যে স্ট্যাটাসের পর খুন হলেন গণজাগরণ কর্মী নাজিম
আমার বাংলা ডেস্কঃ গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ও ধর্মবিদ্বেষী নাজিমুদ্দিন সামাদ [নাজিম] খুন হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কড়া সমালোচনা করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার [৫ এপ্রিল] রাত ৯টা ১০ মিনিটে নাজিম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন: “সরকার, এবার একটু নড়েচড়ে বসো বাবা। দেশের যা অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার যা অবনতি তাতে গদিতে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। জনরোষ বলে একটা কথা আছে। এটার চূড়ান্ত পরিনতি দেখতে না চাইলে এক্ষুনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সকল অন্যায়-অবেচারের বিরুদ্ধে। নতুবা দিন ফুরিয়ে আসবে খুব দ্রুত।”
গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিহত নাজিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবষেণা সম্পাদক ছিলেন।
নাজিমের এই স্ট্যাটাসের জবাবে আজহারুল ইসলাম নামে এক স্যার লিখেছিলেন, “তোমার জন্য ভয় হয় নাজিম। একটু সাবধানে থাকো। দেখতেই তো পাচ্ছ কি হচ্ছে। সাবধানে থেকো।”
জবাবে নাজিমুদ্দিন লিখেছিলেন “ভয় আমার নিজেরও হয় স্যার। অকালে মরে যাওয়ার ভয়। কিন্তু কি করবো স্যার। মাথা নত করে চুপ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এ মরণই বোধ হয় ভালো।”
ফেসবুকে আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চেয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই খুন হন নাজিমুদ্দিন।
বুধবার [৬ এপ্রিল] রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুরের একরামপুর মোড় এলাকায় র্দুবৃত্তদের চাপাতির কোপে ও গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নাজিমুদ্দিন।
সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ধর্মেীয় অসঙ্গতির বিষয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন নাজিম। টাইমনিউজবিডির পাঠকদের জন্য নাজিমের দেয়া কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো:
২ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১টা ৯ মিনিটের স্ট্যাটাস:
আওয়ামী ওলামা লীগ আর বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দুই বিপরীত মেরুর দুই বাসিন্ধা।ওলামা লীগ কখনোই বাহাত্তরের র্ধমনিরপেক্ষ সংবিধান চায়নি এবং চাইবে না।
২ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২টা ৪৮ মিনিটের স্ট্যাটাস:
ভারত হেরে যাওয়ায় আমি ক্রিকেটিও আনন্দ পেয়েছি। সেখানে অবশ্য ক্রিকেটিও পলিটিক্সের, প্রতিযোগিতার কারণ রয়েছে। কারণ রয়েছে বিভিন্ন সময়ে আমাদের ক্রিকেট নিয়ে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছেল্যের, হেয় করার এবং তাদের মোড়লিপনার।
কিন্তু সেটা কখনোই কোন জাতিগত বিদ্বেষ থেকে নয়। একশো বিশ কোটি মানুষের এক বিশাল জনপদকে আপনি যা ইচ্ছা তা বলতে পারেন না। আর দু’একজন ক্রিকেটার বা নষ্ট মানুষের কারনে তাদরে সবাইকে কালেক্টিভলি দোষি করতে পারেন না।
একজন ভারতীয় তার দেশকে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবেক। তার এ ভালোবাসাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। শ্রদ্ধা জানাই ততোক্ষন যতক্ষন তার দেশপ্রেম আমার দেশেক খাটো করে প্রর্দশিত না করে, যতক্ষন আমার দেশেক অসম্মানিত না করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে।
১ এপ্রিল ২০১৬ রাত ৮টার স্ট্যাটাস:
রেন্ডিয়া বলাটা কতটুকু মানায় আমাদের? যেখানে আমার দেশে পথে প্রান্তরে মেয়েরা ধর্ষিত হয় এবং সেটা মহামারির মতোই।
ইন্ডিয়া যদি রেন্ডিয়া(রেপিস্ট+ইন্ডিয়া) হয় তবে কি বাংলাদেশ রেংলাদেশ(রেপিস্ট+বাংলাদেশ) নয়???
৩০ মার্চ সকাল ১১টা ৫ মিনিটের স্ট্যাটাস:
মৌলবাদিরা প্রথমে ধর্মবিদ্বেষীদের খুঁজে বের করলো,
তারপর তাদের হত্যা করলো,
আমি প্রতিবাদ না করে হাততালি
দিলাম,
এবং বাসায় বসে হস্তমৈথুন করলাম।
তারপর অবিশ্বাসী ও সংশয়বাদীদের
হত্যা করলো,
তাদের দোষ “তারা কেন কোনো ধর্মের
ছায়াতলে নয়?”
আমি চোখ বন্ধ করলাম,
এগুলো যেন চোখে পড়ারই নয়।
এবার তারা বিধর্মীদের হত্যা করলো,
আমি নিশ্চুপ থাকলাম,
হাততালি দিলাম এবং গণিমতের মাল
ভোগ করলাম।
কারণ আমি মুসলিম এবং তা জায়েজ
আছে।
তারপর ওরা মডারেটদের কোপালো,
কারন তারা নাকি কোরান-হাদিসের
ভুল ব্যাখ্যা দেয়।
আমি আস্তে করে তাদের দলে ভিড়ে
গেলাম
এবং বললাম ঠিক হয়েছে।
তারপর শিয়া মারলো সুন্নিকে,
আর সুন্নি শিয়াকে,
আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে হস্তমৈথুন
করলাম।
অবশেষে তারা আসলো,
এবং আমার হাতটা কেটে নিয়ে
গেলো,
না, না, হস্তমৈথুনের অপরাধে নয়,
সেই যে আমি হাততালি
দিয়েছিলাম,,,
ওটা নাকি জায়েজ নয়!
স্মরণে : ওয়াশিকুর বাবু
৩০ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের স্ট্যাটাস:
শুধু একবার, পাঁচ বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে দেশে শরিয়াহ আইন চালু করা হোক। দেশ চলুক খাঁটি মোহাম্মদীয় তরিকায়।
গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এই পাঁচ বছর পর কোন মুসলিম ইহজীবনে আর ইসলামের নাম মুখে নেবে না। এবং এই পাঁচ বছরে এই নিম্ন-সভ্য দেশের যে ক্ষতি হবে সেটা পূনরুদ্ধার করতে আরো চৌদ্দশো বছরের আধুনিক শাসনের প্রয়োজন হবে।
২৯ মার্চ ২০১৬ বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটের স্ট্যাটাস:
নিন,নিজের মেয়ের প্রতি লালসায়িত হয়ে ধর্ম পালন করুন।কোন পাপ নাই।
আমার কথা নয়,আপনাদের ইসলামীক স্কলারের কথা।
তা কি যেনো বলেন আপনারা? ইসলাম একটি সভ্য ধর্ম???
একেই কি বলে সভ্যতা???
২৯ মার্চ ২০১৬ বেলা ১২টা ২১ মিনিটের স্ট্যাটাস:
বেহেশ্তে গেলমান বৈধ হলে পৃথিবীতে নয় কেন?ইসলামীক বাংলাদেশে সেটা আরো বেশি বৈধতা পাওয়ার দাবি রাখে।বালক বলাৎকার করে হেফাজতে ইসলামের হুজুর তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র।খাঁটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ।তাকে জেল-হাজতে পাঠানোর ও ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাঁধা দানের ‘ তেব্র নেন্দা’ জানাই।
২৯ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০ টা ৫৮ মিনিটের স্ট্যাটাস:
জাতি জানতে চায়,খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল কবে পদত্যাগ করছেন? আদালতের শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে উনারা পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, উনারা কতটুকু নৈতিক মানুষ। একমাত্র পদত্যাগ ই নৈতিকতাকে বাঁচাতে পারে।
সূত্রঃ টাইম নিউজ বিডি