সব

দাম বাড়ায় দেশে ধূমপান কমেছে

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Wednesday 31st July 2019at 3:55 pm
53 Views

আমারবাংলা ডেস্কঃ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের মুনাফা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ছয় মাসের হিসাবে মোট আয় বাড়লেও কমেছে মুনাফা, যা কম্পানিটির শেয়ারের দামেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আয় কমে যাওয়ার হিসাব প্রকাশের পর শেয়ার ছেড়ে দিতে চাপ থাকায় এক দিনে কম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ৬৮.৮ টাকা। কম্পানি জানায়, বিক্রি কমে যাওয়ায় আগের বছরের চেয়ে এবার কম্পানির মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।

কম্পানিটির আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ছয় মাসে মুনাফা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের চেয়ে এ বছর মুনাফা কমেছে ২৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর বাজেট ঘোষণার আগের মাস বা জুন পর্যন্ত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে ১৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বাজেট ঘোষণার আগে ছড়িয়ে পড়ায় সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করেছে গ্রাহকরা। যিনি দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খেতেন, তিনি সেটা কমিয়ে দুই দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খাচ্ছেন। আবার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বাজারে সিগারেট আসায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিতও হচ্ছে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্রিয় হওয়ার বিষয়েও বলছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, ১০০ টাকার সিগারেট বিক্রিতে সরকার রাজস্ব পায় ৮৪ টাকার মতো। অবৈধ পথে সিগারেট বাজারে এলে সরকার ব্যাপকভাবে রাজস্ব হারাবে।

বহুজাতিক কম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর হিসাবে দেখা যায়, ছয় মাসে কম্পানিটির মোট আয় (গ্রাস রেভিনিউ) ১৩ হাজার ৪২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট-পরবর্তী আয় দুই হাজার ৫৪২ কোটি তিন লাখ টাকা। বিক্রয় খরচ বাদ দিয়ে মোট মুনাফা হয় এক হাজার ১৫৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের বছরের চেয়ে কম্পানিটির মোট আয় বাড়লেও মুনাফা ব্যাপকহারেই হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে কম্পানিটির মোট আয় ছিল ১১ হাজার ৯৭৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, আর মোট মুনাফা হয় এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর কর পরিশোধের পর মুনাফা হয় ৫৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে করপূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৭৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর কর পরিশোধের পর কম্পানিটির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৮০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ৫৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রথম ছয় মাসে মুনাফা কমেছে ২৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। কম্পানিটির আর্থিক হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রথম তিন মাসে মুনাফা হয় ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকা কম। কারণ ২০১৮ সালে মুনাফা হয়েছিল ২৭৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিক বা এপ্রিল থেকে জুন সময়ে কম্পানিটির মুনাফা হয় ১৭৫ কোটি ছয় লাখ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ১৩০ কোটি টাকা কম। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা হয়েছিল ৩০৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

জানা যায়, মুনাফা কমার প্রভাব পড়েছে কম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয়ে (ইপিএস)। আগের বছর প্রথম ছয় মাসে ইপিএস ছিল ৩২.৩৬ টাকা। তবে এ বছর ইপিএস হয়েছে ২১.১৭ টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে ইপিএস কমেছে ১১.১৯ টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ডিএসই তথ্যানুযায়ী, গতকাল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারের দাম ৬৮.৮ টাকা বা ৫.২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৩১৯ টাকায় শেয়ার কেনাবেচা শুরু হলে দাম কমে সর্বশেষ ১২৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানির সচিব আজিজুর রহমান, এফসিএস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজেটে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি ও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সিগারেটের কারণে মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ১৫ শতাংশের মতো সিগারেট রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারে রয়েছে। ১০০ টাকা সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার ৮৪ টাকা রাজস্ব পায়। কিন্তু যারা ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে তারা কম মূল্যে দিতে পারছে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেকে অভ্যাস পরিবর্তন করেছে। সিগারেট খাওয়া হ্রাস পেয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারে অবৈধ সিগারেট থাকলে সরকারের বড় ক্ষতি হবে। কারণ এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব ব্যাপকহারে কমে যাবে। কাজেই রাজস্ব বোর্ডের নজরদারি বাড়ানো উচিত।’


সর্বশেষ খবর