স্টাফ রিপোর্টারঃ ২০ বছর বয়সী নাতিকে এবারই প্রথম দেখলেন দাদি জরিনা বেগম। জীবনে প্রথমবার ছেলের সন্তানকে সামান্য দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিল দাদির। নাতির প্রতি দাদির অগাধ ভালোবাসা দেখে চোখ থেকে পানি না পড়লেও চোখ দুটি ছল ছল করছিল জামালের। এমনিতে তো জীবনে প্রথমবার দেখা তাদের। তারপরও কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে না পারার কষ্টে যেন বারবার মুষড়ে পড়ছিলেন দাদি-নাতি। পাঠক অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, কেন এমন হলো দাদি-নাতির মাঝে?
প্রায় ৪০ বছর পর দেখা হলো দুই ভাইয়ের। একে-অপরকে ছুঁয়ে দেখলেন তারা। হলো কুশলবিনিময়ও। তারপর চিৎকার করে অনেক দিনের জমানো কথা বিনিময় করলেন। আনন্দে-আবেগে হাউ-মাউ করে কাঁদলেনও দুজন। কিন্তু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হলো না তাদের। কেননা, দুজনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
বেড়ার এপাশে (বাংলাদেশে) হরমোহন (৬০)। ওপাশে (ভারতে) প্রহল্লাদ বর্মন (৭০)। একজন এসেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চন্ডিপুর থেকে, অপরজন ভারতের শিলিগুড়ির জলডুম ফাড়াবাড়ি এলাকা থেকে।
ভাই-ভাইয়ে দীর্ঘদিন পর দেখা হলো পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার সুকানি সীমান্তে। কিছুক্ষণ পরপরই দুজনই থেমে থেমে কাঁদলেন। শেষে হরমোহন এ প্রতিবেদককে বললেন, ‘অনেক দিনের পরে দেখা তো, ইচ্ছে করছে–ভাইটাকে বুকে নিই। কিন্তু মরার কাঁটাতরের বেড়া তাও করতে দিলো না।’ওপাশ থেকে প্রহল্লাদ বর্মনও একই কথা বললেন। শেষমেশ দুজন দুজনকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘ভালো থাকিস, ভাই।’
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ও মাগুরমারী এবং তেতুলিয়া উপজেলার সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে রবিবার (১৫ এপ্রিল) বসেছিল দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। ক্ষণিকের জন্য হলেও দীর্ঘদিন পর দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হলেন, বিদায়ের সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এই চার সীমান্তে মিলনমেলা বসে। তবে এবার ভারতের বৈশাখের প্রথম দিন রবিবার এসব সীমান্তে মিলনমেলা বসলো। প্রত্যেকটি সীমান্তে ছিল হাজারও মানুষের উপচে পড়া ঢল।
সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দেশের সাধারণ লোকজন, যারা অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন।
ভারতে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে রবিবার সকাল থেকে সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার চারটি সীমান্ত পয়েন্টে এসে জড়ো হন পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কাঁটাতারের অপরপাশে জড়ো হন জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, চোপরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভারতীয় নাগরিকরাও।
সকাল ১০টা থেকে অমরখানা ও মাগুরমারী এবং সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে এ মিলনমেলা শুরু হয়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষদের দেখতে পেয়ে দর্শনার্থীরা কাঁটাতারের বেড়ার বাঁধা ভুলে যান। বেড়ার ফাঁক গলিয়ে একে-অন্যের হাত ধরেন, কথা বলেন। বিনিময় করেন নানান উপহার। কেউ কেউ আবার কেঁদে ভাসান আবেগে।
বর্ডার গাড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, অমরখানা সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪৩ এর সাবপিলার-৩ থেকে মেইন পিলার-৭৪৪ এর সাবপিলার-২, মাগুরমারী সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪২ এর সাবপিলার-১১ থেকে মেইন পিলার-৭৪২ এর সাব পিলার-১২, সুকানি সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪১ এর সাবপিলার-৬ থেকে মেইন পিলার-৭৪১ এর সাবপিলার-৭ এবং ভুতিপুকুর সীমান্তের মেইন পিলার-৭৩৭ এর সাবপিলার-২ থেকে সাবপিলার-৬ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই মিলনমেলা হয়। বিজিবির অমরখানা বিওপির বিপরীতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কুন্দন ও চাউলহাটি বিএসএফ ক্যাম্প, বিজিবির সুকানি বিওপি ক্যাম্পের বিপরীতে বিএসএফের মদনবাড়ি ক্যাম্প, বিজিবির ভুতিপুকুর বিজিবি ক্যাম্পের বিপরীতে বিএসএফের গাটরা ক্যাম্প, বিজিবির মাগুরমারী বিওপির বিপরীতে বিএসএফের চাউলহাটি ও ভোলাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা এই মিলনমেলায় উভয়পাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতের মাটিগাড়ায় থাকা ভাই নিজেন্দ্রনাথ (৬০) ও ভুষেন্দ্রনাথের (৩৫) সঙ্গে দেখা করতে আসা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বোয়ালমারীর রাজেন্দ্রনাথ (৫৫) জানান, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে ওপার বাংলায় থাকা ভাইদের দেখার, খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ পাই। জলপাইগুড়ির কালিবাড়ী পান্ডাপারায় বাচ্চাবালা নামে তার অপর এক বোন থাকেন। তার সঙ্গেও দেখা হয়েছে।
বোদা উপজেলার কাদেরপুর ময়দানদিঘী থেকে আসা ৯০ বছরের প্রসন্ন কুমার ভারতের চোপড়া পথানার দাসপাড়ায় থাকা বোন সনেকার (৪০) সঙ্গে দেখা করেছেন।
পঞ্চগড় শহরের আব্বাস আলী জানান, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছেন। জলপাইগুড়ির ভেলাকোপায় থাকা মামা মোশাররফ হোসেন, শিলিগুড়ির ফুলবাড়ির ভায়রা মোজাফ্ফর হোসেন, জলপাইগুড়িতে থাকা সম্বন্ধী ময়নুল শ্যালিকা লিলির সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে। পঞ্চগড়ের যে কোনও একটি সীমান্তে সরকার যদি সীমান্ত হাট স্থাপন করে, তবে তাদের সঙ্গে দেখা হওয়া ও কথা বলার দূরত্বটা কমবে বলেও জানান তিনি।
একই কথা জানালেন পঞ্চগড় শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকার ১২০ বছরের বৃদ্ধ ফাগু মোহাম্মদ, মডেল হাট এলাকার বাবুল ইসলামও।
তেতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলী, অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান নুরু জানান, পৃথক দুই দেশে বসবাস করলেও হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন, মনে জমে থাকা কথা বিনিময় করেন। স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকে আবেগ ধরে রাখতে পারেন না।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ জানান, নীলফামারী ও পঞ্চগড় বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে পঞ্চগড় সদর ও তেতুলিয়া উপজেলার অমরখানা, ভুতিপুকুরী, সুকানি ও মাগুড়মারী সীমান্তে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এই মিলনমেলা হয়। দুই দেশের হাজারও মানুষ সীমান্তে সমবেত হন। এবারের মিলনমেলায় বিজিবির ঠাকুরগাঁও সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ শামছুল আরেফীনসহ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল আল হাকিম মো. নওশাদ বলেন, ‘প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে তেতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভুতিপুকুর সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মিলনমেলা হয়ে থাকে। দুই দেশের নাগরিকরা যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায়, এজন্য আমরা বিএসএফ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এই মিলনমেলার আয়োজন করে থাকি। এ বছর উভয় দেশের নাগরিকরা যেন নির্বিঘ্নে দেখাস্বাক্ষাৎ করতে পারে, এজন্য বিজিবির পক্ষ থেকে মেডিক্যাল টিম, স্যালাইন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলনমেলাটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’#
২০ বছর বয়সী নাতিকে এবারই প্রথম দেখলেন দাদি জরিনা বেগম। জীবনে প্রথমবার ছেলের সন্তানকে সামান্য দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিল দাদির। নাতির প্রতি দাদির অগাধ ভালোবাসা দেখে চোখ থেকে পানি না পড়লেও চোখ দুটি ছল ছল করছিল জামালের। এমনিতে তো জীবনে প্রথমবার দেখা তাদের। তারপরও কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে না পারার কষ্টে যেন বারবার মুষড়ে পড়ছিলেন দাদি-নাতি। পাঠক অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, কেন এমন হলো দাদি-নাতির মাঝে?
প্রায় ৪০ বছর পর দেখা হলো দুই ভাইয়ের। একে-অপরকে ছুঁয়ে দেখলেন তারা। হলো কুশলবিনিময়ও। তারপর চিৎকার করে অনেক দিনের জমানো কথা বিনিময় করলেন। আনন্দে-আবেগে হাউ-মাউ করে কাঁদলেনও দুজন। কিন্তু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হলো না তাদের। কেননা, দুজনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
বেড়ার এপাশে (বাংলাদেশে) হরমোহন (৬০)। ওপাশে (ভারতে) প্রহল্লাদ বর্মন (৭০)। একজন এসেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চন্ডিপুর থেকে, অপরজন ভারতের শিলিগুড়ির জলডুম ফাড়াবাড়ি এলাকা থেকে।
ভাই-ভাইয়ে দীর্ঘদিন পর দেখা হলো পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার সুকানি সীমান্তে। কিছুক্ষণ পরপরই দুজনই থেমে থেমে কাঁদলেন। শেষে হরমোহন এ প্রতিবেদককে বললেন, ‘অনেক দিনের পরে দেখা তো, ইচ্ছে করছে–ভাইটাকে বুকে নিই। কিন্তু মরার কাঁটাতরের বেড়া তাও করতে দিলো না।’ওপাশ থেকে প্রহল্লাদ বর্মনও একই কথা বললেন। শেষমেশ দুজন দুজনকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘ভালো থাকিস, ভাই।’
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ও মাগুরমারী এবং তেতুলিয়া উপজেলার সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে রবিবার (১৫ এপ্রিল) বসেছিল দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। ক্ষণিকের জন্য হলেও দীর্ঘদিন পর দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হলেন, বিদায়ের সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এই চার সীমান্তে মিলনমেলা বসে। তবে এবার ভারতের বৈশাখের প্রথম দিন রবিবার এসব সীমান্তে মিলনমেলা বসলো। প্রত্যেকটি সীমান্তে ছিল হাজারও মানুষের উপচে পড়া ঢল।
সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দেশের সাধারণ লোকজন, যারা অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন।
ভারতে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে রবিবার সকাল থেকে সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার চারটি সীমান্ত পয়েন্টে এসে জড়ো হন পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কাঁটাতারের অপরপাশে জড়ো হন জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, চোপরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভারতীয় নাগরিকরাও।
সকাল ১০টা থেকে অমরখানা ও মাগুরমারী এবং সুকানি ও ভুতিপুকুর সীমান্তে এ মিলনমেলা শুরু হয়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষদের দেখতে পেয়ে দর্শনার্থীরা কাঁটাতারের বেড়ার বাঁধা ভুলে যান। বেড়ার ফাঁক গলিয়ে একে-অন্যের হাত ধরেন, কথা বলেন। বিনিময় করেন নানান উপহার। কেউ কেউ আবার কেঁদে ভাসান আবেগে।
বর্ডার গাড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, অমরখানা সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪৩ এর সাবপিলার-৩ থেকে মেইন পিলার-৭৪৪ এর সাবপিলার-২, মাগুরমারী সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪২ এর সাবপিলার-১১ থেকে মেইন পিলার-৭৪২ এর সাব পিলার-১২, সুকানি সীমান্তের মেইন পিলার-৭৪১ এর সাবপিলার-৬ থেকে মেইন পিলার-৭৪১ এর সাবপিলার-৭ এবং ভুতিপুকুর সীমান্তের মেইন পিলার-৭৩৭ এর সাবপিলার-২ থেকে সাবপিলার-৬ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই মিলনমেলা হয়। বিজিবির অমরখানা বিওপির বিপরীতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কুন্দন ও চাউলহাটি বিএসএফ ক্যাম্প, বিজিবির সুকানি বিওপি ক্যাম্পের বিপরীতে বিএসএফের মদনবাড়ি ক্যাম্প, বিজিবির ভুতিপুকুর বিজিবি ক্যাম্পের বিপরীতে বিএসএফের গাটরা ক্যাম্প, বিজিবির মাগুরমারী বিওপির বিপরীতে বিএসএফের চাউলহাটি ও ভোলাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা এই মিলনমেলায় উভয়পাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতের মাটিগাড়ায় থাকা ভাই নিজেন্দ্রনাথ (৬০) ও ভুষেন্দ্রনাথের (৩৫) সঙ্গে দেখা করতে আসা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বোয়ালমারীর রাজেন্দ্রনাথ (৫৫) জানান, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে ওপার বাংলায় থাকা ভাইদের দেখার, খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ পাই। জলপাইগুড়ির কালিবাড়ী পান্ডাপারায় বাচ্চাবালা নামে তার অপর এক বোন থাকেন। তার সঙ্গেও দেখা হয়েছে।
বোদা উপজেলার কাদেরপুর ময়দানদিঘী থেকে আসা ৯০ বছরের প্রসন্ন কুমার ভারতের চোপড়া পথানার দাসপাড়ায় থাকা বোন সনেকার (৪০) সঙ্গে দেখা করেছেন।
পঞ্চগড় শহরের আব্বাস আলী জানান, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছেন। জলপাইগুড়ির ভেলাকোপায় থাকা মামা মোশাররফ হোসেন, শিলিগুড়ির ফুলবাড়ির ভায়রা মোজাফ্ফর হোসেন, জলপাইগুড়িতে থাকা সম্বন্ধী ময়নুল শ্যালিকা লিলির সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে। পঞ্চগড়ের যে কোনও একটি সীমান্তে সরকার যদি সীমান্ত হাট স্থাপন করে, তবে তাদের সঙ্গে দেখা হওয়া ও কথা বলার দূরত্বটা কমবে বলেও জানান তিনি।
একই কথা জানালেন পঞ্চগড় শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকার ১২০ বছরের বৃদ্ধ ফাগু মোহাম্মদ, মডেল হাট এলাকার বাবুল ইসলামও।
তেতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলী, অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান নুরু জানান, পৃথক দুই দেশে বসবাস করলেও হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন, মনে জমে থাকা কথা বিনিময় করেন। স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকে আবেগ ধরে রাখতে পারেন না।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ জানান, নীলফামারী ও পঞ্চগড় বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে পঞ্চগড় সদর ও তেতুলিয়া উপজেলার অমরখানা, ভুতিপুকুরী, সুকানি ও মাগুড়মারী সীমান্তে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে এই মিলনমেলা হয়। দুই দেশের হাজারও মানুষ সীমান্তে সমবেত হন। এবারের মিলনমেলায় বিজিবির ঠাকুরগাঁও সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ শামছুল আরেফীনসহ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল আল হাকিম মো. নওশাদ বলেন, ‘প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে তেতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভুতিপুকুর সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মিলনমেলা হয়ে থাকে। দুই দেশের নাগরিকরা যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায়, এজন্য আমরা বিএসএফ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এই মিলনমেলার আয়োজন করে থাকি। এ বছর উভয় দেশের নাগরিকরা যেন নির্বিঘ্নে দেখাস্বাক্ষাৎ করতে পারে, এজন্য বিজিবির পক্ষ থেকে মেডিক্যাল টিম, স্যালাইন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলনমেলাটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’