তারুন্যের জাগরন ও ক্ষমতার পলায়নপরতা
মুনজের অাহমদ চৌধুরীঃ কোটা অান্দোলনের মতো নিরাপদ সড়কের অান্দোলনও সুস্পষ্ট আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং প্রজ্ঞাপন ছাড়া শুধুমাত্র সরকারী অাশ্বাসের বানীতে গন্তব্য খুজল। এবং তা ইতিবাচক কোন ধরনের কার্যকর ও অর্থবহ ফলাফল ছাড়াই।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাচঁ দফা নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কোটা অান্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোন কোটা থাকবে না। পরবর্তীতে নিজের কথা থেকে কৌশলের কূশলী মারপ্যাচে সরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই যে তারুন্যের ন্যায্য দাবী দাওয়া অাদায়ের অান্দোলনগুলোর উপসংহারে না গড়ানো, এজন্য দুটি পক্ষের দায় থেকে যায়।
প্রথমত, সরকারের অাশ্বাস ও কৌশলের খেলা। কেননা, ন্যায্য দাবীগুলি সুস্পষ্টভাবে মেনে নেওয়াকে সরকার এক অর্থে নিজেদের পরাজয় মনে করে। অ-নির্বাচিত সরকার তখন রাষ্ট্রের তরুনদের সাথেও কুট-কৌশলের খেলা খেলে। তাদের ভেতরে ভয় ‘পড়ে যাবার’। তাই, ন্যায় বা অন্যায়ের বিচার না করে তখন তারা দমন-পীড়ন এবং অজুহাতের হাতে কেবল থামিয়ে দেবার পথ খোজেঁন। সমাধান খোঁজেন না।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকটি দল-নিরপেক্ষ অান্দোলনের ‘গেইন নিতে’ সরকারের কৌশলের কাছে বার বার পরাস্ত, পক্ষাঘাতগ্রস্থ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। দেশে যৌক্তিক জনদাবী নিয়ে অান্দোলনে অক্ষম বিরোধী রাজনৈতিক শিবির শিক্ষার্থীদের দল নিরপেক্ষ অান্দোলনের সুযোগে সরকার ‘ ফেলে দেবার ‘ অপতৎপরতা শুরু করে।
জনগনের নাম দিয়ে চলা অাসলে জনবিরোধী, ক্ষমতালোভী পক্ষগুলোর এই টানাটানিতে ন্যায্য জনদাবী পূরনের অান্দোলন ব্যাহত এবং বাধাগ্রস্থ হয়, হচ্ছে।
কিন্তু, কোটা ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে তারুন্যের অান্দোলন প্রমান করেছে, বাংলাদেশের তারুন্য লড়তে জানে। তারা অামাদের ক্ষমতালোভী রাজনীতিকদের মতো কাপুরুষ, ভীরু, বেঈমান অার ভন্ড নয়।
এই দলান্ধ, বিভাজনে বিভাজিত পরমতের প্রতি ঘৃনা চর্চার দেশে পরিবর্তন অাসবে-ই। নপুংসক, ক্ষমতা কামড়ে থাকা নয়তো যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় পৌঁছুতে মরিয়া রাজনীতির এ অন্ধকার দিনের অবসান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারুন্যের উত্থান অামাদের সে বার্তা দিয়েছে।
অামাদের তারুন্য জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে, তারা দেশটাকে ভালবাসতে জানে, হৃদয় দিয়ে। অামাদের শিশুরা প্রমান করেছে, সহপাঠীর লাশ পাশ কাটিয়ে তারা বড়দের, বুড়োদের মতো অাত্মকেন্দ্রীকতায় ব্যক্তিনিরাপত্তায় মত্ত হয়ে বাড়ী ফেরে না। অামাদের কিশোররা প্রমান করেছে, তারা বেডরুমের বিছানায় শুয়ে ফেসবুকের ষ্টাটাসে নয়, রাজপথে নেমে রাজনৈতিক লম্পটদের বিরুদ্ধে লড়তে জানে।
বাংলাদেশে এ মুহুর্তের জনসংখ্যার বড় অংশটি অামাদের তারুন্য। ৯০ এর সফল ছাত্র অান্দোলনের ২৮ বছর পর অাজকের বাংলাদেশের তারুন্য ২০১৮ তেও প্রমান দিয়েছে তাদের দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধের।
তারুন্যের এই দ্রোহ, দায়িত্বশীলতা অামাদের রাজনীতিজীবিদের সঠিক বার্তাটি অন্তত পৌঁছে দিয়েছে। ক্ষমতার ফড়িয়ারা ১৯৯০ এর পর নানা অপতৎপরতায় তাদের ক্ষমতার রাজনীতিকে নিরাপদ রাখতে, তারুন্যকে গোল্ডফিস মেমোরীর একুরিয়ামের মাছ বা ফার্মের মুরগী বানিয়ে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু, ভ্রষ্ট রাজনীতির সব নষ্ট ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। অামাদের তারুন্য মাথা তুলে দাড়িয়েছে।
সব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে, এই যে তারুন্যের অাশা জাগানিয়া অভাবনীয় উত্থান, এখানেই শুরু হল জনতার জয়জয়কার। সকল ক্ষেত্রে ন্যায়হীনতা, অন্যায় তন্ত্র, বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন অধ্যায়ের শুরু হল এখানেই।
তারুন্যের এ উত্থানের স্রোতে শিশুদের রক্তের অক্ষরে লেখা হল নতুন দিনের বার্তা। গনমাধ্যম সহ সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন দিয়ে যে ক্ষমতা অার পার পাবে না, সেটা ক্ষোভের অক্ষরে, সাহসের সত্য বাক্যে তারুন্য কম্পন তুলে জানিয়েছে রাষ্ট্রকে। ক্ষমতার ভয়ার্ত শংকিত চোখে অাজ দেখা গেছে তারুন্যের বিজয়ের ভোর। সকাল ডাকছে…অালো অাসছে। ইতিহাস অার অাজকের বাস্তবতা বলে, শোষকের কোন সাধ্য নেই, এ জাগরন রুখে দাড়াবার। ব্যাপারটা এখন কেবল, সময়ের সময় হবার মাত্র। শিশুদের রক্তের পবিত্র অক্ষরে, নতুন করে লেখা হল অন্যায়ের বুক চিরে বাংলাদেশের নাম।
মুনজের অাহমদ চৌধুরী, ৫ অাগষ্ট।