‘নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক প্রমাণ করুন’
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক সাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মাহফুজ আনাম ও বাহাউদ্দীনসহ সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তা না হলে মামলা দিয়ে হয়রানি, জেলে আটকে রাখা এবং গণমাধ্যম বন্ধ করার জন্য সাংবাদিক সমাজের কাছে সরকার গণমাধ্যমের শত্রুহিসেবে বিবেচিত হবেন।
আজ মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থিত ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র যৌথ উদ্যোগে শওকত মাহমুদ ও মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেয়া, সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিকের খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার, নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের দাবীতে এ সাংবাদিক সাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয় নিয়ে আবার কোন চক্রান্ত করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে নেতারা বলেন, দালালীর পথ পরিহার করে এখনও যারা ন্যায়ের পথে ফিরেন নি তারা যদি নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালান তা হলে সাংবাদিক সমাজ দাতভাঙ্গা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। যে কোন ধরনের ঘৃণ্য অপচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা হবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজে মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সহ-সভাপতি সৈয়দ আলী আসফার, কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসীন, সাংবাদিক নেতা জাকির হোসেন, আবদুস সেলিম, কবি কামার ফরিদ, শামসুল হক বসুনিয়া, সাখাওয়াত ইবনে মইন চৌধুরী, জসিম মেহেদী, ডি.এম. আমিরুল ইসলাম অমর, খন্দকার আলমগীর হোসেন, সরদার শাহাদাত হোসেন, মো. বোরহান উদ্দিন, মতিউর রহমান সরদার, জেসমিন জুঁই, দেওয়ান মাকসুদা প্রমুখ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, বীরের বেশে সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলন সংগ্রামে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি ততদিন থাকব। আমাদের আন্দোলন চলছে এবং যতদিন আমাদের দাবি আদায় না হবে ততদিন চলবে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ২৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে, এখন একটা খুনেরও বিচার হয়নি। দিনদিন সাংবাদিকদের বেকারত্বের যন্ত্রণা বাড়ছে। তিনি বলেন, এই ইউনিয়ন নিয়ে এখন পর্যন্ত যারা চক্রান্ত করছে তাদের সাথে সময়মত বোঝাপড়া হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার শওকত মাহমুদ ও মাহমুদুর রহমানের ওপর সীমাহীন জুলুম করছে। বিনা অপরাধে তাদের জেলে বন্দি করে রেখেছে। শওকত মাহমুদ সাংবাদিকদের নির্বাচিত নেতা। তাকে যেভাবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় মাসের পর মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে ডিভিশন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও তাকে একটি রাজনৈতিক মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করে সরকার তার প্রতি চরম জুলুম করছে।
বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসক্লাব কর্র্তৃপক্ষের কাছে ইউনিয়ন কার্যালয় সিল করে দেয়ার প্রস্তাব করেছেন এবং তা না হলে সরকার সমর্থক ইউনিয়নকে আমাদের অফিসটি নিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেছেন তাদের জন্য আমাদের করুণা হচ্ছে। আমরা লজ্জাবোধ করছি যে, এ ধরণের লোকদের আমরা একদিন ভোট দিয়ে প্রেস ক্লাবের ও ইউনিয়নের নেতা বানিয়েছি। এ ধরণের ঘৃণ্য তৎপরতার জন্য ভবিষ্যতে তাদের কঠিন জবাব দেয়া হবে। সাংবাদিক সমাজ তাদের ক্ষমা করবে না। এখনও সময় আছে ভুল স্বীকার করে সঠিক পথে আসুন। আমাদের দরজা খোলা আছে।
তিনি আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান ও শওকত মাহমুদকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সিরিজ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ইনকিলাম সম্পাদক এম এম এম বাহাউদ্দীনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে তাকে গ্রেফতারের চক্রান্ত চলছে। সরকার যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাহে এ পথ থেকে সরে আসতে হবে।
সবাইকে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বেঈমান, মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতকদের বিচার এই বাংলার মাটিতে একদিন হবেই। অপরাধ করে কেউ চিরস্থায়ী হতে পারেনি। আজ আমাদের ইউনিয়ন নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে তারাও চিরস্থায়ী হতে পারবে না।
তিনি অবিলম্বে শওকত মাহমুদ ও মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে তীব্র আন্দোলোনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।