দেশে মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশে আরও একটি নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশে মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশে আরও একটি নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। টাওয়ার শেয়ারিং কার্যকর হলে টাওয়ারের জন্য মোবাইল অপারেটরসমূহকে (কোম্পানি) বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না বরং এর মাধ্যমে মোবাইলের মানসম্পন্ন ও উন্নত সেবা খাতে অপারেটরদের জন্য বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গুণগতমানের মোবাইল সেবা প্রদানে জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বিটিআরসি মিলনায়তনে চার ( ০৪) টি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদান উপলক্ষে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক বক্তৃতা করেন।
জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করেও বাংলাদেশ ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবে বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে আসীন। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সদস্য পদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ডিজিটাল বিপ্লবের বীজ বপন করেছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোবাইলের মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করে মোবাইলের লাইসেন্স উন্মুক্ত করে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিপ্লব বিকশিত করেছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত প্রায় দশ বছরে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বের যোগ্যতায় আজ উপনীত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪-জি এবং এমএনপি চালু করা হয়েছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। তিনি বলেন মোবাইল এখন একটা প্রযুক্তিই নয়, এটি একটি ব্যক্তির পরিচিত হিসেবে চিহ্নিত। প্রযুক্তির নতুন ভার্সন ৫-জি ইতোমধ্যে আমরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। যার গতি হবে সেকেন্ডে ২০ জিবিপিএস। এর ফলে যন্ত্রের সাথে যন্ত্রের কথা হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ এখন রুপকল্প ২০২১ কিংবা ২০৪১ সালে উন্নত জাতি বিনির্মাণের স্বপ্নই দেখে না, ২১০০ সালের মধ্যে বদ্বীপ পরীকল্পনা বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বই পারে, জাতিকে সমৃদ্ধির ঠিকানায় পৌছাতে, তিনি উল্লেখ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, টাওয়ার শেয়ারিং ও ৪জি চালুর কার্যক্রম গত দশ মাসের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফসল। তিনি বলেন, গত দশ বছরে তথ্য প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে এ খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। বাংলাদেশের এগিয়ে দিতে তিনি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশ প্রেমের মহান ব্রত নিয়ে কাজ করার আহবান জানান।
মন্ত্রী অনুমোদিত চার (০৪) প্রতিষ্ঠান, ইডটকো বাংলাদেশ কো: লিমিডেট, সামিট পাওয়ার লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এবিহ হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড কর্তৃপক্ষের হাতে এ লাইসেন্স হস্তান্তর করেন।
ইডকো এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটি কান্ট্রি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল চৌধুরী, সামিট টাওয়ারস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরিফ আল ইসলাম, এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান মোল্লা এবং কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান করিম লাইসেন্সসমূহ গ্রহন করেন।
মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন , রক্ষাণাবেক্ষণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব এর বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মান সম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে এ লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের ফলে মোবাইল টাওয়ার লাইসেন্স রোল আউট এর উপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো কোন নতুন টাওয়ার স্থাপন করতে পারবে না। এছাড়া এক অপারেটর আরেক অপারেটরের নিকট আর টাওয়ার ভাড়া দিতে পারবে না। কিন্তুু লাইসেন্স পাওয়া টাওয়ার কোম্পানীর কাছে তাদের টাওয়ার বিক্রি করতে পারবে।
লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রথম বছরে প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর জেলা শহর, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ উপজেলা, চতুর্থ বছর ৬০ শতাংশ উপজেলা ও পঞ্চম বছর দেশের সব উপজেলায় টাওয়ার সেবা প্রদান করতে হবে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্সের জন্য ২৫ কোটি টাকা দিয়ে এ লাইসেন্স নিতে হবে, বার্ষিক নবায়ন ফি থাকবে ৫ কোটি টাকা এবং ২য় বছর থেকে বিটিআরসির সাথে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জাম দিতে হবে ১% হারে। লাইসেন্সের মেয়াদ কাল ১৫ বছর।