অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করবে না : রাষ্ট্রপতি
চট্টগ্রাম করেসপন্ডেন্টঃ রাষ্ট্রপতি এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) আচার্য মো. আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তোমাদের বাস্তব জীবনের আসল সংগ্রাম আজ থেকেই শুরু। আজকের এ সনদপ্রাপ্তি সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার স্বীকৃতিপত্র। এ সনদের সম্মান তোমাদের রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তোমাদের এ অর্জনে দেশের প্রতিটি মানুষের অবদান রয়েছে।’
রবিবার বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। সমাবর্তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমিরেটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভাসু’র উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেবা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে এ সনদের মান সমুজ্জ্বল রাখবে। অন্যায় ও অসত্যের কাছে কখনো মাথা নত করবে না। বিবেককে বিকিয়ে দেবে না। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে তোমাদের অবদান রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা, দেশপ্রেম হোক তোমাদের চলার পথের পাথেয়।’
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়ার নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে কৃষিতে পড়তে শুরু করেছে। অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই এ দু’টি খাতের অগ্রগতি নিশ্চিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় গবেষক ও বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন জাত এবং পদ্ধতি আবিষ্কারে মনযোগী হতে হবে। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই এই বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যেখানে ক্ষুধা-দরিদ্রমুক্ত বিশ্ব গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন মেধাবী ও সুশিক্ষিত জাতি। মেধাবী জাতি গঠনে সবচেয়ে জরুরি হলো- প্রাণিজ আমিষের। একটি জাতিকে স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী হয়ে ওঠতে দুধ, ডিম মাছ মাংসের সহজলভ্যতা ইতিবাচক অবদান রাখে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটেগণ মাঠ পর্যায়ে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একটি মেধাবী ও সবল জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে- এটিই জাতির প্রত্যাশা।’
সিভাসু সূত্রে জানা যায়, এ বছর স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডিতে মোট এক হাজার ২৭৩ জনকে সনদ দেওয়া যায়। এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে (কলেজ আমল) ২২২ জন, ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ৬১৮ জন, ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদে ১৫২ জন, ফিশারিজ অনুষদে ৬৯ জন। তাছাড়া স্নাকোত্তর পর্যায়ে ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে ১৮১ জন এবং ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদে ২৯ জন।ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে পিএইচডি সনদ দেওয়া হয় দুইজনকে।
প্রসঙ্গত, দক্ষ প্রাণী-চিকিৎসক তৈরি করতে ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে নগরীর ওয়ারল্যাস কলোনি এলাকায় ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ছিল এই কলেজ। ২০০৬ সালে এই কলেজকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করা হয়। পরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি (সিভাসু) প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি মেডিসিন, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং মৎস্যবিজ্ঞান নামে তিনটি অনুষদ দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।