কোন পথে সংবাদপত্র! পর্ব ১
মোঃ আশরাফ হোসেন ঢালীঃ আঠারোশো আঠার সাল। ভারতবর্ষে সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু। তৎকালীন ইংরেজদের শাসনকাল। আর এই ইংরেজদের শাসনকালে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেছে তৎকালীন সময় সংবাদপত্র। বাংলাদেশ হবার আগে ছিল পূর্বপাকিস্তান। ১৯৪৮ সাল। তখনো এখানে নামীদামী সংবাদপত্র ছিল। যা ভারতবর্ষের যে কোনো সংবাদপত্র থেকে কম কিসের। সম্পূর্ণ এক সমানে সমান। ১৯৫২ সাল ভাষা আন্দোলন। সেই আন্দোলনে সংবাদপত্রের অনেক বড় একটি ভূমিকা ছিল। যে কারনে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে। দিন, বছর, গড়িয়ে ১৯৭১। এলো স্বাধীনতা ডাক। এই সময় পাকিস্তান এই দেশের জনগণের উপর যেমন বর্বরতা হামলা চালিয়েছে। একই ভাবে ন্যক্কারজনক কাজ করেছে, সংবাদপত্রে উপর হামলা করে, ধ্বংস করে দিয়েছিল, দৈনিক ইনকিলাব, ইত্তেফাক, আজাদী, অবজারভার সংবাদপত্রের অফিস। সে সময় আত্মত্যাগ দিয়েছিল অসংখ্য সংবাদকর্মী। যাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে সবুজের মাঝে লাল।
বাংলাদেশ এখন স্বাধীন। স্বাধীনের পর কাউন্সিল গঠন করে অক্ষম সংবাদপত্রের ভার নিয়েছিল সরকার। চলতে চলতে ১৯৭৫ সাল। রাজনীতির মারপেঁচ বলি হলো আবার সংবাদপত্র। বন্ধ করে দেয়া হলো সংবাদপত্রের অফিস। এক পা দুই পা করে হাটতে হাটতে ১৯৯০। সংবাদপত্রের আরেকটি বড় ভূমিকা ছিল স্বৈরাচার সরকার বিরুদ্ধী আন্দোলন। বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল সংবাদপত্রগুলি। ঠিক একই ভূমিকা ছিল ২০০৮ সালে।
এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। অনেক কিছু আপডেট পাওয়া যায়। ইন্টারনেট মাধ্যমে চট করে পাওয়া যায় যে কোনো খবর। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসআপ, ভাইবার এ সকল যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে যে কোনো কিছুকে ভাইরাল করে দেয়া যায়। তাই তো ২০১৫ সালে নতুন করে সরকার আইন সংশোধন করেছে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা। এ ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। এতে করে অনেক মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে। গত ২ আগস্ট ২০১৭ প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়, ওই বছরের জানুয়ারি মাসে আইসিটি আইনে ৪২টি মামলা হয়। জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৭৯টি। তখন কার ছয় মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৯১টি। ওই সব মামলার বেশির ভাগই হয় ৫৭ ধারায়। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাঁদের ৩১৩ জন গ্রেপ্তার হন। এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ৫৭ ধারা বাতিল করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ঘোষণা দেয়ার পর থেকে, তা মানতে নারাজ সংবাদপত্রের মালিক-সম্পাদক সাংবাদিকবৃন্দ। ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে ছিল মন্ত্রিপরিষদ। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়ে ছিল। ‘আইনে ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়ে ছিল’। রাষ্ট্রপতির কাজ থেকে একবার ফিরেও আসে এই অনুমোদন। পরবর্তী কিছু দিন আগে তা অনুমোদন দেয় রাষ্ট্রপতি। অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন কে কেন্দ্র করে এই কালো আইন পাশ করেছে সরকার।
কিন্তু কেনো এই আইন? এটা কি সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করতে এই আইন! তাহলে অধিকাংশ সংবাদপত্র অনুমোদন দিয়েছে কেনো এই সরকার? এই সরকার কালীন যে কারণে সংবাদ পত্র হয়ে উঠেছে শিল্প। আর এই কারণে বিশ্বের ভেতর নাম কামিয়েছে দেশী সংবাদপত্র গুলো। আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, দুর্নীতি, সহিংসতাবিরোধী, জঙ্গি বিরোধী অনেক কিছুতে অবদান রেখেছে এই সকল সফল সংবাদপত্র। তাই তো সরাকারের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে প্রতিষ্ঠান গুলি।
২০১৮তে এমন কি হলো রাজপথে সম্পাদক পরিষদ? বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকরা যখন রাজপথে, সবার মনে তখন একটি প্রশ্ন, দেশে এখন কি চলছে! দেশ কি স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। কেনো এই সমস্যা সৃষ্টি হল! সাংবাদিক নেতারা কোথায়? তারা কেন রাজপথে নেই! প্রশ্নের ঝড় উঠেছে সাধানণ মানুষের মনে।
মোঃ আশরাফ হোসেন ঢালী
সম্পাদক
আমারবাংলা২৪.কম.বিডি এবং জাতীয় সাপ্তাহিক শেষ সংবাদ