শিক্ষার অধঃপতন ও জাফর ইকবালের কান্না
গোলাম মাওলা রনি ঃ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হাল আমলে বাংলাদেশের বেশ আলোচিত এবং একই সাথে সমালোচিতও বটে। ভদ্রলোকের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় নেই। তার লেখা পত্রপত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হয়। অনেকবার চেষ্টা করেও নিজের গোবরমার্কা মেধার কারণে কোনো লেখাই দু-একবারের বেশি পড়তে পারিনি। লেখার মধ্যে সহজাত টান, বিষয়বস্তুর আকর্ষণ এবং শব্দমালার গাঁথুনিতে রূপ-রস-গন্ধ না থাকায় পত্রিকায় তার কলামগুলো আমাকে আকর্ষণ করেনি। তার লেখা বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছিÑ কিন্তু সেখানেও হতাশ হয়েছি। তবে তার কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছোটদের চলচ্চিত্র ‘দিপু নাম্বার টু’ বেশ ভালো লেগেছিল।
জাফর ইকবাল সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি বাদ দিয়ে সমাজ সংসারের অন্যান্য মানুষের আবেগ অনুভূতি সম্পর্কে কিছু বলা যাক। দেশের তরুণ ও যুবকদের একটি বিরাট অংশ তাকে ভীষণ ভালোবাসে। তারা তাকে জ্ঞানের রাজ্যে সক্রেটিস বা কনফুসিয়াসের মতো কল্পনা করে। বিজ্ঞানের রাজ্যে টমাস আলভা এডিসন বা স্টিভ জবসের সাথে এক আসনে বসাতে চায়Ñ আর লেখক হিসেবে রূপকথার জনক হ্যানস ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের পাশে চায় স্থান দিতে। ড. জাফরের বিরুদ্ধবাদীরা অবশ্য ভিন্ন কথা বলেন। তাদের অভিযোগ, তিনি দেশের তরুণসমাজকে আধুনিকতার নামে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এমন সব অদ্ভুত ভৌতিক গল্প লেখেন, যা কিনা শিশু-কিশোরদের নীতিনৈতিকতার মানে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আগেকার দিনে দাদী-নানীদের ভূতের গল্পের মধ্যে কিছুটা হলেও নীতি ও আদর্শ ছিল আর ছিল চমৎকার সব শিক্ষণীয় বিষয়। কিন্তু জাফর ইকবালের তৈরি রোবটিক ভূতগুলো বড়ই অদ্ভুত; তারা ব্যাটারির মধ্যে থাকে এবং সেখান থেকে বের হয়ে শিশু-কিশোরদের নানা রকম উদ্ভট পাগলামো করার জন্য বুদ্ধি পরামর্শ দেয়। ফলে সচেতন অভিভাবকেরা ‘ব্যাটারি ভূতের স্রষ্টা’র প্রতি যারপরনাই ত্যক্ত ও বিরক্ত।
নিজে ভদ্রলোককে নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা করিনি। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়েও ভাবিনি। আমার চিন্তার জগতের মহাপুরুষদের কর্মের উৎকর্ষের সাথে তাদের কর্মের সামান্যতম যোগসূত্র তো পাইনিই এবং ক্ষেত্রবিশেষে এমন কিছু দেখেছি ও শুনেছি, যা আমাকে রীতিমতো হতাশ আর ব্যথিত করেছে। এ দেশের সচেতন নাগরিকদের অনেকেই জানেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মৌলিক নীতিমালা মূলত ড. জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথায় পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের পাঠ্যপুস্তকে কী পড়বে এবং কিভাবে পরীক্ষা দেবে, সেসব সূত্রের সহায়ক হলেন এই দুই মহারথী। তাদের পরামর্শেই সরকার সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতি চালু এবং আইসিটিকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। আজকের পরীক্ষাপদ্ধতি, শিক্ষাব্যবস্থার অধঃপতন এবং আগামী দিনের ভয়াবহতা কল্পনা করলে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে উঠি। এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লেখার জন্য অনেকের কাছ থেকেই অনুরোধ পাচ্ছিলাম, কিন্তু সময় ও সুযোগ হয়ে উঠছিল না। গত ৩০ আগস্টের একটি ঘটনা যখন সারা দেশে ফলাও করে প্রচার হলো, বিষয়টি নিয়ে লিখতে বাধ্য হলাম।
ঘটনার দিন ছিল ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ তাদের ভিসির অপসারণ কিংবা পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভ করছিলেন। শিক্ষকদের এই অংশের নেতা হলেন ড. জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী অধ্যাপিকা ড. ইয়াসমিন। অন্য দিকে ভিসির পক্ষের শিক্ষক ও ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের নেতাকে ভিসি পদে বহাল রাখার জন্য বদ্ধপরিকর।
উভয় পক্ষই কট্টর সরকার সমর্থক এবং সরকারি অর্থবিত্ত ও বলবীর্যে বলীয়ান। ভিসির পদটি বড়ই লোভনীয়। সাধারণত সরকারি দলের বিশ্বস্ততায় আস্থাভাজন ব্যক্তিকে ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পদে নিয়োগ লাভের জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে সর্বোচ্চ কাঠখড় পোড়ানোর পাশাপাশি ঘৃত-তৈলযজ্ঞসহকারে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের হস্ত-পদ স্পর্শ করতে হয় বলে শোনা যায়। ফলে পদ পাওয়ার পর কেউ জীবন থাকতে তা ছাড়তে চান না। গত সাত বছরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের তাড়ানোর জন্য তাদের প্রতিপক্ষ করেনি এমন কোনো তাণ্ডব নেইÑ কিন্তু আখেরে সব ফলাফল শূন্য। ঘৃত-তৈলযজ্ঞের পূজিত মহাপুরুষদের কৃপা এবং নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর লম্বা লম্বা হাতের নির্বিচার হুমকি-ধমকি এবং আদরযতেœর কারণে প্রতিপক্ষরা বারবারই পরাজিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং ভিসিরা সগর্বে বুক চাপড়িয়ে বলেছেনÑ আই-আই-আই, আমার মতো শক্তিশালী কেউ নাই।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার সতীর্থদের অনুকরণে নিজের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থাই করেছিলেন। অন্য দিকে তার প্রতিপক্ষরা ভাবছিলেন ‘নতুন কিছু’ করার। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রাম, ঘেরাও, কর্মস্থলে তালাবদ্ধ করে রাখা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সব থেরাপির প্রয়োগ হয়েছিল; কিন্তু তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়নি। সিলেটে বিক্ষোভরত শিক্ষকেরা এবার নাকি সে কাজটিই করলেন। কলম চালানো হাতকে গদাময়ীতে রূপান্তরিত করে তাদের অভিভাবক ভিসির দিকে তেড়ে গেলেন। প্রথম আলোর রিপোর্ট মতে, ভিসি বিক্ষোভরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ অবস্থায় ভিসিকে রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্ররা এগিয়ে এসে শিক্ষকদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জাফর ইকবাল দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। তারপর একটি বেদিতে বসে অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কান্নারত বদনে বলেনÑ আমার উচিত গলায় দড়ি দিয়ে মরা।
পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশনের খবরে দেখলামÑ মিসেস ইকবাল তার মহিলা সহকর্মীদের নিয়ে প্রচণ্ড বিুব্ধ অবস্থায় উচ্চস্বরে এবং উত্তেজিত গলায় অভিযোগ করে বলছেন, ওরা আমাদের মেরেছে, আমাদের গায়ে হাত তুলেছে। এক নারী শিক্ষিকা বললেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষিকা-শিক্ষক পেটানোর যে রেওয়াজ ভিসি চালু করলেন, তার পরিণতি খুব খারাপ হবে। অন্য দিকে ড. জাফর বললেন, কী সর্বনাশ! ওরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেটাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি নাকি জয় বাংলার এমনতর নিকৃষ্ট ব্যবহার আর দেখেননি। পত্রপত্রিকা দরদভরা হস্তে লিখেছে, জাফর ইকবালের দুঃখের অশ্রু বৃষ্টির অঝোর ধারায় বারবার ধুয়ে যাচ্ছিল।
শুধু শাহজালাল নয়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। ছাত্রছাত্রীদের কথা না বলাই ভালো। অনেকেই বলেন, নষ্টের মূল হলেন দলবাজ অলস শিক্ষককুল। তারা নিয়মিত পড়াশোনা করেন না। অনেকে আবার পত্রপত্রিকাও পড়েন না। ন্যূনতম যতটুকু প্রস্তুতি দরকার তারা ততটুকুই পড়াশোনা করেন। অবসর সময়ে তারা দলবাজি করেন। সরকারি দলের শিক্ষক হলে এক রকম, আবার বিরোধী দলের হলে অন্য রকম। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা প্রায়ই গরহাজির থাকেন। এসব শিক্ষক-শিক্ষিকা নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্ব করেন এবং সুযোগ পেলে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কাছে বাহারি মিথ্যা কথার কুটনামি করে তাদের প্রতিপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন। যেসব শিক্ষক প্রশাসনিক পদে থাকেন, তারা টেন্ডার, নিয়োগ ইত্যাদি কর্মের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কিছু বেআইনি সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের লাঠিয়াল বাহিনীতে রূপান্তরিত করে ফেলেন।
ইদানীংকালের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে নীতিনৈতিকতা, ধর্মবোধ, পারিবারিক বন্ধন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে সুখপাঠ্য তেমন কোনো রচনা নেই বললেই চলে। অন্য দিকে পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নাস্তিকতা, সমকামিতা, পরকীয়া, অবাধ যৌনাচার, নারী-পুরুষের দৈহিক মিলন, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে জনপ্রিয় করার জন্য সব রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোর পরিবেশ, শিক্ষকদের চলন-বলন, আচরণ ও কথাবার্তা শুনলে মনে হবে, দুনিয়ায় আল্লাহ-খোদা-ভগবান-ঈশ্বর এবং স্রষ্টা বলে কেউ নেই। ছাত্রছাত্রীরা বোহেমিয়ান জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তারা অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, আবার অনেকে সদলবলে পারিবারিক আড্ডায় মদ-গাঁজা-ফেনসিডিল পান করে নাস্তিকতা নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা শুরু করে। এসব আড্ডায় সিনিয়র-জুনিয়র কিংবা ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে ভেদাভেদ থাকে নাÑ তারা সবাই তখন ধর্মদ্রোহী মুক্তচিন্তার ধারক-বাহকরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
অনেক ছেলেমেয়ে নিয়মিত গোসল করে না, দাঁত মাজে না এবং হাতের নখ কাটে না। তারা লম্বা চুল, দাড়ি ও মোচে জটা পাকানোর চেষ্টা করে। অদ্ভুত সব পোশাক পরে তারা ঘুরে বেড়ায় এবং বলে, আমরা প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে মিশে যেতে চাই। এমনকি এসব ছেলেমেয়ের কেউ কেউ অধিকতর প্রাকৃতিক হওয়ার জন্য বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় মুক্তবসন হয়ে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে পড়ে। এসব প্রতিযোগিতায় কিছু মুক্তমনা যুবক ইতোমধ্যে সিদ্ধি লাভ করেছে। বাংলাদেশের এহেন মুক্তমনারা ড. জাফর ইকবালকে তাদের মানসপিতা মনে করে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষের হাতে লাঞ্ছিত মানসপিতা যখন বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে গলায় দড়ি দিয়ে মরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বললেন, আমার গলায় দড়ি দেয়া উচিত, তবে এখনই দেবো না, তখন তার ভাবশিষ্যরা ছাত্রলীগ নামক সংগঠনটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।
শিক্ষক নামধারী তথাকথিত কিংবদন্তিরা যে আসলে কতটুকু শিক্ষা দিচ্ছেন, তার কয়েকটি নমুনা দিলেই বুঝতে পারবেন আমাদের তারুণ্য আসলে কোন দিকে যাচ্ছে। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ঢাকা কলেজে আমার শিক্ষক ছিলেন। পুরো দু’টি বছরে তিনি বড়জোর তিন-চারটি কাস নিয়েছিলেন। এর বাইরে তাকে আমরা কোনো দিন ক্যাম্পাসে দেখিনি। মানুষকে হাসানোর প্রকৃতিপ্রদত্ত অসম্ভব ক্ষমতার কারণে তিনি কম বুদ্ধির বেহিসেবি মানুষজনের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয়। বুদ্ধিমান জ্ঞানী ব্যক্তিরা জানেন, লোক হাসানোর জন্য প্রথমত প্রচুর বানোয়াট কথা বলতে হয় এবং দ্বিতীয়ত নিজেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও সার্কাসের সঙ হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। ফলে আমাদের ছাত্রজীবনে ড. আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফার মতো সেকুলার বুদ্ধিজীবীরা যেমন তাকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না, তরুণ ইসলামি ভাবধারার দার্শনিকেরা যথাÑ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক শাহেদ আলী, সানাউল্লাহ নুরী, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ তার নামও শুনতে পারতেন না। এসব গুণীর মৃত্যুর পর অধ্যাপক আবু সায়ীদ, অধ্যাপক জাফর ইকবাল প্রমুখ হঠাৎ জাতির বোধবুদ্ধি এবং চেতনার খনি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
যা বলছিলামÑ চেতনার খনিগণের বিদ্যে-বুদ্ধি ও বক্তৃতা-বিবৃতির কিছু নমুনা পেশ করলেই বর্তমান অধঃপতনের উৎস খুঁজতে কষ্ট করতে হবে না। ইউটিউবে আপলোড করা একটি বক্তব্যে অধ্যাপক সায়ীদ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতার মর্মকথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘বিবাহ হচ্ছে মানুষের জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর একটি উপাদান। কবিগুরু তার শেষের কবিতার মাধ্যমেই প্রথম সাহস করে বলেছেন, বিয়ে নয়! পরকীয়ার মাধ্যমে বহু নারী কিংবা বহু পুরুষের সান্নিধ্যেই মানুষের জন্ম সার্থক হয়ে ওঠে (নাউজুবিল্লাহ)।’ ইউথ লিডারশিপ নামের অন্য একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তোমরা যারা নেতা হতে চাও, তারা কাউকে মানবে না কেবল নিজেকে ছাড়া। অন্যের কথা মেনে কেউ কোনো দিন নেতা হতে পারেননি। একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এবং তার ভাই অভিনেতা আল মনসুর যেসব কথা বললেন, তা শুনে আমার রীতিমতো বমি আসছিল। অধ্যাপক আবু সায়ীদ প্রথমেই বললেন, ‘আমরা হলাম একেবারে রাবণের বংশ। মোট এগারো ভাইবোন। কে যে কখন জন্ম নিলো এবং কার পরে কে এবং কে কার চেয়ে বড়, তা টের পেতাম না। তারপর তিনি তার ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই বল না, ওই ঘটনাটা বলে দে। ছোট ভাই বললেন, দাদার অনেক গার্লফ্রেন্ড ছিল। রীতিমতো বাসায় ভিড় লেগে যেত। দাদার ম্যানেজার হিসেবে আমি তার অবর্তমানে মেয়েদের কাছ থেকে উপহারগুলো রাখতাম। তারপর বেশির ভাগ মূল্যবান সামগ্রী নিজে রেখে দিতাম এবং বাকিগুলো দাদাকে দিতাম।’
টেলিভিশনের সেদিনকার আলোচনায় ছোট ভাইয়ের মুখে অতীত প্রেমিকদের সংখ্যাধিক্য এবং তাদের ভিড়বাট্টার কথা শুনে আমার স্যার আনন্দে ‘চোয়া চোয়া’ করতে করতে বললেনÑ আরে! ওই ঘটনাটা বল! আল মনসুর আমতা আমতা করছিলেন। স্যার তখন সগর্বে বলে উঠলেন, আরে বলো না! মেয়েদের যন্ত্রণায় আমার সংসার যায় যায় অবস্থা। আমার তখন সবে বিয়ে হয়েছে। এমন সময় এক মেয়ে হঠাৎ বাসায় এসে আল মনসুরকে বলল, তোমার বড় ভাই আরেকটা বিয়ে করবে নাকি। মনসুর বলল, না। মেয়েটি তখন বলল, আমি তোমাদের বাসায় বুয়া হিসেবে হলেও থাকতে চাই। বলো দেখি, কী মুসিবত, হাহ্ হাহ্ হাহ্!
প্রফেসর জাফর ইকবাল কিংবা প্রফেসর আবু সায়ীদের কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম দেশের শিক্ষাঙ্গনের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে একটু সাধারণ ধারণা দেয়ার জন্য। সারা বাংলাদেশে শত শত শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের চিরায়ত নীতিনৈতিকতা ভুলে গিয়ে আজ অর্থবিত্ত, ক্ষমতা, পদ-পদবি ও লোভলালসার শিকলে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলেছেন। তারা জ্ঞানের রাজ্য থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে অজ্ঞানতা, অন্ধকার, অশিক্ষা ও কুশিক্ষার অরণ্যে প্রবেশ করতে একজন অন্যজনের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কলম ফেলে দিয়ে তারা কাস্তে, কোদাল, লগি-বৈঠা ও লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাদের দুই চোখে কেবল নৌকা, ধানের শীষ, মুজিব কোট, সাফারি স্যুট এবং কালো সানগ্লাসের রঙিন স্বপ্ন। তারা আজ আর নিজেদের শিক্ষক মনে করেন না। তারা রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত বশংবদ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দিবানিশি তপস্যা করেন। তপোবনে ধ্যান শেষে তারা যখন প্রভুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে জনারণ্যে ফিরে আসেন, তখন সঙ্গত কারণে মানুষ হিসেবে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি করে বসেন। তাদের তরুণ প্রভুদের টগবগে রক্ত এবং তারুণ্যের রক্তিম মেজাজ-মর্জি তাদের ছোটখাটো ভুলগুলোকে ক্ষমা করতে পারে না। ভুল হলেই শুরু করে উত্তম-মধ্যম। এ শিক্ষকেরা এতই অনুগত, ভীরু ও কাপুরুষ যে, তারা বেদম প্রহার খাওয়ার পরও বলতে পারেন না, এটা অন্যায়, এটা জুলুমÑ প্রতিবাদ করব, রুখে দাঁড়াব এবং ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলব অন্যায়-অনিয়ম আর দাসত্বের শৃঙ্খল! সূত্র: নয়াদিগন্ত।
– See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/60501#sthash.KUHBEEnq.dpuf