সব

বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Wednesday 25th November 2015at 2:55 pm
30 Views

17

 

স্টাফ ডেস্ক ঃ  বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একই দিনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একজন ব্লগার ও সেক্যুলার প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা এবং অপর দুই সেক্যুলার লেখক ও এক প্রকাশকের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে সবশেষ এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা। এই নিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার সেক্যুলার ব্লগারের পর এক প্রকাশককে নির্মমভাবে হত্যা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিদেশী গণমাধ্যমে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের খানিকটা তুলে ধরা হলো:

 

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস

 

“বাংলাদেশী সেক্যুলার প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা (Bangladeshi secular publisher hacked to death)” শীরোনামে পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের প্রতিবেদন বলা হয়, “শনিবার একই কায়দায় চালানো দ্বিতীয় হামলায় রাজধানী ঢাকায় এক বাংলাদেশী সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) বইয়ের প্রকাশক নিহত হন।”

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফয়সাল আরেফিন দীপনকে (৪৩) শহরের একেবারে কেন্দ্রভাগে অবস্থিত নিজ অফিসে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে অপর একজন প্রকাশক ও দুই সেক্যুলার লেখকের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তারা গুরুতর আহত হন।

 

 

বিবিসির রিপোর্টে আরও বলা হয়, সন্দেহভাজন ‘ইসলামিস্ট’দের হামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার অভিজিৎ রায় নিহত হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ‘সেক্যুলারিস্ট’দের ওপর চালানো এমন নৃশংস হামলার সবশেষ শিকার এই চারজন।

 

শনিবারের হামলায় নিহত ও আহত দুই প্রকাশকই ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করতো বলেও উল্লেখ করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

 

তিন তলায় নিজ অফিস “জাগৃতি প্রকাশনী”তে মিস্টার দীপনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়-উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস আরও জানায়, দীপনের বাবা লেখক আবুল কাশেম ফজলুল হক তার ছেলেকে রক্তের স্তুপের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। দুর্বৃত্তরা দীপনকে গলাকেটে জবাই করে রেখে যায়।

 

একই দিন শনিবার সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা আহমেদুর রশিদ টুটুল নামের আরেক প্রকাশকের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশক টুটুল এবং তার সাথে থাকা দুই লেখককে ছুরি দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে। গুরুতরো আহত তিনজনকে প্রকাশনী কার্যালয়ে আটকে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।

 

তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। আহত দুই লেখকের মধ্যে রয়েছেন রনদীপ বসু এবং তারেক রহিম।

 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

 

 

“বাংলাদেশে সেক্যুলার বইয়ের প্রকাশক নিহত, ৩ জন আহত (Publisher of Secular Books Killed, 3 Wounded in Bangladesh)” শীরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, শনিবার বাংলাদেশের রাজধানীতে দুই পৃথক সন্ত্রাসী হামলায় প্রকাশনী কার্যালয়ে সেক্যুলার বইয়ের একজন লেখককে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তিনজনকে আহত করা হয়।

 

বাংলাদেশে “মৌলবাদী ইসলাম”-এর উত্থান নিয়ে যখন আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছিল তার মধ্যেই ঢাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটলো বলেও আমেরিকার প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়।

 

দেশটিতে চলতি বছরে অন্তত চারজন ‘নাস্তিক’ ব্লগারকে (atheist bloggers) হত্যা করা হলো-এমন মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়-অবশ্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আই এস (Islamic State) অপর তিনটি হামলার দায় স্বীকার করেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবারের হামলার শিকার দুই প্রকাশকই গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্ত্রীকে নিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশী বংশদ্ভুত আমেরিকান ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের লেখা প্রকাশ করতো।

 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরে ‘ইসলামি’ক চরমপন্থীদের একের পর এক হামলা বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে ব্লগার এবং অতি সম্প্রতি একজন ইতালিয়ান এনজিও কর্মী ও একজন জাপানি কৃষককে হত্যা করা হয়।

 

ইসলামিক স্টেট (আইএস) দুই বিদেশীকে হত্যা ও বোমা হামলার দায় স্বীকার করলেও এই ‘সুন্নী’ সন্ত্রাসী গ্রুপটির বাংলাদেশে অবস্থানের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করছে না বলেও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইএসের বিষয়টি অস্বীকার করে এর পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দলে লিপ্ত দেশটির স্থানীয় ইসলামিক গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল-বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এর প্রধান সহযোগী জামায়াত-ই-ইসলামীকে দায়ী করছে।

 

এনডিটিভির প্রতিবেদন

 

 

“কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ব্লগারদের ওপর হামলা, ঢাকায় নাস্তিক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা (Hours After Attack on Bloggers, Atheist Publisher Hacked to Death in Dhaka)” শীরোনামে ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সেক্যুলার লেখকরা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। দক্ষিণ এশিয়ার ১৬ কোটি জন অধ্যুষিত এই দেশটির সরকার যখন শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমনাভিযান চালানো শুরু করেছে তখনই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভয়াবহ কয়েকটি হামলায় দেশটি (বাংলাদেশ) রীতিমতো কেঁপে উঠেছে। এসব হামলায় দুই বিদেশী নিহত হয়েছেন এবং সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায় বোমা হামলার শিকার হয়েছে।

 

আলজাজিরার প্রতিবেদন

 

 

“বাংলাদেশে সেক্যুলার প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা (Secular publisher hacked to death in Bangladesh)” শীরোনামে আলজাজিরার প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের গবেষক আব্বাস ফয়েজের বরাত দিয়ে বলা হয়, পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে, বিশেষ করে তারা (সন্ত্রাসীরা) যেভাবে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে তার মধ্য দিয়ে।

 

আব্বাস ফয়েজের বরাত দিয়ে আলজাজিরা আরও জানায়, সবশেষ এমন জঘন্য আক্রমনের মাধ্যমে দেশটিতে (বাংলাদেশে) মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত দেয়া হলো।

 

আব্বাস ফয়েজ বলেন, ভয়াবহ এসব হামলার ধরন দেখে আমরা এমন আশংকাই করছি যে, এখন অনেকের জীবনই ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে।

 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যা ও অপরাপর ব্লগারদের হত্যার হুমকির দায় স্বীকার করেছে।

 

ডনের প্রতিবেদন

 

 

“বাংলাদেশে সেক্যুলার প্রকাশককে হত্যা (Secular publisher killed in Bangladesh)” শীরোনামে পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক “দি ডন” এর প্রতিবেদনে বলা হয়, একের পর এক ব্লগার হত্যা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেক্যুলার সরকার ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও সতর্ক বার্তা উচ্চারিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকার যখন যে কোন মূল্যে খুনিদের ধরার কথা ঘোষণা দেয়া হয় তখনই ইসলামিস্টদের পক্ষ থেকে এমন সহিংস রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখানো হলো।

 

একটি উগ্র ইসলামিস্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হিটলিস্টে যাদের নাম এসেছে তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহন করেছে বলেও ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা অন্যান্য লেখালেখির মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করছেন তাদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কতিপয় ইসলামিস্ট।

 

তবে, যেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে তা বাংলাদেশকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে এবং এর ফলে একটি উদার মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে সুনাম রয়েছে তা ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়।

 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাজিব হায়দার মিরপুরে নিজ বাড়িতে খুন হন। কিন্তু সেই খুন নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এরকোনো বিচার হয়নি।

 

এই ঘটনার দুই বছর পর চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। এর পরের মাসে ৩০ মার্চ খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ১২ মে অনন্ত বিজয় দাস এবং ৭ আগস্ট নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় খুন হন। এছাড়াহামলার শিকার হন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন।

– See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/64646#sthash.v6bdwBk3.dpuf


সর্বশেষ খবর