মা আমি মুক্তি পেয়েছি : আরিফ
স্টাফ রিপোর্টারঃ মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলেন আরিফুল হক চৌধুরী। বললেন, ‘মা আমি মুক্তি পেয়েছি। ভালো আছি। কোনো চিন্তা করো না। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হলেই বাড়ি ফিরে যাবো।’ এভাবেই কেটে গেল প্রায় ৫ মিনিট। হাসপাতালের পুরো কক্ষেই পিনপতন নীরবতা। আবেগাপ্লুত মা ও ছেলে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
এরপর আরিফুল হক চৌধুরী মা আমিনা খাতুনকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। এ সময় তার চোখ দিয়ে ঝরছিলো অশ্রু। ছেলেকে কাছে পেয়ে আমেনা খাতুনও যেনো ‘প্রাণ’ ফিরে পেলেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। ছেলে আরিফের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু তেমন কিছু বলতে পারলেন না।
আরিফুল হক চৌধুরী মায়ের মাথার কাছে রাখা চেয়ারে বসে কথা বললেন। এ সময় ডাক্তার ডেকে আনলেন। জানতে চাইলেন মায়ের শারীরিক বর্তমান অবস্থা। বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে ডাক্তারকে প্রশ্ন করেন। ডাক্তার কোনো সুখবর দিতে পারলেন না। এরপরও আরিফুল হক চৌধুরী তাড়া দিয়ে বললেন, যত দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারেন সে ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য।
সিলেটের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক এখন সিলেটে। দীর্ঘ ১৫ মাস পর মুক্তি পেয়েই তিনি ছুটে আসেন নিজ শহরে। প্রথমেই দেখা করেন মায়ের সঙ্গে। এই দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন মা ও ছেলে দুইজনই। তাদের দেখা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ নন আরিফুল হক চৌধুরী নিজেও। নিজে নিজে হাঁটতে পারেন না।
অন্যের সহযোগিতা নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে তাকে। এ কারণে মায়ের সঙ্গে দেখা করার পরপরই তাকে নিয়ে আসা হয় ৫০১ নম্বর কেবিনে। সেখানে ডাক্তাররা আরিফুল হক চৌধুরীর চেকআপ করেন। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ সব ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর তাকে ওই কক্ষেই চিকিৎসাধীন রাখা হয়। তবে, ডাক্তারের চেকআপের পর কিছুক্ষণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি জামিন পাওয়ায় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আমি জামিন পেয়ে মাকে দেখতে পেরেছি এ কারণে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আর যারা তাদের জন্য দোয়া করেছেন তাদের কাছেও কৃতজ্ঞতা জানান।’ আরিফ বলেন, ‘এই শহরে মানুষের কাছে আমি কেবল দোয়া চাই।
আমার মা গুরুতর অসুস্থ। আমি নিজেও অসুস্থ। সবার দোয়া ও আল্লাহর ইচ্ছায় মা ও আমি সুস্থ হয়ে উঠতে চাই।’ এর বেশি কিছু বলেননি আরিফুল হক চৌধুরী। কথা বলার সময় বার বার তার গলা জড়িয়ে আসছিলো। আরিফুল হক চৌধুরীর পাশেই বসা ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী এই নগরের মেয়র। তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্র তার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এই নগরবাসীর দোয়ায় সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আরিফুল হক চৌধুরী সুস্থ ভাবেই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। এবং তিনি নগরবাসীর সেবা করতে পারবেন।’ এ সময় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও আরিফুল হক চৌধুরীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন।
গত সোমবার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকা আরিফুল হক চৌধুরী মুক্তি পান। তিনি ঢাকা মেডিকেলের তৃতীয় তলার ৩৭ নম্বর কক্ষে কারা হেফাজতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু জামিন পাওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ তার দরোজার সামনে থেকে কারারক্ষীদের তুলে নিয়ে যায়। এরপর রাতে আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের চেম্বারে যান।
সেখানে গিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে সিলেট যাওয়ার অনুমতি চান। এ সময় ডাক্তাররা তাকে তিন দিনের জন্য সিলেটে যাওয়ার অনুমতি দেন।
ঢাকায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, ডাক্তারের অনুমতি পাওয়ার পর রাত ১২টার দিকে অত্যাধুনিক একটি এম্বুলেন্সযোগে আরিফুল হক চৌধুরীকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা আজমল বখত সাদেক, ছাত্রদল নেতা আব্দুর রকিব তাকে এম্বুলেন্সযোগে সিলেটে নিয়ে আসেন। এরপর সিলেটে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে নয়াসড়কস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে যান আরিফুল। আরিফ হাসপাতালে আসছেন এ খবরে সকাল থেকে হাসপাতাল এলাকায় ভিড় করেন নেতাকর্মীরা।
সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন, সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা মঈনুদ্দিন সোহেল, কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল সহ সিনিয়র নেতারা হাসপাতালে ভিড় করেন।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে থাকায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার পরিবার। মা আমেনা খাতুন অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাশুড়ির শারীরিক অবস্থা শোচনীয় থাকায় স্বামীকে সিলেট আনতে ঢাকা যাননি শ্যামা হক চৌধুরী। শাশুড়ির পাশেই ছিলেন।সূত্র- মানবজমিন,