সিরিয়ায় যে কোনো মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, রাশিয়ার হুশিয়ারি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সিরিয়ায় পূর্ব ঘৌটার দৌমা শহরে রাসায়নিক হামলার অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এ তিন দেশের সঙ্গে যোগ দিতে পারে সৌদি আরবও।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে এ হামলা শুরু হতে পারে। সিরিয়ায় হামলা হলে ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ওপর পাল্টা হামলা করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
এর পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে রাশিয়াকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীও।
বিশ্ব শক্তিগুলোর এমন রেষারেষির মধ্যে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় আকাশসীমা ব্যবহারে বিশ্ব বিমান সংস্থাগুলোকে সতর্কতা জারি করেছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরো কন্ট্রোল।
সিরিয়ায় শনিবারের রাসায়নিক হামলার জন্য দেশটির সরকারকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। অন্যদিকে সিরিয়া সরকার এবং তার মিত্র রাশিয়া বলে আসছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীই সাধারণ নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে।
কয়েক দিনের হুমকিধমকির পর সিরিয়া ইস্যুতে ফোনে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
এ সময় সিরিয়ায় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে একমত হন তারা। তিন নেতার ফোনালাপের পর মঙ্গলবার ব্রিটিশ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সিরিয়া ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা।
পূর্ব ঘৌটার দৌমা শহরে রাসায়নিক হামলার ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়েও একমত হন তারা।
রাসায়নিক হামলার ঘটনায় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা এবং সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ সময় তিনি পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অঙ্গীকার করেন।
এরপর বুধবার সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে বলে জানিয়ে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে রাশিয়াকে প্রস্তুত থাকতে বলেন ট্রাম্প। এক টুইটার বার্তায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার দিকে যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে রাশিয়া।
তাহলে এবার প্রস্তুত থাকো। সিরিয়ার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে যাচ্ছে। গ্যাস দিয়ে মানুষ হত্যা করা ‘পশু’র সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত হয়নি তোমার।’ টুইটারে পশু বলে প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে ফ্রান্স সফরে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক বৈঠকের পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, সিরিয়া হামলায় যোগ দিতে পারে তার দেশও।
পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য এ হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীগুলো। ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের সমালোচনা করেছে আসাদের প্রধান দুই মিত্র রাশিয়া ও ইরান।
কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে দেশ দুইটি বলেছে, সিরিয়ায় হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। বিনা জবাবে তারা পার পাবে না।
লেবাননে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার জাসিপকিন বলেন, সিরিয়ায় কোনো মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে সেটা প্রতিহত করা হবে। শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতই নয়, যেখান থেকে ছোড়া হবে সেখানেও পাল্টা হামলা চালাবে রাশিয়া।
এর আগে মার্চে রুশ সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভ বলেন, সিরিয়ার দিকে আসা যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করবেন তারা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলা চালালে তার দেশও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।