নড়াইলের বীরশ্রেষ্ঠর নূর মোহাম্মদ স্কুল শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন অবসান
নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরদর্পে লড়াই করে ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটিতে শহীদ হন। মহান এই বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জন্মস্থান মহিষখোলায় যার বর্তমান নাম নূর মোহাম্মদ নগরে ২০০৫ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার শিক্ষানুরাগীরা।স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মস্থান নড়াইলের নূর মোহাম্মদ নগরে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়টি ১৩ বছর ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। মহান এই বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে কলেজটি জাতীয়করণে প্রায় দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চিঠি দেয়া হলেও তার অগ্রগতি নেই। যার কারণে কলেজটিতে কর্মরত ২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে ১৩ বছর ধরে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জানা গেছে, ২০১০ সালে কলেজটি একাডেমিক স্বীকৃতি পায় এবং ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতীয়করণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ কলেজটি শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীরা। বর্তমানে কলেজটিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আশেপাশের অন্তত ২০টি গ্রামে নারী শিক্ষাসহ বেড়েছে উচ্চ শিক্ষার হার। কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানান, এক সময়ে তাদের এলাকায় উচ্চ শিক্ষিত তেমন কেউ ছিল না। কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে প্রতিটি বাড়িতেই কমপক্ষে এইচএসসি পাশ ছেলে মেয়ে পাওয়া যায়। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করে অনেকেই নড়াইল অথবা লোহাগড়ায় স্নাতক বা অনার্স কোর্স সম্পন্ন করে ভাল চাকরি পাচ্ছেন। এভাবে অনেকেই তাদের পরিবারের হাল ধরেছেন। আমরাও স্বপ্ন দেখি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভাল কিছু করতে পারবো কলেজ ছাত্র ইমন জানান, বীরশ্রেষ্ঠ
নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয় হতে পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই চাকরি করছেন এবং সম্মানজনক বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা এখনও বেতন পান না। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। কলেজের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম ও আল হেলাল জানান, দেশের সাতজন বীরশেষ্ঠ’র মধ্যে একজন হলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। এই বীরের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি এক যুগের বেশি সময় ধরে এলাকায় নারী শিক্ষার প্রসারসহ উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু কলেজটি জাতীয়করণ বা এমপিওভূক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন
যাপন করছেন। কলেজের অধ্যক্ষ প্রণব কান্তি অধিকারী জানান, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কলেজটি জাতীয়করণের জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তারপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। কলেজটিতে বর্তমানে ১৯ জন শিক্ষক ও ৭ জন কর্মচারী রয়েছে। তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলেজটি গড়ে উঠায় পাশের কয়েকটি ইউনিয়নের ছেলে মেয়েরা এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে বিশেষ বিবেচনায় কলেজটি জাতীয়করণের দাবি জানান। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সন্তান গোলাম মোস্তফা কামাল তার বাবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কলেজটি জাতীয়করণের জোর দাবি জানিয়েছেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, কলেজটি জাতীয়করণের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করবো বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি অচিরেই জাতীয়করণ করা হবে।বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে অর্জিত লাল সবুজের এই বাংলাদেশ। মহান বীরের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি অচিরেই জাতীয়করণের মধ্যদিয়ে এলাকার শিক্ষার অগ্রগতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবনের অবসান ঘটবে এমনটাই আশা করছেন এলাকাবাসী।