শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ নিজেদের মধ্যকার সকল মতপার্থক্য ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাকিদ দিলেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর ২০১৫)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘মহানবী (সা.)-এর সীরাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তরা এ আহবান জানান। ঢাকাস্থ ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, বর্তমানে আমরা ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হয়েছি যখন ইসলামী বিশ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্য, সংহতি, ভ্রতৃত্বের মুখাপেক্ষী। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের আলোচনার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বাধাগুলোকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে।
ইসলামী বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য যে জরুরী হয়ে পড়েছে এটা সবার কাছেই স্পষ্ট-এমন মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, এই ঐক্য একদিন, এক সপ্তাহ, এক মাস বা এক বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তাই এই ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা ও পালনের উদ্দেশ্যে হলো এরমধ্য দিয়ে ইসলামী সমাজকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আমরা যেন নিজেদের মধ্যকার সকল মতবিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতে পারি। বক্তারা বলেন, মুসলমানদের মধ্যে মাজহাবগত বা দৃষ্টিভঙ্গিগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সবার বিশ্বাস এক ও অভিন্ন। এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। যেমন আমরা সবাই এক আল্লাহর এবাদত করি।সবাই শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর উপর ইমান এনেছি। পবিত্র কুরআন বা আল্লাহর বাণীকে মানবতার পথ নির্দেশক হিসেবে আমরা মনে করিএবং পবিত্র এই কুরআন অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে বলেও আমরা বিশ্বাস করি। পবিত্র কাবা কিবলা ধরে আমরা নামাজ আদায় করি। এছাড়া নামাজ, রোজা, হজ্ব ….. এরকম আরো অনেক বিষয়েই আমাদের বিশ্বাস এক ও অভিন্ন। তারা বলেন, এখানে এ বিষয়টি বলা প্রয়োজন যে আমরা কি উদ্দেশ্যে মুসলমানদেরকে ঐক্যের দাওয়াত দিচ্ছি ? এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য কি একটি সম্প্রদায় বা মাজহাবের অনুসারী তাদের আকিদা বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে অন্য আকিদা বিশ্বাসকে গ্রহণ করবে? এর জাবাবে বলতে হয়, না এক্ষেত্রে না এমন কোন উদ্দেশ্য আছে, না এটা সম্ভব। এর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, সুন্নি মাজহাবের অনুসারীরা শিয়া হবে বা শিয়া মাজহাবের অনুসারীরা সুন্নি হবে। কেননা বিশ্বের সকল মুসলমানের মধ্যে ছোট খাটো মতপার্থক্য থাকবে না এটা হতে পারে না। বক্তারা বলেন, এমনকি শিয়া ও সুন্নি মাজহাবের মধ্যেও আবার ভাগ রয়েছে। যেমন সুন্নিদের মধ্যে ৪টি ভাগ রয়েছে। যুক্তি ও মুক্ত চিন্তার অংশ হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে মাজহাবগত পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এই পার্থক্য যেন আমাদের মধ্যে অনৈক্যের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, ইসলামী ঐক্যের উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেক মাজহাবের অনুসারীরা তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখে সামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজেদেরকে আরো শক্তিশালী করবে। যাতে ইসলামের শত্রুদের যেকোন ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা যায়। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের মহাপরিচালক জনাব সামীম মোহাম্মাদ আফজাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ।