সব

গাজীপুরে সন্ত্রাসী স্বপ্নার নিকট অসহায় অনেকে

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Monday 26th November 2018at 8:03 pm
90 Views

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান ঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্বপ্না নামে এক নারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ায় অত্যাচার, নির্যাতন, ভাংচুর ও লুটপাট করে সাবেক নৌ-কর্মকর্তার জমি জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অমানবিক ওই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চন্দ্রা (চান্দরা) মোল্লাপাড়া এলাকায়। বর্তমানে ওই দখলবাজ সপ্নার দখলবাজী, নির্যাতন ও অত্যাচার ভয়ে আতঙ্কিত এলাকার সাধারন মানুষ। ‘স্বপ্না’ নামটি জনমনে এখন রীতিমত এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দখলবাজ ‘স্বপ্না’ হলেন, উপজেলার চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ জোড়াপাম্প এলাকার মৃত- আঃ রব মিয়ার মেয়ে। তার এ অত্যাচার, নির্যাতন ও ভুমি দখলবাজিতে সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছেন তার ভাই এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ও মাদক মামলাসহ একাধিক মামলার আসামী বাদল ওরফে বাবুল ও তার স্বামী লুৎফর।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে এরই মধে পৌরবাসীর কাছে দ্বিতীয় জসিম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে স্বপ্না। আদালতের আদেশও যেন মানতে নারাজ স্বপ্না। আর এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়েই। ফলে স্বপ্নার নির্যাতনে গৃহহীন অসহায় হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক নৌ-কর্মকর্তা মোঃ কফিল উদ্দিন ও তার পরিবার।

একপর্যায়ে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মোল্লা পাড়া এলাকার সাবেক ওই নৌ-কর্মকর্তা তার অসহায় পরিবার ও স্বপ্নার হাত থেকে জমি দখল ঠেকাতে আদালতে মামলা করে। পরবর্তীতে আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং আদালতের নির্দেশ ছাড়া ওই জমিতে কোন প্রকার কাজ না করতে নির্দেশ প্রদান করে। এরপর আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই স্বপ্না ও তার লোকজন ওই জমিতে বাড়ি-ঘর নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কোর্টের ১৪৪ ধারা জারিকৃত নোটিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ।

বাদীর ভাষ্যমতে বর্তমানে থানা পুলিশের কাছে বিচার চাইতে যাওয়া মানে আরও বিপদে পড়া। কারণ অসহায়ের কোন আইন বা বিচার নেই, যা আছে তাহলো আপনি বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে যাবেন অভিযোগ দিতে লাগবে টাকা, ঘটনাস্থলে পুলিশকে নিতে হলে টাকা, আপনার পক্ষে বা সঠিক রিপোর্ট করাতে টাকা। এরপর বিবাদীর কাছে যাবে তার সাথে চুক্তি করে খাবে টাকা। মোট কথা এখন আর পুলিশ প্রশাসনের কাছে গিয়ে লাভ নেই। তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া মানে তাদের ধান্দা করে টাকা কামানোর পথ খুলে দেওয়া। বাদী সন্ত্রাসী অত্যাচারে গৃহহীন হয়ে বিপদগ্রস্ত হওয়ায় ছুটে যায় থানা পুলিশের কাছে। তাদের হস্তক্ষেপে বা আশ্রয়ে বিপদমুক্ত হওয়ার আশায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহারা অসহায় পরিবারটি তাদের প্রতি নির্যাতনের বিচারতো পায়ইনি উল্টো পুলিশের সহযোগীতা নিয়েই আদালতের নিশেধাজ্ঞা অমান্য করে মামলার বিবাদী দস্যু স্বপ্না দাপটের সাথেই এখনও তার কাজকর্ম সে করেই যাচ্ছে।

ঘটনাসূত্রে জানাযায়, এই দস্যু সপ্না কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সাধারণ জনগণের আতঙ্ক শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘মূচি জসিমের জমি দখল বাণিজ্যের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘মূচি জসিম মারা যাওয়ার পর এখন জমি দখল বাণিজ্যের আরেক নাম ‘দস্যু সপ্না’র উদয় হচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। কারণ স্বপ্না জসিমেরই দূসর বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকে। স্বপ্না নিজের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একটি পদ ট্রাম কার্ড হিসেবে লুফে নিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন দলের ছোট বড় অনেক নেতাকর্মীর দুয়ারে।

মামলার বিবরণ এবং সাবেক নৌ-কর্মকর্তা মোঃ কফিল উদ্দিনের স্ত্রী রেশমী বেগম সাংবাদিকদের জানান, বিয়ের পর বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ৬ শতাংশ রেকর্ড ভুক্ত জমির মালিক হইয়া ২০০২ সালে ঘর-বাড়ি তৈরি করে ভোগ দখলে থেকে দীর্ঘদিন যাবত শান্তিপূর্ন ভাবে বসবাস করে আসছিল। এদিকে তার ওই জমির পাশেই একটি শাল বাগান (গজারি বাগান) রয়েছে। পরবর্তীতে সে তার বাড়ির পাশে থাকা ওই শাল বাগানের সরকারি উপকারভূগি বা বাগান রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্ব পান। ওই সময় ওই শাল বাগানের আশপাশে তেমন কোন লোকজনের বসবাসও ছিলনা। সময়ের সাথে সাথে ওই বাগানের আশপাশে অনেক বসতবাড়ি গড়ে উঠতে থাকে। একপর্যায়ে ওই বাগানের নাম “রেশমির টেক” হিসেবে বেশ পরিচিত হয়। এর মধ্যে রেশমি তার রেকর্ডীয় সম্পত্তিসহ ওই বাগানের কিছু অংশে গাছপালা রোপন করে এবং ৩টি টিন শেট ঘর করে ১০টি রুম ভাড়া দিয়ে আসছিল।

এমনতাবস্তায় ২০১০ সালের দিকে স্বপ্না নামের এক নারী রেশমির জমির পাশেই একটি জমি ক্রয় করে। এরপর থেকে স্বপ্নার নজর পরে রেশমির বাড়ি ও শাল বাগানের উপর। স্বপ্না বিভিন্ন সময় তার ভাই এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বাদল ওরফে বাবুল ও স্বপ্নার স্বামী লুৎফরকে দিয়ে বিভিন্ন সময়ে রেশমীকে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলে এবং তার ভাড়াটিয়াদের ওই বাড়ি রুম ছেড়ে দিতে ভয়ভীতি ও খুন জখম করার হুমকি প্রদান করতে থাকে।

এরই একপর্যায়ে, চলতি বছরের আগষ্ট মাসের ১৬ তারিখে আনুমানিক রাত দেড় টার দিকে স্বপ্না, স্বপ্নার স্বামী লুৎফর এবং স্বপ্নার ভাই বাদলসহ আরও ৩/৪ জন অস্ত্র ধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে রেশমীর ভাড়াটিয়ার রুমের দরজা ভেঙ্গে প্রায় ৯৭ হাজার টাকা মুল্যের স্বর্নের গহনাসহ নগদ ১লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় ওই ভাড়াটিয়া তাদের লুটপাটে বাধা দিলে ও ডাকচিৎকার করলে তারা তাকে এলোপাথাড়ী ভাবে মারধর করে। পরে কাউকে কিছু বললে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায় স্বপ্না বাহিনী।

এরপরের দিন আবারো আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে স্বপ্না, তার স্বামী ও ভাইসহ ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ যোগে এসে প্রথমে আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের দ্রুত সড়ে যাওয়ার জন্য এলোপাথাড়ী ভাবে মারধর করতে থাকে। পরে জীবন বাচাতে বাড়ি ঘরের সমস্ত কিছু ফেলে অন্যত্র চলে যায় ভাড়াটিয়ারা। এসময় স্বপ্না বাহিনী রেশমি ও তার ভাড়াটিয়াদের ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুরসহ সমস্ত মুল্যবান মালামাল লুটপাট করে। পরে রেশমির বসবাসের তিনটি ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সমস্ত মালামাল ট্রাক ও পিকআপে ভরে নিয়ে যায় এবং রেশমির জমির দলিলপত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয় এবং পূনরায় বাড়ির আশেপাশে আসার চেষ্টা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে চলে যায় তারা।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী রেশমি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টাসহ থানায় মামলা দায়ের করার চেষ্টা করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অসহায় রেশমী স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সমাধান না পেয়ে দ্বারস্ত হন আদালতের। এরপর আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং কোর্টের নির্দেশ ব্যতিত সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে নোটিশ প্রদান করে। এরপর স্বপ্না আদালতের ওই আদেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতের আধারে বাদীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দাপটের সঙ্গে ঘর-বাড়ি নির্মানের মাধ্যমে ওই জমি দখল করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযুক্ত স্বপ্না এ বিষয়ে জানান, আমি আমার ক্রয়কৃত জায়গায় বাড়ি-ঘর নির্মান করছি। রেশমীর বাড়ি-ঘর আমি ভাঙ্গিনি। আমাকে ফাসানোর জন্য সে নিজেই নিজের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে এমন কথাবার্তা বলছে।

এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার এর নির্দেশে সার্কেল এসপি (কালিয়াকৈর) সরেজমিনে ওই জমি পরিদর্শন করে অসহায় পরিবারকে প্রাথমিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়।

এবিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, এ ঘটানায় কোর্ট থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে দুই পক্ষেকে ওই জমির মধ্যে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নিদের্শ দেয়া আছে। এটা ভঙ্গ করে যদি কেউ ওই জমিতে কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান ওই এসআই।

কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবু জাফর ক্যামারার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, তবে এবিষয়ে তিনি এক আলোচনায় জানান, চন্দ্রার রেশমির টেক এলাকায় রেশমির সাথে স্বপ্নার জমি নিয়ে একটি অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বর্তমানে জমির উপরে দুই পক্ষকে কোর্ট থেকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে।


সর্বশেষ খবর