বন্ধ লিভার প্রতিস্থাপন, মৃত্যুর কাছে হার মানছেন অধিকাংশ রোগী
আমারবাংলা ডেস্কঃ দীর্ঘ ৭ বছর ধরে দেশে লিভার প্রতিস্থাপন বন্ধ থাকায় রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে। তবে বিদেশে সামগ্রিক খরচ ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা হওয়ায় অধিকাংশ ভুক্তভোগীই শেষ পর্যন্ত হার মানছেন মৃত্যুর কাছে। দেশে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হলে মাত্র ১৫ লাখ টাকার মধ্যেই সম্ভব বলে মনে করছেন লিভার বিশেষজ্ঞরা। এদিকে খুব শিগগিরই লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করার কথা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্রনিক লিভার ডিজিজে আক্রান্ত বাসন্তি বালা মজুমদার চিকিৎসা নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুস্থ জীবনে ফিরতে লিভার প্রতিস্থাপন একমাত্র বিকল্প হলেও দেশের বাইরে প্রতিস্থাপনের সামর্থ্য না থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় বাসন্তি বালার পরিবার।
তারা বলেন, দেশের বাইরে আমাদের পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। সরকার যদি দ্রুত এটা করার উদ্যোগ নেই তাহলে আমাদের মাকে আমরা বাঁচাতে পারবো।
গেল বছর সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করেছেন মাহফুজুর রহমান। প্রতিস্থাপন ব্যয় ৫০ লাখের সাথে আনুষঙ্গিক ব্যয় হয়েছে আরো ৫০ লাখ। তিনি বলেন, ৫ মাসে ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমি বাংলাদেশে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি।
সাশ্রয়ী খরচে লিভার প্রতিস্থাপন পুনরায় শুরু না হলে চেয়ে চেয়ে ভুক্তভোগীর মৃত্যু দেখা ছাড়া কোন উপায় নেই বলে অভিযোগ অসহায় রোগী ও স্বজনদের।
তারা বলেন, দেশে হলে মানুষের কাছে হাত পেতে হলেও করা সম্ভব। কিন্তু দেশের বাইরে কোন ভাবেই সম্ভব না।
৭ বছরের ব্যবধানে ট্রান্সপ্লান্টের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক, সহায়ক জনশক্তি ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের আদলেই এখন দেশে প্রতিস্থাপন সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিএসএমএমইউ’র সহকারী অধ্যাপক ডা মো সাইফ উদ্দীন বলেন, ‘সবাই আমরা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। আমি নিজেই দেড়শোর বেশি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছি। আমরা আশা করি সফল ভাবে দেশে ট্রান্সপ্ল্যানট করতে সফল হবো।’
ট্রান্সপ্লান্ট বন্ধ থাকায় সামর্থবানরা ৪/৫ গুণ বেশি খরচে লিভার প্রতিস্থাপন করাতে সম্ভব হলেও অসহায়রা মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন অহরহই। তবে আশার খবর হলো, আগামি বছরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মত সরকারী উদ্যোগে লিভার প্রতিস্থাপনের জোর প্রস্তুতি চলছে।
বিএসএমএমইউ’র লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান বলেন, ‘ডিসেম্বরের জানুয়ারির ভিতর শুরু করতে পারবো। শতভাগ রুগী দেশের বাইরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোগান্তিও রয়েছে।’
২০১০ ও ১১ সালে বেসরকারিভাবে দেশে মোট ৪ টি লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছিলো। এরপর বেসরকারিতে অত্যধিক খরচ, আইনি জটিলতা, সরকারীভাবে উদ্যোগ ও সমন্বয়ের অভাবসহ নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় লিভার প্রতিস্থাপন।
সূত্র: সময় সংবাদ।