সব

ভারত অযথাই হুমকি মনে করে বাংলাদেশকে

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 8th December 2015at 11:55 pm
20 Views

28স্টাফ রিপোর্টার  ঃ এখনও ভারতের নীতি-নির্ধারকদের একটি বৃহত অংশের মধ্যে বাংলাদেশকে অযথাই হুমকি মনে করার প্রবণতা বিদ্যমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইয়েদ মনজুর এলাহী। আজ (৮ ডিসেম্বর ২০১৫) সকালে রাজধানীর বিস (Bangladersh Institute of International and Strategic Studies-BISS) মিলনায়তনে এক বিশেষ সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

“SAARC at 30: Achievements, Potentials and Challenges অর্থাৎ ৩০ বছরে সার্ক: অর্জন, কার্যক্ষমতা এবং চ্যালেঞ্জ”-শীর্ষক সেমিনারে তিনি আরও বলেন, ভারত একটি উন্নয়নশীল বড় দেশ এবং বাংলাদেশ এখনও একটি স্বল্পন্নত দেশ। কিন্তু ভারতের কর্তা ব্যক্তিদের অনেকেই এখনও বাংলাদেশকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে থাকেন। তবে, ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা অনেকাংশেই নেই বলেও মন্তব্য করেছেন সাইয়েদ মনজুর এলাহী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সাবেক উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের পথে যেসব বাধা রয়েছে তার নানা দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘রুলস অব অরিজিন’-এর দোহাই দিয়ে অনেক সময়ই ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী পণ্য আটকে দেয়া হয়। এর ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাই প্রায়ই ঝুকিঁর মধ্যে পড়েন। উদাহরণ দিতে গিয়ে মনজুর এলাহী বলেন, তিনি নিজে একবার ভারত সফর করেন তারই ফ্যাক্টরিতে তৈরি মালামাল রপ্তানির সময়। কিন্তু ভারতে মাল প্রবেশের সময় ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন এটা চীনের মাল। তখন মনজুর এলাহী বলেন, আমার নিজের ফ্যাক্টরিতে তৈরি এই মাল, এর কাঁচামাল পর্যন্ত বাংলাদেশের। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে কিছুতেই এই বক্তব্য মানা হয়নি দাবি করে মনজুর এলাহী বলেন, তারা তখন বাংলাদেশের ‘এক্সপোর্ট প্রোমোশান ব্যুরো’ থেকে ‘রুলস অব অরিজিন সার্টিফিকেট’ দাবি করেন। অথচ বাংলাদেশে বিপুল পরিমান পণ্য রপ্তানি করছে ভারত এ ধরনের কোন জটিলতা ছাড়াই। এসব জটিলতা দূর করতে সার্কভূক্ত দেশগুলোকে পরস্পরের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মনজুর এলাহী বলেন, ‘সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিল’ গঠনে সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি ভারতসহ সার্কভূক্ত সব দেশকে ‘স্পর্শকাতর (Sensetive)’ পণ্যের তালিকা আরও ছোট করে অযথা জটিলতা পরিহার করার পরামর্শ দেন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নীতি আরও সহজ করার আহবান জানান। সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটা খুবই দু:খজনক ঘটনা যে এখনও দক্ষিণ এশিয়ার ৪৫ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছেন যা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯ শতাংশ। তিনি সার্কভূক্ত ৮ সদস্য দেশের যৌথ সম্মতিতে গৃহিত ২২ দফা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Development Goals) পূরণে সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। বিশেষ করে রাজনৈতিক ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানসহ সার্কভূক্ত দেশের নেতৃবৃন্দকে আরও সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভিসা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে ‘পিপলস টু পিপলস’ অর্থাৎ সার্কভূক্ত দেশের সাধারণ মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের পথকে আরও প্রশস্ত করারও আহবান জানান অধ্যাপক দেলোয়ার। সেমিনারে বিসের ‘বোর্ড অব গভর্নরস’-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ভারত আস্তে আস্তে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার জন্য হুমকির কিছু নেই।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয়ার সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারতের একটি নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ভারতকে সেই সম্মানের জায়গায় রাখার জন্য অন্য দেশকে মনোযোগী হতে হবে। মুন্সি ফায়েজ বলেন, একই সঙ্গে ভারতকে পার্শ্ববর্তী ছোট-বড় সব দেশকেই বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অমুক দেশের কাছ থেকে হুমকি রয়েছে, তমুক দেশের কাছ থেকে ঝুঁকি রয়েছে-এই ধরনের বাতিক থেকে ভারতকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, বিইআই (Bangladesh Enterprise Institute)-এর প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান। এছাড়া উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা। এর আগে সকালে সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।


সর্বশেষ খবর