সব

রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছাড়লেন ভিসি, শিক্ষার্থীদের উল্লাস

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Monday 30th September 2019at 10:00 am
29 Views

আমারবাংলা ডেস্কঃ রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। গতকাল রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলো থেকে বের হয়ে যান তিনি। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে তিনি কোথায় গেছেন তা জানা যায়নি।

এদিকে, উপাচার্যকে প্রত্যাহার করতে ইউজিসির সুপারিশ করার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উল্লাস করেছেন। ইউজিসির সুপারিশকে তারা প্রাথমিক বিজয় বলে মন্তব্য করেন।

গত ১১ দিন ধরে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক তথ্য তদন্ত করে জানাতে অনুরোধ করে। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর ইউজিসি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এরপর ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ইউজিসির তদন্ত শেষে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে ভিসি পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে কমিটি। বিষয়টি জানার পরই ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।

গতকাল রবিবার ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। ইউজিসি গতকালই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসি চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একটা বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন করেছি। কমিটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।’

পাঁচ সদস্যের কমিটির নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম, সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন, পরিচালক কামাল হোসেন এবং কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন উপপরিচালক মৌলি আজাদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ইউজিসির তদন্তদলের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবস্থান করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ১৯ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে রয়েছেন উপাচার্য, প্রক্টর, একাধিক শিক্ষক, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে সম্পূর্ণ দোষ উপাচার্যের। কারণ তিনি একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা তিনি বলতে পারেন না। এ ছাড়া উপাচার্য নিজে দোষ করে উল্টো ওই শিক্ষার্থীকেই বহিষ্কার করেন, যা আরেকটি অন্যায়। আন্দোলন থামাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে এখানেও উপাচার্যের দায়ভার আছে। বহিরাগতরা হামলা করলে উপাচার্যের অবশ্যই মামলা করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতে বোঝা যায়, হামলায়ও উপাচার্যের ইন্ধন বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

কমিটি সূত্রে আরো জানা যায়, ১১ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণসহ তিনটি সুপারিশ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভিসি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। সে ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে ভিসি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অদূরদর্শী আচরণ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিকস্খলনের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, দুই দিন ধরে তদন্ত শেষে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র যা দেখলাম তাতে ওটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায় না। একটা বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে স্বপদে বহাল রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধান সম্ভব নয়। তাঁকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে বলা হয়, অনিয়ম-দুর্নীতি ও নৈতিকস্খলনের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে এমএলএসএস পদে নিয়োগ, বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি বা সমমানের পাস বলা হলেও অষ্টম শ্রেণি পাস প্রার্থীদেরও নিয়োগ, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ বা ২.৫০ জিপিএপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সময় ব্যয় না হওয়া প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ, নিজের আত্মীয়কে নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিউটি পার্লার খোলা, নারী কর্মচারীকে যৌন হয়রানি, কেনাকাটায় অনিয়ম, ভর্তি পরীক্ষায় পাস না করা শিক্ষার্থীদেরও ভিসি কোটায় ভর্তিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।


সর্বশেষ খবর