রাষ্ট্রীয় অনুদানের সিনেমা ‘দেবী’র বিরুদ্ধে আইন ভাঙার অভিযোগ
বিনোদন ডেস্কঃরাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত আলোচিত চলচ্চিত্র ‘দেবী’র বিরুদ্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন না মানার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৩১ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই অভিযোগ করেছে।
প্রজ্ঞার মিডিয়া ক্যাম্পেইনার মেহেদী হাসানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাপকভাবে ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহারের কারণে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র ‘দেবী’ এরই মধ্যে দেশের তামাকবিরোধীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আইন অনুযায়ী ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ হলেও, রাষ্ট্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রে বারবার আনা হয়েছে ধূমপানের দৃশ্য।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সিনেমাটির ফার্স্টলুক পোস্টারে ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহার করা হয়। তবে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে সেটি পরিবর্তন করা হয়েছিল।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫(ঙ) ধারায় সিনেমা, নাটক এবং প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন ব্যাক্তি এই ধারার বিধান লংঘন করলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হবে এবং একই ব্যাক্তি পুনরায় এই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডণীয় হবেন।
আইন অনুসারে, ২০১৩ সালের ০২ মে পরবর্তী যেকোন সময়ে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত সিনেমায় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শন দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অথচ গত ১৯ অক্টোবর ২০১৮ থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেবী সিনেমাটির প্রদর্শন শুরু হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের এই সুস্পষ্ট নির্দেশনা মানা হচ্ছেনা। শুধু তাই নয়, সিনেমাটির পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ অক্টোবর যে ট্রেইলার মুক্তি দেয়া হয়, তাতেও আইন মানা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়- সিনেমা, টেলিভিশন এবং অন্যান্য গণমাধ্যম ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকপণ্য ব্যবহারের অভ্যাসকে উৎসাহিত করার নজির বিশ্বে কম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিগারেটকে পৌরুষ, গ্ল্যামার, তীক্ষ্ন বুদ্ধি ইত্যাদি কাঙ্ক্ষিত গুণাবলীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে দেখানো হয়।
এর একটি উল্লেখযোগ্য নজির হল গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসের ‘মার্লবোরো ম্যান’ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। সিগারেটের সঙ্গে পৌরুষ, স্বাধীনতা এবং অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত গুণের মিশ্রণের এই কৌশলে মাত্র দুই বছরে মার্লবোরো সিগারেটের বিক্রি বেড়ে যায় ৩০০ গুণেরও বেশি।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট ‘মিসির আলি’ বাংলাদেশে কিশোর ও তরুণ পাঠকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এক জনপ্রিয় চরিত্র। একাধারে নিষ্ঠাবান পাঠক, বিজ্ঞানমনস্ক পরিশ্রমী গবেষক, নিখুঁত পর্যবেক্ষক এবং অনন্য রসবোধের অধিকারী এই মিসির আলি। দেবী সিনেমায় মিসির আলির যেমন চিত্রায়ন হয়েছে, তেমনটা চালু থাকলে মিসির আলির চরিত্র অনুসরণ করা অসংখ্য কিশোর ও তরুণভক্তরা ধূমপানকেও উপরিল্লিখিত গুণাবলীর একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিতে পারেন, যা সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলবে।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত জাতি গড়ার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশের এখনই দরকার এই বিষয়ে সচেতন হওয়া।
এদিকে এই অভিযোগের বিষয়ে ‘দেবী’ ছবির পরিচালক অনম বিশ্বাস বলেন, ‘আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এই প্রথম জানলাম। আমরা দেশ ও দেশের আইনের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল। আমার জানামতে সিনেমায় কোনো আইন অমান্য করিনি আমরা। যদি করেও থাকি তবে সেটি বোঝার চেষ্টা করব।
তাছাড়া এই সিনেমার উদ্দেশ্য ধুমপানের প্রচার করা নয়, বিনোদনের জন্যই বানানো হয়েছে। যেহেতু
সাহিত্যের জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলী ঘনঘন ধুমপান করেন তাই সিনেমাতেও তার ধুমপানের দৃশ্য রাখতে হয়েছে। আর ধুমপানের প্রতিটি দৃশ্যের উপরই লিখে দেয়া হয়েছে ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’। ’
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা দাবি করেছে ধুমপানের দৃশ্য এড়িয়েও মিসির আলীকে সিনেমায় দেখানো যেত। এর প্রেক্ষিতে অনম বিশ্বাস বলেন, ‘হয়তো সেটা করা যেত। ধুমপান মিসির আলীর চারিত্রিক একটি বৈশিষ্ট্য মাত্র। সামগ্রিক পরিচয় নয়। কিন্তু ধুমপান ছাড়া মিসির আলীকে কেমন দেখাতো, দর্শক কতোটা গ্রহণ করতো সেটাও ভাবনার বিষয়।’
সূত্র: জাগো নিউজ।