মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ উন্নয়্ন সংশ্লিস্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি”
মোঃ সাখাওয়াত হোসেনঃ গত ৮ই মার্চ,২০১৯ ইং তারিখে কালের কন্ঠের অনলাইন সংস্করনে প্রকাশিত সংবাদ ঠিকাদারের হামলায় উপজেলা প্রকৌশলী আহত” সংবাদটি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় দৃষ্টি আকর্ষন করতঃ কিছু মতামত তুলে ধরছি।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী নন পারফরমেন্স(NON-PERFORMANCE) ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করার অপরাধে সংশ্লিস্ট প্রকৌশলীকে ঠিকাদার প্রকাশ্যে পরিচয় প্রকাশ করে রাজধানিতে হত্যা চেষ্টায় বেদম পেটাল। সংবাদটি ‘৭১ টিভিতে স্ক্রল হলো। কিন্তু কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়া এমনকি প্রতিবাদ করার প্রয়োজন বোধ করলো না। একসময় খবরটি পুরনো হয়ে অনেক খবরের ভীড়ে হারিয়ে যাবে এবং আবারো একই ঘটনা পুনরায় ঘটবে, এটাই হয়তো দেশের সার্বিক চিত্র। কিন্তু খবরটি একজন ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীর বিবাদ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতীয়ভাবে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এর একটি বড় অন্তরায় হিসাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন দেশের টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্য়মাত্রা অর্জনে । কিন্তু যে দেশের ঠিকাদার ৯ মাসের মধ্যে রাস্তা তৈরি ও মেরামতের কথা থাকলেও তা ৩ বছরের মধ্যেও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে নাগরিক ভোগান্তি বাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজের অগ্রগতি না করে ব্যবসা চলমান রাখতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কে দেশের প্রচলিত প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করার কারনে প্রকৌশলীকে পেটাতে পারে এবং দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কিংবা সরকার নির্বিকার থাকতে পারে, সে দেশের অবকাঠমো উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে অর্জিত হবে?
উন্নত বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা একটি ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি বাংলাদেশের প্রচলিত প্রকিউরমেন্ট আইন অনুসারে শুধুমাত্র চুক্তি অনুযায়ী কার্য সম্পাদন না করতে পারার জন্য উক্ত “মেসার্স জামান কন্সস্ট্রাকশন” আজীবন “কালো তালিকা” ভুক্তি হবার কথা ।
পরবর্তীতে ঠিকাদার প্রকৌশলীকে প্রহার করে যে ফৌজদারি অপরাধ করেছে তা দেশের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী রাখে। আমি জানি না তা কতটুকু হবে। শুধু জানছি, যে ঠিকাদার তার NON-PERFORMANCE এর জন্য দৌড়ের উপর থাকার কথা সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাতে হচ্ছে।
আইইবি(IEB) এর মতো প্রকৌশলী সমাজের কি কোন ভুমিকা নেই ? এলজিডির মত এত বড় উন্নয়ন সংস্থাই বা কেন প্রতিবাদ করা, মানববন্ধন করা এবং আন্দোলন করার সাহস পায় না। কারন হতে পারে ঠিকাদারি ব্যবসা এ দেশে যারা করেন তারা অনেক ক্ষেত্রেই কোন না কোন ক্ষমতাসীন দলের এমপি কিংবা মন্ত্রী মহোদয়ের আশীর্বাদপুষ্ট । ব্যক্তি কিংবা কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যদি ঐ রকম আগ্রাসী ঠিকাদারদের বিপক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন না করা যায় তাতে একজন প্রকৌশলী কিংবা তার পরিবার শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বরং দেশের সামগ্রকি অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। উক্ত ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশের আর কোন সাহসী প্রকৌশলী পাওয়া যাবে না , যারা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার সাহস পাবে। প্রকারন্তে, এটাই হবে গুনগত মান রক্ষা করে অবকাঠামো উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উচিৎ হবে এ ধরনের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। অন্যথায় দেশের চলমান টেকসই উন্নয়ন এবং আগামী দশকের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মধ্যম আয়ের দেশ হবার লক্ষ্যমাত্রা শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে এবং মেধাবী ও সাহসী প্রকৌশলীরা দেশান্তরিত হয়ে বিদেশেমুখী হবে, দেশ বঞ্চিত হবে, ধীরে ধীরে মেধা শূন্য হয়ে যাবে।