রোজায় বিএসটিআই অভিযান নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাজারে বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য থাকায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন করে প্রতিনিধিকে তলব করেছেন। উপপরিচালকের নিচে নয়, এমন পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে রবিবার আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত হওয়ার পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেজাল ও নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং নতুন করে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের ওপর ওইদিন আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিষ্টার শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
ভেজাল ও নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার না করায় বিএসটিআইয়ের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একইসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দায়দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন আদালতের।
আদালত বলেন, তারা বড় বড় অফিস নিয়ে বসে আছে। তাদের কাজটা কি? তারা দায়িত্ব পালন করতে না পারলে অফিস ছেড়ে দিক। আদালত বলেন, বিএসটিআই একটি বিশেষ সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ধরা পড়লো। এরপর শুধু শোকজ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ? তাদের ওইসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন আছে। আইনে তাদের সব দেখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কি করছে? তারা কাজ করতে না পারলে অফিস ছেড়ে দিক। আমরা কেন এসব দেখতে যাবো।
আদালত বলেন, প্রতি সপ্তাহে একটি করে জনস্বার্থমূলক বিষয় আমাদের সামনে আসছে। এসব বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, আমরা মানুষের অন্য মামলা করব না এগুলো দেখব? এগুলো তো সরকারের কাজ। এগুলো দেখার দায়িত্ব সরকারের। আদালতের কাজ নয়। সরকার কি করছে? কোথাও ভেজাল হচ্ছে, কারাগারে মানুষ পড়ে যাচ্ছে, মাংসে ভেজাল, ভেজাল পানি, ভেজাল খাদ্য, বিভিন্ন ভেজাল পন্যে বাজার ভরে গেছে। দেখছি হলুদের গুড়ায় ভেজাল, ব্র্যান্ডের তেলে ভেজাল, সেমাইতে ভেজাল। কিন্তু বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলো আমাদের সামনে আসলে আমরাতো ফেলে দিতে পারিনা। এসব দেখে কি আমরা বসে থাকবো? তা হয় না। আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এসব আমরা দেখলে আমাদের সমালোচনা করা হয়।
আদালত বলেন, রোজা আসলেই বিএসটিআই পণ্যের মান পরীক্ষা করে। ভেজাল বিরোধী অভিযানে নামে। রোজার সঙ্গে এর সম্পর্ক কি? তারা (বিএসটিআই) অন্য সময় কি করে?
বিএসটিআইয়ের চিহ্নিত ৫২টি পণ্যের তালিকা দেখে আদালত বলেন, এসব পণ্য বাজারে আছে কীনা তা তাদের (বিএসটিআই) কাছ থেকে জানা দরকার। আদালত বলেন, এখানে রুপচাঁদা, প্রাণ কম্পানির পণ্য দেখছি। যেসব পণ্যের তালিকা দেখছি তাতো ঘরে ঘরে মানুষ সচরাচার ব্যবহার করছে। কোনো কম্পানিইতো বাদ নেই। অনেক বড় বড় কম্পানির পণ্য বিদেশ রপ্তানি হয়। আমাদের গর্ভে বুক ভরে যায়। অথচ তাদের পণ্য নিম্নমানের, ভেজাল? এ কি অবস্থা!
খাদ্যে ভেজাল রোধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা তুলে ধরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই আইনে খাদ্যে ভেজালের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদ-) বিধান রয়েছে। তারপরও ভেজাল থেমে নেই। কেন ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়না?
জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের বিষয়ে গত ৩ মে দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘৫২ প্রতিষ্ঠানকে বিএসটিআইয়ের কারণ দর্শানোর নোটিশ, নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যও নিম্নমানের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই বিষয়ে এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে বুধবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদন করার আগে খাদ্য ও বাণিজ্য সচিব, বিএসটিআই মহাপরিচালক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও তাজীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে ৮ মে রিট আবেতন করা হয়। গতকাল এই রিট আবেদন শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করে আইনজীবী বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। মানুষ অসহায়। এসব পণ্য খেয়েতো মানুষ মারা যাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শিশুদের। যাদের দেখার দাযিত্ব তারা হাতপা গুটিয়ে বসে আছে। বিএসটিআই শোকজ করেই চুপ। এরপরই আদালত উল্লেখিত মন্তব্য করেন।