গাজীপুরের কালীগঞ্জে আগুনে দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু : মামলা দায়ের, ননদ গ্রেফতার
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি ঃগাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে শাশুড়ি এবং ননদদের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে গৃহবধূ খাদিজা বেগমের নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শাশুড়ি ও দুই ননদকে আসামি করে নিহতের ছোট ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১) ধারায় ১২ অক্টোবর শুক্রবার সকালে একটি মামলা (নং ৮) দায়ের করেছেন।
এ মামলায় বিকেলে ননদ সাফিয়া (৩৭)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুবকর মিয়া।
শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম (৫৫), ননদ সাফিয়া বেগম (৩৭) এবং আরেফা (২৫) মিলে ঘরে বেঁধে তিন সন্তানের জননী খাদিজা বেগমের (৩০) গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার মারা যায় খাদিজা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাদিজার স্বামী উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের মৃত মনরউদ্দিনের ছেলে নবীন প্রধান পেশায় রিকসা চালক। তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে বৃষ্টি (১১) স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে, মেঘলা (৯) ও ছেলে রিফাত (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ১৬ বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল করতেতুল গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা বিষয় নিয়ে শাশুড়ি ও দুই ননদ মিলে প্রায়ই নির্যাতন করতো। ননদ সাফিয়া স্বামী নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতো। অপর ননদ আরেফার বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মায়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতেই থাকতো।
গত ৫ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে খাদিজা সঙ্গে শাশুড়ি ও দুই ননদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তারা খাদিজাকে ঘরের মধ্যে বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, তারপর সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে টানা সাত দিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তিনি মারা যান।
প্রতিবেশী মোকতেজা, ইতি ও রাশিদা জানান, ঘটনার পর বৃষ্টি, মেঘলা ও রিফাতের ডাক চিৎকারে এগিয়ে এসে খাজিদাকে উদ্ধার করেন। তবে ওই সময় শাশুড়ি মনোয়ারা, ননদ সাফিয়া ও আরেফা দাঁড়িয়ে ছিল। তারা উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
বক্তারপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আছমত আলী জানান, ঘটনার পর আহত খাজিদা ও তার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শাশুড়ি ও দুই ননদের প্রতি অভিযোগ করেছে।
নিহত গৃহবধূর স্বামী নবীন প্রধান (৪০) শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তার স্ত্রী ঢামেকের বার্ণ ইউনিটে মৃতুবরণ করেন। ময়না তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। ময়না তদন্ত শেষে লাশ পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল করতেতুল গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুবকর মিয়া জানান, নিহতের ভাই সকালে অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।