সব

তাইলে গুলি কইরা মাইরা দেন আমারে: তনুর বাবা

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Friday 1st April 2016at 10:21 am
31 Views

18স্টাফ রিপোর্টারঃ কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে।

বিবিসি বাংলার প্রবাহ টিভি অনুষ্ঠানের জন্যে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “মেয়েটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর মারা গেছে, এটা বলতে পারবো না স্যার, তাইলে গুলি কইরা মাইরা ফালান। যদি না বলতে পারি তাইলে গুলি কইরা মাইরা দেন আমারে”।

গত সপ্তাহে সেনানিবাস এলাকায় তনুর মৃতদেহ উদ্ধারের পর দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমে সংবাদ না এলেও অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

তনু হত্যাকাণ্ডে শুরুর দিকে ফেসবুকে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

তিনি বলেন, “কবর দিয়ে আবার সেই লাশ আপনারা তুলে ফেলছেন তাহলে আপনাদের অনেক কাজ না করেই আপনারা তাড়াহুড়া করেছেন। কেন? জনগণের মনে তো এই প্রশ্নগুলি আসবেই”

তিনি বলেন ধীরগতি আর সিদ্ধান্তহীনতা সরকার এবং সেনাবাহিনী দুই তরফ থেকেই হয়েছে।

তনুর ব্যাপারে সেনানিবাস থেকে নাসির উদ্দীন ইউসুফকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে এমন শিরোনামেও খবর প্রকাশ করে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা।

যদিও এটি সত্য নয় বলে জানান মিস্টার ইউসুফ।

তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় ছড়িয়েছে যে আমার উপরে চাপ আছে। আমি কোনো চাপে নেই। আমি খুব পরিষ্কার, আমি কোনো চাপে নেই। সেনসিটিভ জায়গাটা হচ্ছে আমাদের বুঝতে হবে এটা ক্যান্টনমেন্টের এরিয়ার মধ্যে ঘটেছে।”

এদিকে তনু হত্যার পরদিন থেকেই বিক্ষোভ করছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাদের সঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণজাগরণ মঞ্চ, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে যাচ্ছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তনু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।

ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত একজন ছাত্রী বলেন, “এই জন্যই আমাদের এ আন্দোলন যে, একটা প্রটেক্ট এরিয়ার মধ্যে একটা মেয়ে কিভাবে ধর্ষিত হয় তাকে তারপরে খুন করা হয়?”

অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, “লাশ কবর থেকে উদঘাটন করে আবার ওর ময়না তদন্ত হবে। কেন? প্রথম তাইলে যে ময়না তদন্ত হইছে সেটা কি হইছে?

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে অনুসিদ্ধান্তে এসেছেন তনুকে হত্যা করা হয়েছে এবং সে ধর্ষিতও হতে পারে।

তিনি বলেন, “সেনা কর্তৃপক্ষ যে তথ্যগুলো আমাদেরকে দিবে তারপর নির্ভর করেই আমাদেরকে কিন্তু কাজ করতে হবে। কারণ আমার কিন্তু ঐখানে গিয়ে ইন্ডিসক্রিমিনেটলি… আমার ওই একসেসটা নাই যে আমি জিজ্ঞাসা করব । সেনানিবাসের মধ্যে কিন্তু বেশকিছু বিধিবদ্ধ বিষয় প্রতিপালন করেই কিন্তু কাজ করতে হয়। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়”।

কোনোকিছু আড়াল করারও কোনো ইচ্ছা পুলিশের নেই বলে দাবি করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।

ঘটনার নবম দিনে তনুর বাবার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে ইয়ার হোসেন জানান, অনুমতি ছাড়া তাদেরকে সেনানিবাস থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।

পরে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিইও’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে তনুর বাবা কথা বলেন বিবিসির সঙ্গে।

“আমার মেয়েরেতো আমি তুলছি, কিভাবে তুলছি আমি দেখছি। তার কোনো গলায় কাটা ছিল না। মুখটা থেতলানো আছিলো, কানডি দিয়া রক্ত আইছে, মাথার এই জাগাডা (পেছনে) উঁচা আছিলো, উঁচা উঁচা একটু ফুলা এই…”

তনুকে কোথায় পাওয়া পাওয়া গেছে এ নিয়ে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বিবৃতি দিয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর নেই এরকম এলাকার বিবরণ দেয়। তবে ইয়ার হোসেন একটি বিষয় জোর দিয়ে বলে আসছেন যে মেয়েকে তিনি সেনানিবাস এলাকা থেকেই উদ্ধার করেছেন।

“এহনো কই- তহনো কই, আমিতো কারো নাম বলতেছি না। হ্যাঁ মেয়েডা এখানে মারা গেছে, এডাতো বলতে হবে আমার। যে- মেয়েডা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর মারা গেছে, এটা বলতে পারবো না স্যার, তাইলে গুলি কইরা মাইরা ফালান। যদি না বলতে পারি তাইলে গুলি কইরা মাইরা দেন আমারে”।

তনু হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে কুমিল্লা সেনা কর্তৃপক্ষের সাক্ষাৎকার চেয়ে যোগাযোগ করা হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে সাক্ষাৎকার দেয়া আপাতত সম্ভব নয় বলে বিবিসিকে জানানো হয়।-বিবিসি।


সর্বশেষ খবর