রাবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের আলোচনায় ‘ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন’
রাবি প্রতিনিধিঃ নারী নিরাপদ কোথায়? রাস্তা-ঘাট, হাট-মাঠ, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, শিক্ষক, ডাক্তার, কর্মচারী, পুলিশ, আত্মীয়-স্বজন, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আপন গৃহস্থল কিংবা কর্মস্থলে সহকর্মী অথবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কোথায় নারীকে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয় না?
ইদানিং নারীর কাছে পুরুষ মানেই ‘ধর্ষক’! এই বুঝি কোনো পুরুষ এসে ‘ধর্ষণ’ করবে। ইভটিজিং কিংবা বিভিন্ন ছুঁতোয় গায়ে হাত দিবে! কন্যা, ভগ্নি, ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ কেউ যেন নিরাপদ নয় নারী। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন কেন হয় এ বিষয়ে কথা বলেছেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহমেদ তুষার।
ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনঃ ধর্ষকরা মূলত ছোটবেলা থেকে তাদের মনের মধ্যে কতগুলো ভূল ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। তারা যৌনতা সম্পর্কে কী শিখছে বা কিভাবে শিখছে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে পর্নোগ্রাফি, চটি বই, ইউটিউবে যেভাবে যৌনতাকে দেখানো হচ্ছে সেখান থেকে তাদের মধ্যে একটা আবেগ এবং ভূল ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠা এবং সেখান থেকে তারা মেয়েদের কে আর মানুষ ভাবে না তারা মেয়েদেরকে যৌনকামী ভাবতে শুরু করে।
একটা পক্ষ মনে করে থাকে যে প্রত্যেক মেয়েই হয়তো একটা বয়সে সেক্স সম্পর্কে আগ্রহী কিন্তু পুরুষদের তারা বলতে পারে না। তাদের (মেয়ে) সাথে একবার সেক্স করা গেলে প্রতিবারই তারা সেক্স করতে আগ্রহী থাকবে। এই ভূল ধারণা থেকে নারীরা ধর্ষন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।মেয়েদের অসতর্কতার কারণে অনেক সময়ে পোশাক এলোমেলো হয়ে যায় সেখান থেকে একপক্ষ ভাবে মেয়েটা হয়ত তাদের (ছেলে) দেখানোর জন্য এমন করছে। এখান থেকে প্রতিদিন অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত কথা- ‘মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ এখান থেকে অনেক ছেলে ভাবে মেয়েরা যদি সেক্স করতেও চাই তারা সেটা হয়ত বলতে পারে না। সেই জায়গা থেকে অনেক ছেলে এই
সুযোগটা গ্রহন করার ভূল পন্থা খোঁজে।
বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির কারণে অনেকের মনস্তাতি¦ক জায়গা ঠিক থাকে না তারা পর্নোগ্রাফির মত বাস্তবে সমাজে সেক্স জিনিসকে নিয়ে আসে এবং তারা ভাবে সেক্স সবার সাথে যেকোনো সময় করা যাবে। আমাদের সমাজে সেক্স ব্যাপারটাকে লুকোছাপা করে রাখা হয়, ফলে যেটা হয় উঠতি বয়সী ছেলেরা কৌতূহল হয়ে বিভন্ন মাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে সেক্স সম্পর্কে লার্ন করে এবং তাদের কাছে সেক্সকে নেশার বস্তু হিসাবে গৃহীত হয়। যেটা একসময় বৃহৎ আকার ধারণ করে বাস্তবে নারীদের উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের রুপ নেয়।
সঙ্গদোষে প্রতিদিন অহরহ যৌন নির্যাতন ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক কাজ করছে অনেক যুবক। তারা ভূল সঙ্গদোষে ছেলেদের সাথে মিশে তাদের মুখ
থেকে সেক্স করার কথা শুনে উৎসাহিত হচ্ছে। অনেক সময় বন্ধুদের আবদারে যৌনতাকে চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে কোন মেয়ের উপর প্রয়োগ করছে।
যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ অনেকে নিজেকে ক্ষমতাবান ভাবার ভূল ধারণা থেকে হয়ে আসছে। এরা পরিবহন ব্যবস্থায় যাতায়াতে কিংবা রাস্তায় চলতে ফিরতে মেয়েদের কে উত্ত্যক্ত করতে পছন্দ করে এবং তারা ভাবে একটা ক্ষমতার চর্চা, যে আমি মেয়েদের গায়ে হাত দিলাম কিংবা অশালীন একটা আচরণ করলাম। আবার মজা করার চেষ্টায় অনেকে এটা করে থাকে কিন্তু এই মজাটাই একটি মেয়ের কাছে চরম অপমান ও লজ্জাকর।
যৌনতা, ধর্ষণ এর পিছনে পোশাককে অনেকে দায়ী করে থাকে কিন্তু সেটা ভূল ধারণা। মেয়েদের পোশাক দেখে অনেকেই ভাবে হয়ত সে সেক্স
করতে আগ্রহী এবং জোর করলে বোধ হয় তার সাথে সেক্স করতে আগ্রহী হবে। এখানে মেয়েরা উশকিয়ে দেয় তা নই । পোশাকের মাধ্যমে একটা মেয়ে নিজেকে যেমন অনুভব করছে ঠিক তার উল্টোটা ভেবে একটা পুরুষ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের দিকে লিপ্ত হচ্ছে। অনলাইনে বিশেষ করে ফেইসবুকে একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে সাময়িক ভাল লাগা থেকে অনেকসময় ভূল বার্তা পাঠিয়ে থাকে, কিন্তু অপরদিকে ছেলেটা ভাবে অন্যকিছু সে ভাবে মেয়েটা তাকে চায়।
শিশুদের প্রতি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে মূলত দূর্বল চিত্তের মানুষ গুলো। সাধারনত এরা শিশুদের বেঁচে নেওয়ার কারন হচ্ছে তাদের ভাবনা থাকে শিশুরা তো কিছু বলতে পারবে না এবং তারা যৌনতাকে অন্য জায়গায় প্রয়োগ করতে পারবে না জেনে শিশুদের বেছে নিয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমানে মাদকের আশ্রয় নিয়ে অনেকে নারীদের উপর যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ এর অপচেষ্টা করে থাকে। ফলে, নারীদের কাছে আজকাল ‘বাঘ’ যতটা না ‘ভয়ঙ্কর’, তার চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর পুুরুষ!