মাত্র ৭ মিনিটে জীবিত অবস্থায় কেটে কেটে মেরে ফেলা হয়
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ প্রখ্যাত সাংবাদিক সৌদি সমালোচক জামাল খাশোগির হত্যায় একের পর এক বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। সর্বশেষ তাকে খুন করার সময়ের একটি অডিও উদ্ধারের দাবি জানানো হয় তুর্কি থেকে।
সেই অডিও বার্তার বরাত দিয়ে তুর্কি একটি সূত্র জানায়, জামাল খাশোগিকে হত্যা করার জন্য সময় নেয়া মাত্র ৭ মিনিট এবং জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করে তাকে খুন করা হয়।
তুরস্কের ওই সূত্রটি জানায়, খাশোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের কনস্যুল জেনারেলের অফিস থেকে পাশেই একটি পড়ার টেবিলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার এক সাক্ষী সেসময় তার কান্না শুনতে পান।
সূত্রটি জানায়, খাশোগিকে কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করার চেষ্টা করা হয়নি। তাকে খুন করাই ছিল হত্যাকারীদের মূল উদ্দেশ্য এবং তারা তাই করেছেন।
হত্যায় ১৫ সদস্য দলের একজন ছিলেন সৌদি জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক এভিডেন্সের প্রধান সালাহ মুহাম্মদ আল-তুউবিগি। যিনি ঘটনার একদিন আগে ব্যক্তিগত প্লেনে আঙ্কারা পৌঁছান।
খাশোগি হত্যায় মাত্র সাত মিনিট সময় নেওয়া হয় উল্লেখ করে তুরস্কের সূত্রটি জানায়, জীবিত থাকা অবস্থায় গবেষণার টেবিলেই খাশোগির শরীর টুকরো করতে শুরু করেন তুউবিগি। এ সময় তুউবিগি হেডফোনে গান শোনেন, দলের অন্য সদস্যদেরও একই কাজ করতে বলেন।
সূত্র জানায়, রেকর্ডেড অডিওতে তুউবিগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এই কাজ করি তখন গান শুনি। তোমাদেরও তাই করা উচিত’। তুর্কি সংবাদপত্র সাবাহতে তিন মিনিটের ওই অডিওর একটি সংস্করণও প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে এই তুউবিগি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভিক্তিক সংবাদ মাধ্যম গরফফষব বধংঃ বুব-তে বলা হয়, সৌদি আরবের হ্জ্জ চলাকালীন সময় এই তুইবিগি দায়িত্বে ছিলেন। তাকে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে কিভাবে কাজ করবেন জিজ্ঞাসা করা হয়ে জানান, আমরা স্বাভাবিকভাবে যে কাজটি ফরেনসিক অর্থ্যাৎ ময়নাতদন্তের কাজ। কোন ব্যাক্তির মৃত্যু হলে আমরা ৭ মিনিটে তার ময়নাতদন্ত করে দিতে পারবে এবং বলতে পারবো লোকটির কিভাবে মৃত্যু হলো।
আর এই্ তুউবিগি সাংবাদিক খাশোগি হত্যার প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে তুরস্কে সৌদি আরবের প্রখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ ইস্যুতে সৌদির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পোম্পেও।
মঙ্গলবারের (১৬ অক্টোবর) ওই বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নোওয়ার্ট বলেন, খাশোগি ইস্যুতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সৌদি বাদশাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পোম্পেও। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী পোম্পেও খাশোগি ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যান খাশোগি। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। আঙ্কারার দাবি, সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকেই ‘নেই’ হয়ে গেছেন খাশোগি। তাকে সেখানে ‘খুন করা হয়েছে’। তবে রিয়াদ দাবি করছে, কনস্যুলেট থেকে কাজ সেরেই ‘বের হয়ে গেছেন’ খাশোগি।
ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য ওইদিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। সৌদি রাজতন্ত্রের বিরোধিতাকারী খাশোগি ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে ছিলেন।