সব

কম সুদে শিল্প ঋণের ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Wednesday 25th November 2015at 2:42 pm
30 Views

16

 

স্টাফ ডেয়াক ঃ উৎপাদনশীল  খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা ৩০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ দেয়া হবে। দীর্ঘমেয়াদি এ ঋণে অগ্রাধিকার পাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। একইসঙ্গে দেশের বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে যাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সুনাম রয়েছে, তারাও কম সুদ হারের এই ঋণ পাবেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপে বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র আফম আসাদুজ্জামান

বলেন, এ তহবিলের ঋণের সুদের হার ব্যাংক থেকে কম হওয়ায় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়বে। এর ফলে এটি শিল্প খাতে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বাজার তৈরিতে একটি বড় উৎস হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের শিল্প বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এ তহবিল থেকে ৫, ৭ ও ১০ বছর মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিতে পারবেন। এই ঋণের অর্থ দিয়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ও অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে। সচল শিল্প বিএমআরইকরণ বা শিল্পের নতুন ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে। এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে সর্বোচ্চ দুই বছর। ত্রি-মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মূল ঋণের সঙ্গে সুদ যোগ করে কিস্তি আদায় করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, এ তহবিল থেকে নেয়া ঋণের টাকায় কোনো জমি কেনা যাবে না। এ তহবিল থেকে যে কোনো রফতানিকারক, ক্ষুদ্র, মাঝারি বা বড় উদ্যোক্তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবেন। বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, এই তহবিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের একটি বাজার গড়ে উঠবে। মূলত এ লক্ষ্য থেকেই এ ধরনের একটি প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। কেননা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস একবারেই কম। এ অবস্থায় এ ঋণ শিল্পায়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়াতে বিশ্বব্যাংক এই তহবিলে অর্থসহায়তা দিচ্ছে। বিশেষ করে এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ সহায়তা পাবে। তিনি বলেন, ৩০ কোটি ডলার খুব বেশি না হলেও ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের হার কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে এ তহবিল। কারণ এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। বাড়বে অর্থ সরবরাহ। ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব ঋণের বাজারে পড়বেই।

জানা গেছে, এই তহবিলের চাহিদা বাড়লে এর আকার পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে। চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণের জোগান দেয়া হবে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে। ব্যাংকভেদে এ হার কম-বেশি হবে। ভালো ব্যাংকের জন্য সুদের হার কম হবে এবং খারাপ ব্যাংকের জন্য সুদ হার একটু বেশি হবে। ফলে গ্রাহকরা ভালো ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদের হারও কম হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেল রেটিংয়ে যেসব ব্যাংক এক নম্বর তালিকায় তাদের জন্য ৫ বছর মেয়াদে ৩ শতাংশ, ৭ বছর মেয়াদে সোয়া ৩ শতাংশ এবং ১০ বছর মেয়াদে সাড়ে ৩ শতাংশের সঙ্গে লাইবর রেট যোগ করে সুদের হার নির্ধারিত হবে। বর্তমানে লাইবর রেট হচ্ছে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।

যেসব ব্যাংকের রেটিং দুই, তারা ওই তহবিল থেকে ৫ বছর মেয়াদে সোয়া ৩ শতাংশ, ৭ বছর মেয়াদে সাড়ে ৩ শতাংশ এবং ১০ বছর মেয়াদে পৌনে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। এর সঙ্গে যোগ হবে লাইবর রেট। যেসব ব্যাংকের রেটিং তিন, তারা ওই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন ৫ বছর মেয়াদে সাড়ে ৩ শতাংশ, ৭ বছর মেয়াদে পৌনে ৪ শতাংশ এবং ১০ বছর মেয়াদে ৪ শতাংশ সুদে। এর সঙ্গে যোগ হবে লাইবর রেট। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এই সুদ হারের সঙ্গে বর্ধিত হারে আরও ১ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যোগ করতে পারবে। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রফিট রেট ১ শতাংশ, পরিচালন ব্যয় ১ শতাংশ এবং অন্যান্য ঝুঁকি খাতে ১ শতাংশ। উদ্যোক্তা পর্যায়ে সুদের হার ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। এখানে সুদের হার কোনো নির্দিষ্ট অংকে বাঁধা থাকবে না। এর ফলে ভালো গ্রাহকরা কম সুদে ঋণ পাবেন। একইভাবে ভালো নয় এমন গ্রাহকদের একটু বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে। তবে এ সুদের হার ৫-৬ শতাংশের বেশি হবে না। এ হার লন্ডনের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের (লাইবর) ৬ মাস মেয়াদি সুদ হারের সঙ্গে ওঠানামা করবে।

সূত্র জানায়, বাজারে ঋণের সুদের হার কমানোর নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরও তা খুব বেশি একটা সফল হচ্ছে না। এছাড়া শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়ার ব্যবস্থাও সীমিত। ব্যাংকগুলো মূলত চলতি মূলধনের জোগান দিতে পারে। তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ খুব বেশি দেয়ার সক্ষমতা নেই। সিন্ডিকেশনের (কয়েকটি ব্যাংক মিলে) দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়ার একটি উদ্যোগ ২০০৬ সালে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটি সফল হয়নি। শিল্প খাতে ঋণ দিতে একটি মাত্র বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। কিন্তু এটির আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যাপারে এক ধরনের সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করে শিল্প খাতে কম সুদে ঋণের জোগান বাড়ানোর জন্যই এ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ঋণ পাওয়া কঠিন। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এই ঋণ রফতানি খাতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। রফতানিমুখী শিল্প খাত বড় একটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে এ তহবিল কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাজারে ঋণের সুদের হার কমাতেও এ তহবিল সহায়ক হবে। কেননা স্বল্প সুদে ঋণ পেলে কেউ বেশি সুদে ঋণ নিতে চাইবেন না। এতে করে উচ্চ সুদে যারা ঋণ দিচ্ছে, তখন তারা সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে।

সূত্র জানায়, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রায় কম সুদে ঋণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হচ্ছে। এ টাকায় বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে গিয়ে আবার দিতে হচ্ছে কমিশন, যা তাদের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।


সর্বশেষ খবর