‘প্রশাসন-ইসি সরকারের হয়ে কাজ করবে’
স্টাফ রিপোর্টার ঃ পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবক হয়ে কাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এর ফলে নির্বাচন অবাধ না হয়ে গত ‘সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনের মতো’ পৌর ভোটেও ‘কারচুপি’ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘নির্যাতিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত! উত্তরণে মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
দেশের ২৩৬ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে নির্বাচনের গত ২৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এর মধ্যে একটি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে কমিশন। ৩ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। আর ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।
এই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এক্ষেত্রে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রাখা হলেও কাউন্সিলার পদে স্বতন্ত্রভাবে আগের নিয়মে হবে। পৌর নির্বাচনে বিএনপি এরই মধ্যে ২৩৫ পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীকে তাদের একক প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করে করেছে। বৃহস্পতিবার প্রার্থীরা সেগুলো নির্বাচন কমিশনে জমাও দিয়েছেন। পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আলোচনা সভায় হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, পৌরসভার নির্বাচনে প্রসঙ্গ গনমাধ্যমকর্মীরা প্রতিদিনই প্রার্থী, মনোনয়ন, অগ্রগতি এসব বিষয়ে জানতে চান। তাদের একটি গল্প বলতে চাই-শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞেসা করছেন, বনের মধ্যে একটি বাঘ তোমার সামনে এলে তুমি করবে? জবাবে ছাত্র উত্তর দিলো, স্যার আমার কিছু করতে হবে না, যা করার বাঘই করবে।
‘একইভাবে এই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কিছুই করার নেই, মাথা ঘামানোরও প্রয়োজন নেই। যা কিছু করার পুলিশ বাহিনী আর মাস্তানরাই (সন্ত্রাসী) করবে। আওয়ামী লীগেরও মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। পুলিশ বাহিনী তো আছেই। পুলিশ বাহিনী না পারলে নির্বাচন কমিশনতো আছেই।’গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ক্ষমতাসীনদের ‘প্রভাব বিস্তারের’ চিত্র তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনতো বেশি দিন আগে হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রামের কি নির্বাচন হয়েছে? ওই নির্বাচনে সন্ত্রাসীরা পুরান ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে তাড়া করেছে। কারণ তারা ব্যালটে সিল মারার কাজে ব্যস্ত ছিলো। রাষ্ট্রদূত সেখানে যাওয়ায় ধাওয়া খেয়েছে।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনের পর সরকারের সাহস বেড়ে গেছে। তারা মনে করছে, ঢাকায়ই কিছু হয় না, তাহলে গ্রামেগঞ্জে করলে আর কি হবে! সুতরাং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেমন হয়েছে পৌরসভা নির্বাচনও সেভাবেই হবে। উপজেলা নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে এভাবেই হয়েছে।’ পৌর ভোটের প্রচার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুরে রাখতেই নির্বাচন কমিশন আচরণবিধিতে পরিবর্তন এনেছে বলে অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী যাতে নির্বাচনী প্রচারে না নামতে পারেন সেজন্য একটি অভিনব আচরণবিধি করেছে ইসি। সেটি হলো কোনো দলের চেয়ারম্যান পৌর নির্বাচনের প্রচারে নামতে পারবেন না।
‘গণতন্ত্রের অভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়’ মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি দেশে গণতন্ত্র থাকতো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হতো, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হতো; তাহলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো না। দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ একাত্তরের মতো ফের রাজপথে নামতে সবার প্রতি আহ্বান জানান হাফিজ উদ্দিন।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে দেশকে ধ্বংস করবেন না। জঙ্গি রাষ্ট্র বানাবেন না। বিজয়ের মাসে সহিঞ্চু হোন। পৌর ভোটে কারচুপি থেকে বিরত থাকুন।’ মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির অন্যতম শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইব্রাহিম বীর প্রতীক, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।