সংবাদের সাংবাদিক সংঘাতে সাংঘাতিক!
খন্দকার মোজাম্মেল হকঃ একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। এক গ্রামে ছিলেন অবস্থাপন্ন এক গেরস্ত। তবে তার দিনকাল ইদানীং খুব একটা ভালো কাটছিল না। তাই চিন্তা করলেন, বাড়িতে মৌলভি এনে একটু দোয়া-খায়েরের আয়োজন করা দরকার। গিন্নির সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি বের হলেন গ্রামের উত্তরপাড়ার দিকে। সেখানকার হুজুরের সঙ্গে দেখা করে কদমবুচির পর বললেন, হুজুর, কাইল বাদ জোহর আমার বাড়িতে গিয়া একটু দোয়া কইরা আসবেন। দুপুরে একটু খানাপিনারও এন্তেজাম করছি। ভালো, ভালো- হুজুর হাসতে হাসতে দাওয়াত কবুল করলেন। এবার গেরস্ত বললেন, যাই, একটু দক্ষিণপাড়ায় যাইতে হইবো। ওই পাড়ার হুজুররেও দাওয়াতটা দিয়া আসি। এবার হুজুরের মুখে রাজ্যের মেঘ। বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, ওই গরুটারে আবার কইতে যাবা ক্যান! যা-ই হোক, বিদায় নিলেন গেরস্ত। যথারীতি দক্ষিণপাড়ার হুজুরের কাছে গিয়েও একইভাবে দাওয়াত দিলেন। হুজুর আপনার কিন্তু যাইতেই হবে। আচ্ছা-আচ্ছা, যাব- পানের পিক ফেলতে ফেলতে উৎফুল্ল চিত্তে বললেন হুজুর। উত্তরপাড়ার হুজুররেও দাওয়াত দিছি। তিনিও আসবেন। এবার হুজুরের বাজখাঁই গলা- আরে মিয়া, ওই ছাগলটারে আবার কইতে গেছ ক্যান? কোনো জবাব না দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ফিরে এলেন গেরস্ত।
পরদিন বাদ জোহর দুই হুজুরই হাজির। গেরস্ত হন্তদন্ত হয়ে তাদের রিসিভ করে বৈঠকখানায় নিয়ে বসালেন। এরপর দুই হাত কচলাতে কচলাতে দুই মৌলভিকে উদ্দেশ করে বললেন- হুজুর, দোয়া না হয় পরে হবে। আগে খায়া নেন। পরক্ষণেই অন্দরমহল থেকে গেরস্তানির মোলায়েম ডাক, ‘খানা তৈয়ার, হুজুরদের ভেতরে নিয়া আসেন।’ ভেতরের ঘরে দস্তরখানায় বসলেন দুই হুজুর। পর্দার আড়াল থেকে গেরস্ত দুটি গামলা এনে রাখলেন দুই হুজুরের সামনে। অবাক হয়ে দুই হুজুর দেখলেন এক গামলায় খড়, আরেক গামলায় কাঁঠালপাতা।
কৌতূহলী চোখে দুই মৌলভি প্রায় সমস্বরে বলে উঠলেন- ‘এসবের মানে কী!’ এবার মুখ খুললেন গেরস্ত। ‘হুজুর, আপনারা আমাদের মূল মুরব্বি। বিপদে-আপদে আপনারাই তো গ্রামের মা-বাপ। আপনাদের প্রতিটা কথাই আমরা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করি। সেই আপনাদের যখন আমি দাওয়াত দিতে গেলাম, একজন আরেকজনকে বললেন গরু আর ছাগল। কাজেই আপনাদের কথা তো আর অবিশ্বাস করতে পারি না! তাই আপনাদের একজনকে খেতে দিছি খড়-ভুসি, আরেকজনকে কাঁঠালপাতা।
এমন কথা শোনার পর দুই মৌলভি আর কোনো কথাই বলতে পারলেন না। মাথা নিচু করে রইলেন।
গল্পটা লেখার কারণ একটাই। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে লেখাটা টেনেটুনে আরো লম্বা করতে পারতাম। তা হলে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটত নিশ্চিত (ইতিমধ্যেই যা হয়তো ঘটেছেও)। তা না করে শুধু এটুকুই বলতে চাই- সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাদা ছোড়াছুড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের ‘বড় ভাইদের’ অবস্থা সেই গ্রামের উত্তরপাড়া আর দক্ষিণপাড়ার হুজুরদের মতো হবে। কাজেই তাদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ- আমাদের সেই গেরস্তের ভূমিকায় ঠেলে দেবেন না প্লিজ।
https://www.facebook.com/khandoker.mojammelhoque