কোটালীপাড়া যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহ বধুকে নির্যাতনের অভিযোগ
রনী আহমেদ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে নব বিবাহিতা এক গৃহ বধুকে শারীরিক নির্যাতন করেছে স্বামী ও শশুর বাড়ীর লোকজন। কাকলী বেগম (১৮) নামে ঐ গৃহবধুকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পাশন্ড স্বামী ও শশুর বাড়ীর লোকজনের ভয়ে থানায় মামলা করতে না পারায় গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল এর সংশোধনী আইন ২০০৩ এর ১১ খ/ গ ৩০ ধারায় মামলা করেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল বিচারক মো: দলিল উদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পাশন্ড স্বামী আরমান শেখ লিকচন (২৩) কে দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার জন্য কোটালীপাড়া থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
উপজেলার ০৫ নং রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের সিতাইকুন্ড গ্রামে গত ১৯/০৪/২০১৮ ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগের বিবরণ ও এলাকা বাসীর সূত্রে জানা গেছে উপজেলা ০৬ নং কুশলা ইউনিয়নের ছিদ্দিক তালুকদারের মেয়ে মোসা: কাকলী বেগম (১৮) এর সহিত পাশর্^বর্তী ০৫ নং রাধাগঞ্জ ইউনিয়নে সিতাইকুন্ড গ্রামের আলী আকবর শেখের ছেলে আরমান শেখ লিকচন (২৩) এর সাথে বিগত ২১/১২/২০১৭ ইং তারিখে ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়।
বিবাহের পর থেকে কাকলীর স্বামী আরমান শেখ ও তার মাতা/পিতা ভিকটিমকে তাহার বাবার বাড়ী হতে যৌতুক আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। বিবাহের পর হইতে প্রতি নিয়ত ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা অবস্থার এক পর্যায়ে স্বামী ও শশুর শাশুরী ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ টাকা) যৌতুকের দাবীতে বিগত ২৫/০২/২০১৮ ইং রোজ রবিবার কাকলীকে মারধর করে তার বাবার বাড়ীতে তাড়িয়ে দেয়। অত:পর তাড়িয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোটালীপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা ও কুশলা ইউনিয়নের য়ারম্যান বাদল শেখ সহ গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ১৮/০৩/২০১৮ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদে বসে এক সালিশ মিমাংশা হয়। উক্ত সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরমান শেখ লিকচন ও তাহার পিতা-মাতা সহ আত্মীয় স্বজনেরা কোন দিন আর কোন প্রকার যৌতুক দাবী করিবে না বলে মৌখিক অঙ্গীকার করিয়া কাকলীকে তার শশুর বাড়ীতে নিয়ে যায়। কিছুদিন চুপ চাপ থাকার পরে স্বামী ও শশুর শাশুরী সকলে আবার যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন শুরু করে।
ভিকটিম সংসার করার কথা চিন্তা করে সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে থাকে। অত:পর ১৮/০৪/২০১৮ইং তারিখ রোজ বুধবার রাত্র আনুমানিক ১০:০০ ঘটিকার সময় স্বামী আরমান শেখ ও দেবর আমির চান শেখ ঢাকা থেকে বাড়ী এসে কাকলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে যে, বাবার বাড়ী থেকে টাকা আনতে পারিশ নাই তাহলে তুই এ বাড়ীতে আছিস কেন। তোর বাপের বাড়ীতে গিয়ে এখনি ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা নিয়ে আসবি। ভিকটিম যৌতুকের টাকা আনতে পারবে না বলে জানালে তাকে চর থাপ্পর মারতে শুরু করে ও সাথে সাথে দেবর,শশুর,শাশুড়ী মারতে থাকে এক পর্যায় স্বামী আরমান শেখ লিকচন কাকলী বেগমের তল পেটে লাথি মারলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এর পরেও সবাই তাকে মারতে থাকে। নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন তার চুলের মুঠি ধরে পিছনের বারান্দায় নিয়ে বাহির দিয়ে তালা দিয়ে রাখে। পরের দিন ১৯/০৪/২০১৮ ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭:০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম সু-কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে দেবর আমির চান তাকে দেখে ফেলে। সাথে সাথে বড় ভাই আরমানকে ডাক দেয় শুনে ভিকটিম দৌড়ে বাপের বাড়ীতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরমার শেখ পিছন দিক থেকে ধারাল ছুরি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে, টের পেয়ে কাকলী বেগম একটু ঘুরে গিয়ে মাথা নিচু করলে কোপটি তার হাতে লাগে ও সেখানে প্রচন্ড ভাবে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং রক্ত ঝড়তে থাকে। তার আত্ম চিৎকারে পাশের ঘরের জয়নাল শেখ এবং ভ্যান চালক বাশার দ্রুত দৌড়ে এসে তাকে কোটালীপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে কাকলীর বাবা মো: ছিদ্দিক মিয়া জানান আমার মেয়েকে যারা এভাবে অত্মাচার করেছে মামনীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই। যাতে আর কোন মেয়ের এরকম নির্যাতন সহ্য করতে না হয়। বাড়ীতে না পেয়ে মোবাইল ফোনে আরমান শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইলটি বন্ধ থাকায় তার সাথে কোন প্রকার কথা বলা সম্ভব হয় নাই।