সাদ হারিরি আবারো সৌদি আরবে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পদত্যাগের ঘটনার পর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি আবারো সৌদি আরব গেলেন। বুধবার তিনি সেখানে পৌঁছান। খবর আল জাজিরার।
সাদ হারিরির মিডিয়া দফতর থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। অবশ্য এ সফরের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বিবৃতিতে জানানো হয়নি।
গত নভেম্বরে সৌদি আরব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদ হারিরি। পরে অবশ্য তিনি দেশে ফিরে সে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।আগামী ৬ নভেম্বর লেবাননে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে তিনি এ সফর করছেন। অবশ্য সাদ হারিরির সৌদি নাগরিকত্ব রয়েছে।
এ সফরে লেবাননের জন্য দাতাদের নিয়ে একটি কনফারেন্সের আয়োজনের লক্ষ্য রয়েছে। উপকূলীয় জাতিগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরবকে এ কনফারেন্সে সম্ভাব্য দাতা হিসেবে ভাবা হচ্ছে।গত বছরের ৩ নভেম্বর সৌদি আরব যান লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। পরদিন এক টেলিভিশন বিবৃতির মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
তার এ পদত্যাগের ঘোষণায় লেবাননবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সৌদি আরবকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়। বিষয়টিকে দেখা হয় একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অন্য আরেকটি দেশ কর্তৃক ছিনিয়ে নেয়ার বিষয় হিসেবে।লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন তার এ পদত্যাগকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এবং সৌদি কর্তৃপক্ষকে বলা হয় ‘আটক’ প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিতে।
দুই সপ্তাহ সৌদি আরবে অবস্থানকালে সাদ হারিরি লেবাননে অস্থিতিশীলতার জন্য দেশটির বিরোধী দল হিজবুল্লাহ ও ইরানকে দায়ী করেন। বিষয়টি নিয়ে ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ গ্রহণ পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন।লেবাননে ঘিরে সৌদি ও ইরানের মধ্যে কার্যত একটি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছে। উভয় পক্ষই চাইছে সেখানে আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিষয়টির সঠিকভাবে মধ্যস্থতার চেষ্টা সফল হওয়ার পর ৫৭ বছর বয়সী সাদ হারিরি লেবানন ফিরে যান। ম্যাক্রোঁ চেয়েছিলেন সাদ হারিরির পদত্যাগ ছাড়াই বিষয়টির নিষ্পত্তি হোক। তিনি তাতে সফল হয়েছিলেন।দেশে ফিরে তিনি প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের আহ্বানে পদত্যাগ স্থগিত রাখেন।
কী ঘটেছিল সৌদি আরবে? যা বললেন সাদ হারিরি
আলজাজিরা, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি বলেছেন, ‘সৌদি আরবে যা হয়েছে তা নিজের মধ্যেই রাখতে চাই। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এখনই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরকালে নিজের পদত্যাগের ঘোষণার পর দেশে ফিরে তা স্থগিত করেন হারিরি। এরপর সোমবার এক বিবৃতিতে আবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তিনি।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম সি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হারিরি বলেন, ‘হিজবুল্লাহ যদি তার স্থান থেকে সরে না দাঁড়ায় তবে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিবো। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পরামর্শের ভিত্তিতে সরকারের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে এবং আমরা প্রাথমিক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
গত ৪ নভেম্বর সৌদি সফরে গিয়ে আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন সাদ হারিরি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী সংগঠন হিজবুল্লাহকে দায়ী করেন তিনি। হারিরি বলেছিলেন, খুন হওয়ার ভয়েই তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, সৌদি আরবের চাপেই পদত্যাগ করেছেন তাদের মিত্র হারিরি। হিজবুল্লাহর মুখোমুখি হতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ‘সরিয়ে দিয়েছে’ সৌদি কর্তৃপক্ষ।
তবে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেননি লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশে ফিরে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। এরপর দেশে ফিরেই সাদ হারিরি জানান, পদত্যাগ করছেন না তিনি। অন্য দিকে ২ নভেম্বর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে ১১ জন প্রিন্সসহ প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সে সময়ই পদত্যাগের ঘোষণা দেন হারিরি। বিশ্লেষকেরা বৃলছেন, একদিকে অভ্যন্তরীণ কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান, অন্য দিকে আঞ্চলিক আধিপত্য জোরদারে লেবানন ও ইয়েমেনকে ইরানবিরোধী ছায়াযুদ্ধের নাট্যমঞ্চ বানায় সৌদি আরব।