সব

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Thursday 5th September 2019at 3:56 pm
49 Views

 

আমারবাংলা ডেস্কঃ স্থানীয়ভাবে অপরিপক্ব কারিগর দিয়ে তৈরি ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১০ লাখ গাড়ি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে এবং কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র চলাচল করছে। অনেক আগেই সরকার ব্যাটারিচালিত এই গাড়িগুলোর আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তা সত্ত্বেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের প্রত্যাশায় খুচরা যন্ত্রাংশের নামে অবৈধভাবে এই গাড়িগুলো আমদানি করছে। ফলে এই খাতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত এই গাড়িগুলোর রিচার্জকালে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অবৈধ ও অনিরাপদ লাইনের মাধ্যমে ব্যাটারি রিচার্জকালে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং নিত্যনৈমিত্তিকভাবে বিদ্যুিবভ্রাট ঘটছে; যার ফলে সরকারের বিদ্যুেক্ষত্রের সাফল্য অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক জীবন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত এই গাড়িগুলো কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সুপারিশকৃত বা প্রত্যাশিতভাবে প্রস্তুত নয়। উপরন্তু বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন—প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিআরটিএ কর্তৃক পরীক্ষিত ও অনুমোদিত নয়।

এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সরকার ইলেকট্রিক গাড়ির যে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে তাতে অবশ্যই দেশে লিথিয়াম ব্যাটারিচালিত পরিবেশবান্ধব থ্রিহুইলার উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে। সারা পৃথিবীতে আগে ব্যাটারি রিসাইকেল নীতিমালা হয়েছে তারপর ব্যাটারিচালিত গাড়ি উৎপাদন নীতিমালা হয়েছে। কিন্তু এ দেশে ভিন্ন চিত্র। কারণ দেশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক সনাতনি লিড এসিডের ব্যাটারি রিসাইকেল সেন্টার নেই। ‘ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক ভেহিকল’ নামে এই নিষিদ্ধ যানকে আবার বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে পরিবেশবান্ধব সিএনজি চালু আছে, যার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা চালু হওয়া উচিত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পরিচালক (প্রকৌশল) লোকমান হোসেন মোল্লা প্রতিবেদকে বলেন, ‘নীতিমালার আলোকে এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনের অনুমতি দিই। তার বাইরে অতিরিক্ত অটোরিকশ নামানো যায় না।’

জানা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলোর ড্রাইভারদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অনিরাপদ এই গাড়িগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয়। অন্যদিকে ব্যবহার শেষে ব্যাটারিগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়, যা পরিবেশ ও মানবজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। এ সম্পর্কে বিগত সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত এই গাড়িগুলোর চলাচল ও দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই কমছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান লিড এসিড ব্যাটারিচালিত বিপজ্জনক এই গাড়িগুলো অবিলম্বে রাস্তায় চলাচল নিষিদ্ধ করে পরিবেশবান্ধব লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহৃত বিদ্যুত্চালিত (ইলেকট্রিক) থ্রিহুইলার অটোরিকশার সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের নিরাপত্তাবিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিআরটিএ কর্তৃক টাইপ অনুমোদনসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্নপূর্বক চলাচলের অনুমতি প্রদান করে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

এদিকে স্বল্প দূরত্বে সব ধরনের ভ্রমণের জন্য সিএনজি-ডিজেলচালিত থ্রিহুইলার অটোরিকশা শহর কিংবা গ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়। বৈধভাবে আমদানীকৃত এই গাড়িগুলো সরকারের রাজস্ব খাতে প্রতিবছর গাড়িপ্রতি আনুমানিক এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা হারে আমদানি ও অন্যান্য শুল্ক পরিশোধ করে আসছে। সেই সঙ্গে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনকালে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে রেজিস্ট্রেশন ১২ হাজার ১০১ টাকা ও রুট পারমিট বাবদ এক হাজার ১০৪ টাকা হারে জমা করে আসছে। অর্থাৎ প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে সর্বসাকুল্যে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৭০৫ টাকা হারে সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে।


সর্বশেষ খবর