ফাতেমাও নেই, সাধারণ বন্দি জীবন খালেদার
স্টাফ রিপোর্টারঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, দুই দিনেও কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে সাধারণ বন্দি হিসেবেই রাখা হয়েছে। এছাড়া তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার আবেদন করা হলেও তাকে এ পর্যন্ত কারাগারে যেতে দেয়া হয়নি।
গতকাল(শনিবার) বিকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে এসব তথ্য জানান ব্যারিস্টার মওদুদ। পাঁচ সদস্যের আইনজীবী দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া মনোবল ঠিক আছে, তাকে একজন সাধারণ বন্দি হিসেবে রাখা হয়েছে। তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। কারা কোড অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তিনটি যোগ্যতায় তিনি ডিভিশন পান।
কিন্তু বাইরে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তাকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে, কাজের মেয়েকে (ফাতেমা) দেয়া হয়েছে। কাজের মেয়েকে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কোর্ট আদেশও দিয়েছেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন এই গৃহপরিচারিকার সহযোগিতা নিয়ে চলছেন। তার ওষুধপত্র সেবন’সহ দৈনন্দিন কাজে তার সহযোগিতা নিয়ে চলেন। অথচ তাকে ডিভিশন না দিয়ে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে।
মওদুদ বলেন, ভাঙা পরিত্যক্ত বাড়িতে সুযোগ সুবিধা ছাড়া জনমানবহীন রাখা হয়েছে। যা একেবারে সংবিধান পরিপন্থী। আমরা এ নিয়ে আদালতে যাব। এক্ষেত্রে সরকারেরও ভূমিকা আছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যাবো।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আগামীকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার চেষ্টা করব। সোম অথবা মঙ্গলবার আপিল আবেদন নিয়ে আদালতে যাব। সাক্ষাতের সময় জেলার এবং গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ।
আইনজীবী প্রতিনিধি দলে ব্যারিস্টার মওদুদ ছাড়াও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এজে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আবদুর রেজাক খান ছিলেন।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকারবকশিবাজারের আলীয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত ৫নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তারেক রহমান’সহ বাকি ৫ আসামিদের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এরপর রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়েছে তাকে। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অফিস ভবনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বামেই সিনিয়র জেল সুপারের যে অফিস কক্ষ ছিল, সেখানেই তাকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ওই কারাগারে আর কোনও বন্দি নেই। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৬টার থেকে শুরু করে সারাদিন রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোড থেকে সাড়ে ছয় হাজার বন্দিকে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার বন্দিশূন্য ছিল।
দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এর আগে একবার কারাগারে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তখন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্পিকারের বাসভবনকে সাবজেল ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিল তাকে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান।