জেগে থাকল বাংলাদেশের ফুটবল
খেলাধুলা ডেস্কঃ যেটা সচরাচর দেখা যায় না! ম্যাচ শেষে একদল সমর্থক ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ-অধিনায়কের হাতে সেই তোড়া দিয়েই যেন জানিয়ে দিল ‘আজ ফুটবলের দিনবদলের দিন’। অনেক গোল মিসের পর লাওসের সঙ্গে কাল গোলশূন্য ড্র করেও বাংলাদেশ ফুটবল ভাসছে উৎসবে। অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতার সুবাদে বাংলাদেশ প্রাক-বাছাই পর্ব পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের মূল বাছাই পর্বে। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ভাষায়, ‘এটা দুর্দান্ত এক আনন্দের দিন। হয়তো আমাদের খেলা গোলের প্রত্যাশা মেটায়নি। মাঝে মাঝে ট্যাকটিকাল ফুটবল খেলেই প্রত্যাশা মেটাতে হয়।’
এই এক ম্যাচের গর্ভেই লুকিয়ে ছিল দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে আগামী দুই-আড়াই বছর। হারলে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাই থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ফিফা-এএফসির কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলারও সুযোগ মিলবে না। এমন ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মাঠে নামা মানে বিশাল চাপ। এই চাপে বুঝি জামাল-রবিউলদের স্বাভাবিক খেলা গুলিয়ে যায়। দেশের মাঠেও ঠিক ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না শুরুতে। তবে সময় যত এগিয়েছে, চাপ সামলে তাঁদের মনে ফিরেছে বিশ্বাস। সুবাদে লাল-সবুজের ফুটবলেও আস্তে আস্তে রূপ-রস যোগ হয়। আক্রমণের বৈচিত্র্যে ও গোলের সুযোগে খেলা রূপসী হয়,তবে গোল মিসের বদ অভ্যাসে সেটি আর অপরূপ হতে পারেনি। তাতেও অবশ্য খুব আক্ষেপ নেই, ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে আগের ম্যাচ জয়ের সুবাদে বাংলাদেশের উত্তরণ হয়েছে বিশ্বকাপের মূল বাছাই পর্বে। আড়াই বছর আর ম্যাচহীন থাকতে হবে না তাদের। আগামী এক-দেড় বছরে অন্তত আটটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের ফুটবল ‘হোম অ্যাডভানটেজে’ খুব বিশ্বাসী নয়! এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তাদের সমীকরণ মেলাতে না পারার অনেক ব্যর্থতা আছে। হয়তো বা খেলা ভুলে ম্যাচের চাপ-তাপের কাছে নিজেদের সঁপে দেয়। এ জন্যই কাল অন টার্গেটে প্রথম শট নিতে লেগে যায় ১৮ মিনিট, নাবিব নেওয়াজের কোনাকুনি শট গ্রিপে নেন লাওস গোলরক্ষক। ২৫ মিনিটে আবাহনীর এই ফরোয়ার্ডের পায়ে গোলের আবহ হতে পারত। বিশ্বনাথের লং বলটি প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে নাবিবের সামনে সুযোগ তৈরি হয়; কিন্তু তাঁর শট গোলরক্ষকের গায়ে লেগে চলে যায় বাইরে। ৩৮ মিনিটে রবিউলের বুদ্ধিদীপ্ত এক ডেলিভারিতে লাওসের গোলমুখ খুলে যায়। এগিয়ে আসে লাওস গোলরক্ষক। বাউন্সের ওপর নেওয়া নাবিবের ফ্লিকটি পোস্টে থাকলে দুর্দান্ত এক গোল হতো। দুর্ভাগ্য, সেটি যায় ক্রসবার উঁচিয়ে। এবার ঘরোয়া লিগে সফল এই স্ট্রাইকারের গোলের দুর্ভাগ্য কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সেটা প্রলম্বিত হয় ৫২ মিনিটে এক অমার্জনীয় মিসে, ইব্রাহিমের নিখুঁত ক্রসটি একদম তাঁর মাথায় পড়েছিল। প্রায় সাত গজ দূর থেকে সেই হেডে জাল ছিঁড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে দুর্বল হেড, যেন পাস দিয়ে গোলরক্ষকের হাতে তুলে দিয়েছেন।
পরে এই গোল মিসের আক্ষেপে পুড়িয়েছেন সুফিল-ইব্রাহিমও। ৭৯ মিনিটে সেই নাবিবের বানিয়ে দেওয়া বলে বদলি নামা সুফিল পা ছোঁয়ালেই গ্যালারি মেতে ওঠে অসম্ভব এক প্রাপ্তির আনন্দে। সেটাও হয়নি। ৮৮ মিনিটেও ফাঁকায় দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম বল জালে পাঠাতে পারেননি, পোস্টের সামনে তাঁর হেড গেছে। অথচ অমন এক গোল এবং জয় দেখার জন্য কাল হাজার দশেক দর্শক হাজির হয়েছিল স্টেডিয়ামে। তারাও জেনে গিয়েছিল, ম্যাচটি হারলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাই ফুটবলের সঙ্গী হয়ে কাল স্টেডিয়ামমুখো হয়েছিল দর্শক। তাদেরকে জয় উপহার দিতে না পারলেও বাংলাদেশের ফুটবলাররা দেখিয়েছেন তাঁরা খেলতে জানেন। লাওসের দাপট থামিয়ে তাঁরা গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেন। গোল করতে না পারলেও ম্যাচ ড্র করে এই সমর্থকদের বিশ্বকাপের মূল বাছাইয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। তাই বাংলাদেশ কোচ জেমি ডেও গোল মিসের হাপিত্যেশ করছেন না, ‘আমরা চারটি সুযোগ পেয়েছিলাম, যেগুলো গোল হতে পারত। হয়নি, তাতে কোনো আক্ষেপ নেই। কাউকে দোষারোপও করছি না। কারণ আমাদের যা দরকার ছিল, সেটাই পেয়েছি। এখন হবে উৎসব।’
ড্র ম্যাচও বাংলাদেশ ফুটবলকে মাতাচ্ছে উৎসবের আনন্দে।
বাংলাদেশ : আশরাফুল রানা, রহমত মিয়া, ইয়াসিন খান, টুটুল হোসেন, জামাল ভূঁইয়া, মামুনুল ইসলাম, নাবিব নেওয়াজ, বিশ্বনাথ ঘোষ, মাশুক মিয়া (সুফিল), বিপলু আহমেদ (ইব্রাহিম), রবিউল হাসান।