খেলায় মত্ত বাবা: ৬তলা থেকে পড়ে ৪তলায় ঝুলছিল বাচ্চাটি!
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কঃ প্যারিসে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ব্যালকনি থেকে ঝুলতে থাকা ছোট্ট শিশুটিকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করায় প্রশংসিত হচ্ছেন মালির বংশোদ্ভূত অবৈধ অভিবাসী মামুদু গাসামা।
সোমবারের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের পর ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি পাচ্ছেন ফ্রান্সের নাগরিকত্ব।
কিন্তু মামুদুর প্রশংসার পাশাপাশি শিশুটি কিভাবে ব্যালকনিতে ঝুলছিল সে সম্পর্কেও অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। আর এতেই বেরিয়ে আসছে তার বাবার দায়িত্বহীনতার খবর।
জানা গেছে, শিশুটির বয়স চার বছর। তার পিতা তাকে একা বাসায় ফেলে রেখে শপিং করতে বের হয়ে গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা না করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
বাচ্চাটি রিইউনিয়ন নামের একটি জায়গায় তার মা ও নানীর সঙ্গে থাকত। তিন সপ্তাহ আগে সে প্যারিসে তার পিতার কাছে চলে আসে।
তার পিতা ওই শহরেই চাকরি করেন। তার মা এবং ওই দম্পতির দ্বিতীয় এক সন্তানেরও আগামী জুন মাসে এই ফ্ল্যাটে চলে আসার কথা।
উত্তর প্যারিসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ছয় তলায় থাকেন ওই পিতা। বাচ্চাটি ছয় তলা থেকেই পড়ে গিয়েছিল কিন্তু পড়ার সময় সে ভাগ্যক্রমে দুই তলা নিচে চারতলার ব্যালকনি ধরে ফেলতে সক্ষম হয়।
বলা হচ্ছে, চারতলারই আরেকটি ফ্ল্যাটের একজন প্রতিবেশী বাচ্চাটির কাছে জানতে চায় সে কোন তলায় থাকে তখন সে উপরের দিকে ইঙ্গিত করে।
বাচ্চাটির মা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ছেলেটির পিতা বাচ্চাটিকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতো না। ঘরে তাকে একা রেখে বাইরে চলে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমার স্বামী যেটা করেছে সেটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমার ছেলের ভাগ্য ভালো। এর বেশি কিছু নয়।
সরকারি আইনজীবীরা বলেছেন, শপিং করার পরেও শিশুটির বাবার বাড়িতে ফিরতে দেরি হয়েছিল। পোকেমন গো গেম খেলার কারণে তার ফিরতে দেরি হচ্ছিল।
এ ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর লোকজন নানাভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন।
কেউ বলছেন, প্রতিবেশী চারতলার ফ্ল্যাটের এক পুরুষকে শিশুটির খুব কাছেই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মামুদু চারতলা বেয়ে উপরে উঠার আগে তিনি নিজেই কিছু করলেন না কেন।
কিন্তু ওই প্রতিবেশী প্যারিসের একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তিনি বাচ্চাটির হাত ধরে রেখেছিলেন কিন্তু তাকে টেনে উপরের দিকে তুলতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, দুটো ব্যালকনির মাঝের একটি ডিভাইডারের কারণে তিনি বাচ্চাটিকে উপরে টেনে তুলতে পারছিলেন না।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই নি। বাচ্চাটি হয়তো তখন হাত ফসকে নিচে পড়ে যেতে পারতো। আমি ভেবেছি ধাপে ধাপে অগ্রসর হলে হয়তো ভালো হবে।
তিনি জানান, বাচ্চাটি স্পাইডারম্যানের জামা পরেছিল। তার পায়ের ওখান থেকে রক্ত ঝরছিল এবং একটা নখও ভেঙে গিয়েছিল।
ফরাসী সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, শিশুটিকে কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এও বলা হচ্ছে যে এই ঘটনার পর শিশুটির পিতা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে ব্যর্থ হলে পিতামাতার দুবছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার পাউন্ড জরিমানা হতে পারে।
সোশাল ওয়ার্কাররা এখন বাচ্চাটির মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন জানা গেছে।
কে এই মামুদু গাসামা
২২ বছর বয়সী মামুদু গাসামা পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে থাকতেন। ২০১৩ সালে কিশোর বয়সে তিনি দেশ ছেড়ে চলে আসেন। সাহারা মরুভূমির ভেতর দিয়ে বারকিনা ফাসো, নিজের এবং লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে চলে আসেন।
এর আগেও তিনি আরেকবার সমুদ্রপথে ইটালিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ধরে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
মামুদু ফরাসী প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন যে ইতালিতে তার চেনাজানা কেউ ছিল না বলে তিনি ফ্রান্সে চলে এসেছেন। এছাড়াও তার এক ভাই বহু বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছে।
প্যারিসে তিনি বাড়িঘর নির্মাণে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আশ্রয় চেয়ে তিনি কোন আবেদনও করেননি বলে তিনি জানিয়েছেন।
চার তলা বেয়ে উপরে উঠে তিনি শিশুটিকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। পরে সামাজিক মাধ্যমে তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে ফরাসী কর্তৃপক্ষ।
ওই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। তার একদিন পর পরিবারটি উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলছে, ‘তিনি একজন সত্যিকারের নায়ক।’
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন তাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।সাহসিকতার জন্যে তাকে একটি মেডেল পুরস্কার দিয়েছেন তিনি এবং বলেছেন তাকে দমকল বাহিনীতে চাকরি দেয়া হবে। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)