অধিকাংশ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি
আমারবাংলা ডেস্কঃ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে নগদ অর্থসংকটে পড়েছে ১৩টি। মুনাফা কমেছে ১৮টি ব্যাংকের। সম্পদ কমেছে ১০টির। একটি ব্যাংক লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত। ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের চিত্র এটি।
অর্থসংকটে পড়া ১৩টি ব্যাংকের মধ্যে নয়টি ২০১৭ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়েও সংকটের মধ্যে ছিল। চলতি বছরে নতুন করে অর্থসংকটে পড়েছে চারটি ব্যাংক। তবে গত বছর অর্থসংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংক সংকট থেকে উঠে এসেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস পরপর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। এরই আলোকে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত ওই আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ব্যাংক খাতের সংকটের চিত্রই উঠে এসেছে। ঠিক মতো যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকগুলো এমন সংকটের মধ্যে পড়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে এবং কমছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। যা সার্বিক অর্থনীতিতে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। পুঁজিবাজারে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের ব্যবসা প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে সাংঘাতিক তারল্য সংকট চলছে। অনেক ব্যাংক এখন নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছে না, নতুন লোন দিচ্ছে না। ব্যাংক খাতের এ অবস্থার কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। বেসরকারি খাতের লোকজন এখন ব্যাংক থেকে টাকা পাচ্ছে না। এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যাংকের যদি ইনকাম কমে যায়, প্রভিশন বেশি করতে হয়, খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তা পুঁজিবাজারে খারাপ প্রভাব ফেলবে। কারণ ব্যাংক পুঁজিবাজারের একটি বিরাট খাত। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানি যদি ভালো পারফরমেন্স করতে না পারে তাহলে কোনো প্রণোদনা কাজে আসবে না। কোম্পানি যদি ভালো করে তাহলেই প্রণোদনা কাজে আসবে।’
চলতি বছরের নয় মাসের ব্যবসায় নগদ অর্থসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও ইউসিবি।
এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংক চলতি বছরে নতুন করে নগদ অর্থসংকটে পড়েছে। বাকি ব্যাংকগুলো গত বছরের নয় মাসের হিসাবেও নগদ অর্থসংকটে ছিল। তবে গত বছর অর্থসংকটে থাকলেও ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুন মাস শেষে ১৩টি ব্যাংকের পরিচালন নগদ প্রবাহ বা অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ার অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হওয়া। যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ঋণাত্মক, ওই প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের সংকট তত বেশি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থসংকটে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩২ টাকা ৯০ পয়সা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১১ টাকা ৭৯ পয়সা। এর পরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১১ টাকা ১৬ পয়সা।
সূএ: জাগো নিউজ