সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক –
স্টাফ রিপোর্টারঃ নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আজ-কালের মধ্যে ‘সার্চ কমিটি’ হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চিঠি পাওয়ার পরপরই এ কমিটির সদস্যদের নাম প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এরপর সার্চ কমিটির সদস্যরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার (ইসি) গঠনে একটি খসড়া তালিকা দেবেন রাষ্ট্রপতির হাতে। সেই তালিকা থেকে নতুন ইসি গঠন করবেন তিনি।
এদিকে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার রাতে দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে দু’জনের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ ভবনে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রের দুই কর্ণধার ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সংশ্লিষ্টদের মতে, সার্চ কমিটি গঠন নিয়েই মূলত রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়। সোমবার বিকালে বঙ্গভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়েও এ ইস্যুতে বৈঠক করেন মো. আবদুল হামিদ।
বঙ্গভবন সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সবক’টি রাজনৈতিক দল ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা কমিশন নিয়োগে সংবিধান মেনে নতুন আইন প্রণয়নেরও প্রস্তাব দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নতুন আইন প্রণয়নের পক্ষপাতী হলেও সময় স্বল্পতার কারণে আপাতত আর তা হচ্ছে না। তাই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে অনুসরণ করে সার্চ কমিটি গঠনের পথেই হাঁটছেন তিনি।
সূত্রটি জানায়, এরই মধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখার কাজও শেষ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ-কালের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
জানা গেছে, এর আগে চার সদস্যের হলেও এবার সার্চ কমিটি হবে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের। তবে শেষপর্যন্ত সার্চ কমিটি কত সদস্যের এবং কমিটিতে কারা থাকছেন তা জানতে প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে প্রথমবারের মতো যে সার্চ কমিটি করা হয় সেখানে আপিল বিভাগের একজন বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সদস্য।
সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি গঠন এবং নাম চূড়ান্ত করার জন্য সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সার্চ কমিটি গঠন, আগের গঠন প্রক্রিয়া, সার্চ কমিটির সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা- প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। তবে বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিষয়টি রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেই ঠিক করবেন। তবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় রাষ্ট্রপতি তেমন সিদ্ধান্তই নেবেন।’
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সোমবার বলেন, ‘সার্চ কমিটি হয়ে গেলেও তারা হাতে বেশি সময় পাবেন না। কারণ ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিশন গঠন করতে হবে। তাই আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সার্চ কমিটিকে সম্ভাব্য কমিশনারদের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির হাতে দিতে হবে।
এর মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচটি নাম চূড়ান্ত করবেন। নাম চূড়ান্ত করার পর এখন চারজনকে নিয়োগ দেবেন। আর বাকি একজনকে নিয়োগ দেবেন আরও এক সপ্তাহ পরে। কারণ নির্বাচন কমিশনের বর্তমান চার কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি। আর বাকি একজনের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে একজন পরে দায়িত্ব নেবেন। তবে দায়িত্ব পরে নিলেও নিয়োগ একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।’
সার্চ কমিটি গঠনের উদ্দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ধারবাহিক বৈঠক শেষ হয় ১৮ জানুয়ারি। এর ১ মাস আগে শুরু হওয়া এ বৈঠকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দল আলোচনায় অংশ নেয়। সংলাপে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, সার্চ কমিটি এবং দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠনসহ বিভিন্ন পরামর্শ এসেছে দলগুলোর পক্ষ থেকে।
বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছেন তারা। সংলাপে পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও প্রস্তাব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতিও একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।