সব

ব্যাংকঋণ পাবে না বন্ডখেলাপিরা

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 23rd July 2019at 4:04 pm
40 Views

আমারবাংলা ডেস্কঃ ঋণখেলাপিরা ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা পেলেও ছাড় পাবে না বন্ডখেলাপিরা। এখন থেকে কোনো বন্ড ও ডিবেঞ্চার খেলাপি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। বন্ডের টাকা পরিশোধের পরই শুধু ব্যাংকঋণের জন্য আবেদন করতে পারবে তারা। শুধু তা-ই নয়, এসব খেলাপিকে চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটা বেইসে প্রবেশের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও মূলধন বাজার উন্নয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য গকুল চাঁদ দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্ড মার্কেট উন্নয়নেই মূলত এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি এতে ভবিষ্যতে বন্ড মার্কেটের আরো উন্নতি হবে। বন্ডখেলাপিদের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করার কারণে বন্ড মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

সূত্র মতে, দেশের বন্ড মার্কেট এবং শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার এপ্রিল মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হচ্ছে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প-মালিকদের সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স। কমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে সর্বমোট ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সুপারিশগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বিএসইসি এবং আইডিআরএকে চিঠি দিয়েছে।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বন্ড ও ডিবেঞ্চার খেলাপিরা কোনো বাধা ছাড়াই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। তারা যাতে নতুন করে ব্যাংকঋণ নিতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটা বেইসে বন্ড পরিশোধে খেলাপিদের ঋণখেলাপির মতো খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত/শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ কাজে সহায়তা করবে বিএসইসি। এ জন্য বিএসইসিকে সিআইবি ডাটা বেইসে প্রবেশের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসইসি যেন সিআইবি ডাটা বেইসে দ্রুত প্রবেশ করে বন্ড ইস্যুকারীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ক্রেডিট রেকর্ড এবং ক্রেডিট পরিশোধের ইতিহাস যাচাই করতে পারে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিএসইসি এ সুবিধা পেলে খুব সহজেই বন্ডখেলাপিদের চিহ্নিত করা যাবে এবং এসব খেলাপি যাতে নতুন করে কোনো সুবিধা নিতে না পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

পাশাপাশি কমিটি বলেছে, বন্ড অনুমোদন সহজ করার জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আর অনাপত্তি পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কারণ এতে দ্বৈত যাচাই করা হয়। আর এতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

ব্যাংকের পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে কমিটি। বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছে কমিটি। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে নতুন সিরিজ ইস্যুকরণের শর্ত হিসেবে আগের ইস্যু করার পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যুক্তিসংগত পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের ফিক্সড ডিপোজিটের হার দিয়ে সাত বছরের দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের হার নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি বন্ডের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারে বন্ডের চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে তা যুক্তিযুক্তভাবে নির্ধারণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে কমিটি।

বন্ডে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে করহারে বিশেষ সুযোগ দিতে এনবিআরকে তিনটি সুপারিশ করেছে কমিটি। বলা হয়েছে, স্ট্যাম্প শুল্ক বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। তাই অন্যান্য দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কে (থোক আকারে এক লাখ টাকা) নির্ধারণ করা যুক্তিসংগত হবে। এই শুল্ক শুধু কাগজভিত্তিক বন্ড ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা উচিত।

অগ্রিম আয়কর তুলে দেওয়ার ব্যাপারে কমিটি বলেছে, বন্ড থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায়ের পরই চার্জ প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর বা উইথহোল্ডিং কর আদায়ের নিয়ম পরিবর্তন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আদায় করা যেতে পারে। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

বিষয়গুলো ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বন্ডখেলাপি খুব বড় সমস্যা না। কারণ এখনো করপোরেট বন্ড খুব বেশি নেই। তবে যেকোনো ঋণখেলাপির শাস্তি হওয়া দরকার। সে হিসেবে সরকার বন্ডখেলাপিদের শাস্তির উদ্যোগ নিলে তা অবশ্যই ভালো।

একই ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক ডিজি তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বন্ডখেলাপি অবশ্যই খেলাপি। তবে বন্ড তো দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। তাই এটি খুব বেশি সমস্যা হবে না। আর বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারি বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে। এর পরেই করপোরেট বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে। সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট তৈরি করতে হবে। বন্ডের ক্ষেত্রে টার্ম লোন নিলে বেশি সুদ দেওয়া উচিত। এতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


সর্বশেষ খবর