সব

ভারতের হাতে ৮ বছর ধরে ঝুলছে পানি চুক্তি

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Thursday 24th May 2018at 10:41 am
FILED AS: ফোকাস
131 Views

স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনা আট বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত। ফলে হয়নি তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি। এছাড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আরো পাঁচটি নদী সংক্রান্ত আলোচনা।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সব সময় যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পানিমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক দাবি করে আসছে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে ভারত এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রী ওই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

‘ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন’ বিধির তিন নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে ভারত টানা আট বছর ধরে কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ ধরে রেখেছে। অথচ নিয়ম অনুসারে, প্রতিবছর কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা এবং প্রতি বৈঠক শেষে পর্যায়ক্রমে কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা বাংলাদেশ ও ভারতের।

২০১০ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এ পর্যন্ত কূটনৈতিক ও যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতকে ১০টি চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এই ‘বাড়ির পাশের প্রতিবেশী’ কোনো চিঠিরই কোনো ইতিবাচক উত্তর দেয়নি বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

যৌথ নদী কমিশন বিধির পাঁচ নম্বর চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে, ‘কমিশনের সাধারণ সেশন প্রয়োজনীয় সময়ে অনুষ্ঠিত হবে- বছরে সাধারণত চারবার। এর বাইরে যেকোনো এক দেশের সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষাপটে যেকোনো সময় বিশেষ বৈঠক হতে পারে।’

সর্বশেষ জেআরসির বৈঠক হয়েছিল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ২০১০ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ সত্ত্বেও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার আগে মনমোহন সিং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি- বিশেষ করে তিস্তা পানি চুক্তি- সম্পন্ন করার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে ভারতকে ফের অনুরোধ জানাবেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১১ সালে পানি বণ্টন চুক্তির ধারাগুলোর ব্যাপারে একমত হয়েছিল দুই দেশ। বিশ্ব ভারতীতে হাসিনা-মোদি বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির বৈঠক হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে। ওই বৈঠক শেষে মোদি জানান, দ্রুত তিস্তার পানি চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য ‘ভারতের ভেতর সব পক্ষের সঙ্গে’ কথা বলছে তার সরকার এবং দুই সরকারই তাদের (বর্তমান) মেয়াদের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে ওই বছর ৮ এপ্রিল যৌথ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফেনী, মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করতে দুই প্রধানমন্ত্রীই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যে তিস্তা চুক্তি হবে কি না- এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কর্মকর্তারা। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১১ সালে চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হওয়ার পর শেষ মুহূর্তে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে তা থেকে পিছিয়ে যায় ভারত। তাদের দাবি ছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চুক্তির ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন।

২০১০ সালে চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির খসড়া অনুসারে, দুই দেশই তিস্তার পানি ন্যায্য বণ্টনের ব্যাপারে রাজি হয়েছে এবং খড়ার মৌসুমে ২০ শতাংশ পানি ধরে রাখা ছাড়া বাকি সময়ে দুই দেশ সমান হারে (৫০-৫০) পানি পাবে। সে সময় ভারত জানিয়েছিল, তিস্তার আগেই ফেনী নদীর চুক্তি শেষ করতে চায় তারা। বাংলাদেশের দাবি ছিল, দুই চুক্তি একসঙ্গেই স্বাক্ষরিত হবে।

এ ব্যাপারে যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ অংশের সদস্য এম মোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বৈঠকের ব্যাপারে তারা ভারতীয় অংশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। পানি প্রবাহ ও তথ্য-উপাত্ত এবং বন্যা সতর্কতা নিয়েও বিধি অনুসারে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১০ সালের মার্চে নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ে যে বৈঠক হয়, সেটি ছিল ১৯৭২ সালে কমিশন প্রতিষ্ঠার পর ৩৭তম বৈঠক। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে। এরমধ্যে শুধু গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি রয়েছে। প্রতিবছর খড়া মৌসুমে ফারাক্কা বাধে প্রবাহিত পানির পারিমাপ অনুসারে দুই দেশের মধ্যে পানির বণ্টন হয়। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য এই চুক্তি হয় এবং এটি নবায়নযোগ্য।

প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গেও অভিন্ন সাঙ্গু, মাতামুহুরি এবং নাফ নদী রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের তথ্যমতে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে এই অভিন্ন ৫৭টি নদী ছাড়াও আরো ১৬টি আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে।


সর্বশেষ খবর