আত্মহত্যার পরিণতি ভয়াবহ
স্টাফ রিপোর্টারঃ ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামের আগুনে বারবার বিষপানে আত্মহত্যা করতে থাকবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বিশেজ্ঞদের মতে, যারা এক সময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ আজ বেঁচে আছে বলে খুশী। এই ব্যাপারে তাদের মতামত হচ্ছে, তারা আসলে জীবন শেষ করে দিতে চায়নি -শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিল৷
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিমাত্রায় বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হন। তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে আত্মহত্যাকারী ৮০ শতাংশের বেশি তরুণ-তরুণী। এর কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রেমে ব্যর্থ, পরীক্ষায় লজ্জাকর ফলাফল, পিতামাতা বা বন্ধুবান্ধবের সাথে রাগারাগি, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক,দারিদ্র্য, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এভাবে বিশ্বে প্রতিদিন হাজারের ওপরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
বিশ্বের কোনো ধর্মে আত্মহত্যার কোনো বৈধতা নেই। কোনো সামাজিক ব্যবস্থায়ও আত্মহত্যার বৈধ বিধান নেই। কোনো দার্শনিক এ ব্যাপারে বৈধতার কথা বলেননি, বরং অনুৎসাহিত করেছেন জোরালোভাবে। বলেছেন, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বোকা ও স্থূল জ্ঞানের অধিকারীরা।
আত্মহত্যার বিষয়ে ইসলামের স্পষ্ট ঘোষণা- ‘আত্মহত্যা হারাম’। এ বিষয়ে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সাথে সাথে প্রবল নিন্দা জানানো হয়েছে।
সূরা নিসার ২৯ ও ৩০ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সদা দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন ও জুলুমের পথ বেছে নিয়ে আত্মহত্যা করবে, (তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো) আমি অচিরেই তাকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দেবো। আর এটা আল্লাহর জন্য সহজ।’
আরো আছে, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না’ (সূরা বাকারা : ১৯৫)।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন,যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে,সে জাহান্নামে অনুরুপভাবে (পহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতেই থাকবে। এবং উহা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে,তার বিষ তার হাতে থাকবে,জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর উহা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে,সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে । জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে,আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে (বুখারী,ডাক্তারী অধ্যায়,হা/৫৩৩৩,মুসলিম,ঈমান অধ্যায়,হা/১২৭৬)।
অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী এক ব্যক্তি আহত হলো, ব্যথার তীব্রতা সে সহ্য করতে না পেরে নিজেকে নিজের চাকু দ্বারা আঘাত করলে রক্তক্ষরণ হতে লাগল, এর ফলে মৃত্যুবরণ করল। আল্লাহ বলেন, বান্দা নিজের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে, আমিও তার ব্যাপারে তাড়াহুড়ার সিদ্ধান্ত জাহান্নাম করে নিয়েছি’ (বুখারি)।
উপরে উল্লিখিত কুরআন ও হাদিসের আলোচনা দ্বারা আত্মহত্যার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়। ইসলাম আত্মহত্যাকে অনুৎসাহিত করার পাশাপাশি কঠিন শাস্তির কথাও ব্যাপক আকারে উল্লেখ করেছে। এ আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়, আত্মহত্যাকারী নিঃসন্দেহে জাহান্নামি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে প্রতিবছর দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। আত্মহত্যাপ্রবণ বেশিরভাগই ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের আত্মহত্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। তথ্যে জানা যায়, আত্মহত্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। যা এক সময় ৩৮তম ছিল।
অথচ আত্মহত্যা প্রতিরোধ্য। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব। বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষে ৭ দশমিক ৮ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৯৪ জন, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১২৯ জন, ২০১২ সলে ১০ হাজার ১৬৭ জন, ২০১১ সালে ১০ হাজার ৩২৩ জন এবং ২০১০ সালে ১০ হাজার ৭৮৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। অপরদিকে, বিশ্বে প্রতিবছর আত্মহত্যা করেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।