের সাথে কোন ওয়ারেন্ট রয়েছে কিনা! এই কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে র‌্যাব সেই রাতে তাঁকে না নিয়েই চলে যায়।

কিন্তু পরের রাতে সাদা পোশাকে আসা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মা, বোন এবং স্ত্রীর সামনে থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়।

তাঁর ১৩ দিনের মাথায় সেনা বাহিনীর সাবেক চৌকস কর্মকর্তা যিনি কর্মজীবনের শুরুতে সোর্ড অব অনার পেয়েছিলেন বিগ্রেডিয়ার আযমীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে নেয়ার সময় বাসার আসে পাশের রাস্তায় লাগানো সরকারি সিসি ক্যামেরাও খুলে ফেলা হয়। এমনকি বাসা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লাগানো সিসি ক্যামেরাও তছনছ করা হয়।

কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে আটকের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। কিন্তু পুলিশ তাদের খুঁজে বের করার বিষয়ে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, তাদের পরিবারের কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে পুলিশ তাদেরকে খুঁজে বের করবে।’

এইরকম রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে গুম হওয়ার সংখ্যা এক দুই জনের ভিতরে এখন আর নেই।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে সানজিদা ইসলাম তুলির ভাই সাজিদুল ইসলাম সুমন একজন। তার অভিযোগ, প্রায় চার বছর আগে তাকে র‌্যাব- ১ লেখা তিনটি গাড়ি ও একটি সাদা মাইক্রোবাস তাকে তুলে নিয়ে যায়।

সুমনের পরিবার সেদিনেই র‌্যাব- ১ এর অফিসে গেলে তারা তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে তেজগাঁও থানায় জিডির জন্য গেলে তাদের ভাটারিয়া থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে গেলে ‘র‌্যাব তুলে নিয়েছে’- এমন অভিযোগে জিডি নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

তিনি বলেন, এখনো তারা অপেক্ষায় আছেন তার ভাই ফিরে আসার। ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর আমার ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। তার পাঁচজন বন্ধুসহ তাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

র‌্যাব-১ এর গাড়িতে করে পুরো টিম তাদের তুলে নেয়। যেখান থেকে তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে একটি নির্মণাধীন ভবনের ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক ও কেয়ারটেকার ছিলেন, যারা এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই তৎকালীন ৩৮ নং (বর্তমানে ২৫ নং ওয়ার্ড) ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তাকে গুম করার এটাই কারণ। সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোন অভিযোগও ছিলো না তার।’

সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেদিনই আমার মা, ভাই ও বোন র‌্যাবের অফিসে যান। অথচ তারা বারবারই ভাইকে তুলে আনার কথা অস্বীকার করে।

প্রথমে তেজগাঁও থানায় যাই পরে তারা বলে ভাটারা থানায় যেতে হবে। কিন্তু ভাটার থানায় গেলে র‌্যাব- ১ তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তারা জিডিও গ্রহণ করে না। মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

সবারই পরিবার এখন গুম হয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসা হুম্মামের পরিবারের মতো আশায় বুক বাঁধে হয়ত কোনদিন ফিরে আসবে। আবার একসাথে তারা ঈদ উদযাপন করবে।


সর্বশেষ খবর