ভবন নির্মাণে এবার ফি দিতে হবে ৩ সংস্থায়
ডেস্ক রিপোর্ট ঃ রাজধানী ও আশপাশে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন নিতে হয়। নির্ধারিত ফির বিনিময়ে এ অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে এখন থেকে আবাসিক ভবন নির্মাণের নকশায় অনুমোদন লাগবে আরো দুই সংস্থা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ)। পাশাপাশি এ তিন সংস্থাকে নির্ধারিত হারে পৃথক ফিও দিতে হবে। এদিকে নতুন আবাসন প্রকল্প অনুমোদনে রাজউকের পাশাপাশি ডিটিসিএর অনুমোদন লাগবে। এজন্য উভয় সংস্থাকে একরপ্রতি চার্জ দিতে হবে। এর বাইরে আবাসন প্রকল্প অনুমোদনে পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকা ওয়াসার অনুমোদন নিতে হবে। এজন্যও পরিশোধ করতে হবে পৃথক ফি। সম্প্রতি ডিটিসিএর বোর্ডসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৩০ হাজার বর্গমিটারের ঊর্ধ্বে বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে তিন সংস্থায় ফি লাগবে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজউক ও সিটি করপোরেশনে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা করে ও ডিটিসিএতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া ২০ থেকে ৩০ হাজার বর্গমিটার পর্যন্ত ভবনের নকশা অনুমোদনে ফি দিতে হবে ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজউক ও সিটি করপোরেশন ২ লাখ ৭ হাজার টাকা করে ও ডিটিসিএ ১ লাখ টাকা পাবে। ১৫ থেকে ২০ হাজার বর্গমিটার আকারের ভবনে নকশা অনুমোদনে ফি লাগবে ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাজউক ও সিটি করপোরেশন পাবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে ও ডিটিসিএ ৭০ হাজার টাকা। ১০ থেকে ১৫ হাজার বর্গমিটার ভবনের নকশা অনুমোদনে ফি হিসেবে তিন সংস্থা পাবে যথাক্রমে ১ লাখ ৫ হাজার, ১ লাখ ৫ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট ফি দিতে হবে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আর ৫ থেকে ১০ হাজার বর্গমিটারের ভবনের নকশা অনুমোদনে ফি পরিশোধ করতে হবে ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজউক ও সিটি করপোরেশন পাবে ৮৩ হাজার টাকা করে ও ডিটিসিএ ৪০ হাজার টাকা। এর বাইরে তিন সংস্থায় চার থেকে পাঁচ হাজার বর্গমিটারের জন্য ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, তিন থেকে চার হাজার বর্গমিটারে ৯৮ হাজার টাকা, দুই থেকে তিন হাজার বর্গমিটারে ৬২ হাজার টাকা, দেড় থেকে দুই হাজার বর্গমিটারে ২৭ হাজার টাকা ও এক থেকে দেড় হাজার বর্গমিটারের জন্য ২০ হাজার ৬০০ টাকা ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধ করতে হবে এর চেয়ে কম আয়তনের ভবনের নকশা অনুমোদনেও। এছাড়া নতুন আবাসন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য রাজউকে একরপ্রতি ৩ হাজার ও ডিটিসিএতে ১ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। আর পরিবেশ অধিদফতরকে জমির মূল্য অনুপাতে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। একইভাবে ওয়াসাকে সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার টাকা চার্জ দিতে হবে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন গ্রহণে। তবে আওতাভুক্ত না হওয়ায় নতুন আবাসন প্রকল্পে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন লাগবে না।
জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ডিটিসিএর। আর সড়কের মালিকানা সিটি করপোরেশনের আওতায়। তাই ভবনের নকশা অনুমোদনে রাজউকের পাশাপাশি এ দুই সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে। শিগগিরই এটা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর ভিত্তিতে নির্ধারিত ফি দিয়ে নকশা অনুমোদন করাতে হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত কোনো এলাকায় বা নির্দিষ্ট রাস্তায় গাড়ির ধারণক্ষমতা কত, সে হিসাব রাখা হয় না। এ অবস্থায় একটি বহুতল ভবন বা প্রকল্পে কতগুলো গাড়ি ব্যবহার হয় এবং তার ফলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি যানজট হয় কিনা, তা বিবেচনায় নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাড়তি খরচ গুনতে হয় সরকারি সংস্থাকে। এজন্যই ক্ষতিপূরণ বা সেবামূল্য হিসেবে ‘ফি’ বা ‘কর’ আদায় করা হবে। অন্যান্য সেবা সংস্থা যেমন বিভিন্ন কারণে কর আদায় করে, তেমনি ডিটিসিএ কর আদায় করবে। এটা ট্রাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট ফি হিসেবে বিবেচিত হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ট্রাফিক সার্কুলেশন এক্সামিনি কমিটি। ওই কমিটিই ফি আদায়ের প্রস্তাব করেছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২-এর ধারা ৯-এর উপধারা (ঠ) অনুযায়ী এ ফি আরোপ করা হবে। ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ভবন ও প্রকল্পের ট্রাফিক সার্কুলেশন ফি নির্ধারণ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ জুন ডিটিসিএর তৃতীয় বোর্ডসভায় প্রথম আলোচনা হয়। ওই বছরের ১ অক্টোবর পরিচালনা পর্ষদের চতুর্থ সভায় রাজউকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফি যাচাই করে তুলনামূলক বিবরণী উত্থাপন করা হলেও বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। এর পর ডিটিসিএর নিজস্ব আয়ের উৎস তৈরিতে প্রস্তাবটি কার্যকরে মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে অনুষ্ঠিত ডিটিসিএর সপ্তম বোর্ডসভায় ফির হারসহ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সংস্থার অষ্টম বোর্ডসভায় এটি অনুমোদন পেতে পারে।
ডিটিসিএর বোর্ডসভায় উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের ফলে এর বাসিন্দার সংখ্যা বাড়বে। এতে বাড়বে শহরে ট্রাফিক সার্কুলেশন। আর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গাড়ি চলাচল বাড়বে। এজন্য সড়ক ব্যবহার ফি ও ট্রাফিক সার্কুলেশন বাবদ চার্জ সিটি করপোরেশন ও ডিটিসিএকে দিতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, বিশ্বের কোথাও ভবন নির্মাণে তিন বা চার সংস্থার অনুমোদন নিতে হয় না। একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকে। তারাই চার্জের বিনিময়ে নকশা অনুমোদন করে। তবে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণকারী অনেক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তাই পৃথক পৃথক সংস্থার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পৃথক ফিও ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থায় সেবার মান তো বাড়বেই না, বরং জটিলতা তৈরি হবে। এর পরিবর্তে একবারে তিন সংস্থার অনুমোদনের ব্যবস্থা নিলে জটিলতা কমানো যেত। (সূত্র: বণিক বার্তা)