নড়াইলে তিন বছর আগে শুরু, শেষ হয়নি এলজিএইডির নবগঙ্গা নদীর সেতু ও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: তিন বছর আগে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর ওপর ১৭৫ মিটার সেতুর নির্মাণকাজ। একই প্রকল্পের অধীন সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও সে কাজে এখনো হাতই দেয়া হয়নি। এতে নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসির কারণে প্রকল্পের কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এ কারণে এক দফা প্রকল্পের মেয়াদও বাড়াতে হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঙ্গা নদী নড়াইলের কাশিপুর ইউনিয়নকে দুভাগে বিভক্ত করেছে। এ কারণে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নড়াইল শহর ও উপজেলা সদরে যেতে দ্বিগুণ পথ পাড়ি দিতে হয়। নদীর দুপাশে মানিকগঞ্জ ও এ্যাড়েন্দা হাট নামে দুটি বড় বাজার আছে। এসব বাজারে যাওয়ার জন্য উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ভোগান্তি লাঘবে নড়াইলের কাশিপুর ইউনিয়নের গ-ব ঘাটে নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেতুটি চালু হলে জেলা শহরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার ও উপজেলা সদরের দূরত্ব সাত কিলোমিটারে নেমে আসবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবে। এলজিএইডি অফিসের তথ্যমতে, গ-ব ঘাটে ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের এপ্রিলে। উভয় পাশে ১৩০ মিটার করে সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
এ কাজের ঠিকাদারির দায়িত্বে আছে পিপিএল-এনএকে নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারের নাম নায়েব আলী খান। তার বাড়ি গোপলগঞ্জের কাশিয়ানীতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম অবস্থায় কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর। তবে কাজের ধীরগতির কারণে পরে এক দফা বাড়িয়ে এর মেয়াদ ধরা হয় আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এলজিইডির জুনের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, সেতুটির কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এদিকে এখন পর্যন্ত সংযোগ সড়কের কাজই শুরু হয়নি। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটি নির্মাণে নিয়োজিত আছেন আট-নয়জন শ্রমিক। ঢালাই দিতে একটি স্লাবের রড বাঁধছেন তারা। উভয় পাশের সংযোগ সড়কের কাজ এখনো শুরু হয়নি। সেতুর রেলিংয়ের অধিকাংশ কাজও বাকি। স্থানীয়রা জানায়, নদীর ওপর এত বড় সেতু হচ্ছে, অথচ শুরু থেকেই কাজ যেন নিষ্প্রাণ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চলছে। মাঝে মাঝে কয়েক মাস কাজ বন্ধই ছিল। রাস্তায় এখনো হাতই দেয়নি।
নড়াইলের কাশিপুর ইউনিয়নের গ-ব গ্রামের বাসিন্দা নড়াইলের লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক কবীর হোসেন জানান, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয় নদী পার হয়ে। সেতুটি চালু হলে নড়াইলের কাশিপুর, জয়পুর, শালনগর, নোয়াগ্রাম ও লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ব্যবসায়ী, কৃষিজীবীসহ সব মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু সেতু নির্মাণে ধীরগতির কারণে অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নূর ইসলাম শরীফ বলেন, বর্ষায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে দেরি হচ্ছে। কবে শেষ করা যাবে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। নড়াইল এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার বলেন, স্থানীয় মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। অল্পদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দিচ্ছি।
উপসহকারী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সেতুটিতে ১৫টি গার্ডারের ওপর পাঁচটি স্লাব ঢালাই হবে। শেষ স্লাবের ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। ঠিকাদার কাজ ঠিকভাবে না করায় দেরি হচ্ছে। চেষ্টা চলছে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শেষ করতে।