সব

সোহাগপুরে গণহত্যা দিবস পালিত

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Friday 26th July 2019at 6:09 am
38 Views

ফারুক হোসেন (শেরপুর)প্রতিনিধিঃ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের বিধবারা গণ হত্যার বিচার, বর্বর নির্যাতনের শিকার বিধবাদের নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সরকারিভাবে বাড়ি-ঘর পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন। সেই দিনের পৈশাচিক হত্যাকান্ডের কথা কালের সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছেন ২৪ জন বিধবা নারী। সেই নৃশংসতার কথা মনে করে এখনো কান্নায় বুক ভাসান শহীদের স্বজনরা।
উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৯৭১ সালের এই দিনে (২৫ জুলাই) গ্রামটিতে নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞ ঘটে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা সেদিনের সেই পৈশাচিক হত্যাকান্ডে প্রাণ দিয়েছিলেন সোহাগপুর গ্রামের ১৮৭ জন নিরীহ মানুষ। তখন বিধবা হন ৬২ জন নারী। নির্যাতনের শিকার হন ১৪ জন নারী। সোহাগপুর-বেনুপাড়ার সব পুরুষ মানুষকে মেরে ফেলা হয় বলে স্বাধীনতার পর সে পাড়ার নাম বদলে নতুন নাম রাখা হয় বিধবাপল্লী। স্বজন হারানোর দুঃখবেদনার ক্ষত আর সেদিনের বিভীষিকা নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আজো বেঁচে আছেন ২৪ জন বিধবা নারী। তবে এদের মাঝে কয়েক জন রোগে শোকে ভুগছেন।
১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়েতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় অভিযোগ ছিলো সোহাগপুরে হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। সরকারিভাবে সোহাগপুর গ্রামের ২৯ জন বিধবা নারীকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রানালয়ের মাধ্যমে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নির্যাতনের শিকার হওয়া ১৪ জন নারীর মধ্যে ১২জন নারীকে ‘নারী মুক্তিযোদ্ধার’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতি মুক্তিযোদ্ধারের মত প্রতি মাসে ভাতা পান। প্রতিমাসে বিধবা নারীরা ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক থেকে ৫শ টাকা ও সরকারিভাবে বিধবা ভাতা হিসেবে ৫শ করে টাকা পান। বিধবা নারী ও স্বাজনরা সরকারের প্রতি সন্তষ্টু দাবী করলেও সেই দিনের পৈশাচিক হত্যাকান্ডের কথা আজও তারা ভুলতে পারেননি।
এদিকে, গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের ৩০৯ পদাতিক বিগ্রেডের অধিীনস্থ ৫৮ ই বেঙ্গলের উপ- অধিনায়ক মেজর মো. সোহেল রানা পিএসসি’র নেতৃত্বে জিওসি’র নির্দেশনায় সোহাগপুর বিধবাপল্লীর উপর প্রমাণ্য চিত্র রচনা ও তাদের ব্যক্তি জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরনার উৎস হিসেবে তুলে ধরার জন্য ওই স্থানটি পরিদর্শন করেছেন।
নারী মুক্তিযোদ্ধা হাফিজা বেওয়া বলেন, সরকার আমগরে থাহুনের লাইগা বাড়ি-ঘর বানাইয়া দিছে। নির্যাতনের শিকার অওনে নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিছে। আমগর স্বামী সন্তানগরে মারুনের বিচার করছে। অহন শাস্তি লইয়া মরবার পামু। বলে স্বজন হারানোর কষ্টে কেঁদে উঠেন।
নারী মুক্তিযোদ্ধা শমলা বেওয়া বলেন, বিচার পাইছি, বাড়ি-ঘর পাইছি, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইছি। অহন আমরা ভালাই আছি। আর কত দিন বাঁচমু। অহন মইরা গেলেও আর কোন দুশ্চিন্তা থাকতো না। স্বামী স্বজনদের কথা মনে অইলে কষ্ট লাগে। কিন্ত সরকার বিচার কইরা হেই কষ্ট দুরকইরা দিছে বলে দু’চোখ মুছতে থাকেন।
সোহাগপুর বেনুপাড়া গ্রামের মো.শাহাব উদ্দিন (৭৫) বলেন, ‘গরম বালুর মধ্যে যেমনে মানুষ মুড়ি ভাজে। ঠিক সেই ভাবে পাকাবাহিনীরা গ্রামে ঢুইকা গুলি ফুটাইছে। ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করছে। সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে হলে এখন গা শিহরিত হয়ে উঠে।


সর্বশেষ খবর