সব

১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 26th February 2019at 11:13 pm
83 Views

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ ২০১০ সালে ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেওয়া ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। পরে ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে রুলও জারি করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছেন, দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী পরিশ্রম করলেও আমলারা একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে আমলাদের অবহেলা আছে আবার ব্যবসায়ীদেরও আছে। পুরাতন ঢাকা নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা পৃথক চারটি রিট আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ, কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণসহ কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকের্টে চারটি রিট দায়ের করা হয়।

রিটে ২০১০ সালে রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পৃথক রিট দায়েরকারী হলেন-আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ, নুর মুহাম্মদ আজমী ও খন্দকার কাওসার, জেড আই খান পান্না এবং পুরাতন ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ মিয়া।

আদালতে মঙ্গলবার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও মো. রিয়াজ উদ্দিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাগুফতা তাবাসসুম ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।

অন্যদিকে রাস্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
শুনানির শুরুতেই আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন, সকল কেমিক্যাল গোডাউন ঢাকার বাইরে স্থানান্তর ও ক্ষতিগ্রস্থ্যদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার আবেদন করেন।

এরপর ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলও তার রিটের শুনানিতে ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আদালতে নির্দেশনা চান। তখন আদালত বলেন, ‘ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে তো ৮০ শতাংশ দূর্ঘটনা সমাধান করা যায়।’

এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না তার আবেদনের শুনানিতে বলেন, এমন শহরে বসবাস করছি যেখানে হাঁটা যায়না, মানুষ মারা গেলে লাশ নেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না, এমনকি মানুষের কবর দেওয়ারও জায়গা পাওয়া যায় না। তাই আমাদের আবেদন হলো, আগামী ২৫ বছরের মধ্যেও যেন এ শহরের মধ্যে কোন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ না দেওয়া হয়।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সরকার তো বসে নেই। তারা কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছেন। তবে আসল কথা হলো পুরো শহরের জন্য একটি মাস্টার প্লান দরকার। প্রতিটি কল-কারখানায় সেফটি জোন থাকতে হবে, প্রয়োজনমত জায়গা থাকতে হবে।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি শুনানিতে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।

ক্ষতিপুরণের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এটা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে হাইকোর্ট তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে বলে মত প্রকাশ করেন।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ দুর্ঘটনার জন্য সরকার তো দায়ী না। পাঁচ লাখ টাকা বেশি হয়ে যাবে। পরে বিষয়টির মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলাপের পরামর্শ দেন।

পরে এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ১৭ দফা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করে একশ কমিটি করেও কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, পরিশ্রম করছেন। অথচ নিমতলীর ঘটনার পর আমলারা এত বছরেও একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

পরে হাইকোর্ট তিনটি রিট আবেদন মুলতবি রেখে একটি রিটের ওপর রুল জারি করেন। রুলে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন কেন অতি দ্রুত অপসারণ করা হবে না এবং নিমতলীর ঘটনায় তদন্ত কমিটির দেওয়া ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মানুষের জান মালের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যমান আইন যথাযোপযুক্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বিবাদীদের নিষ্ফ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানাতে বলা হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্নিষ্ট বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে হবে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকা চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনা ৬৭ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক। এখনও বেশ ক’জন আশংকাজনক অবস্থায় হাসাপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১ নবাবকাটরায় পাঁচতলা বাড়িতে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এতে ১২৩ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় কয়েক শ’ মানুষ। তখন কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন থেকেই ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।

ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যাযের কমিটি পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণসহ ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, কিন্ত সময়ের পরিক্রমায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফের অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।


সর্বশেষ খবর