শর্তের বেড়াজালে রাজস্বছাড়
অর্থনীতি ডেস্কঃ মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী দেশি প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন শেষ হলে প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ থেকে ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদানে বাধ্য থাকবে। মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জনবল ২৫০ জনের কম হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশের বেশি ভ্যাট প্রদান করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনে যাওয়ার আগেই মূল্য সংযোজনের পক্ষে ঘোষণা দিতে হবে। এ ঘোষণার ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে রাজস্বছাড়ের সুবিধা বাতিল হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেট বত্তৃদ্ধতায় দু-চারটি বাক্যে বিশেষ ক্ষেত্রে রাজস্ব ছাড়ের অনেক সুবিধার কথা জানানো হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে হাজারো শর্ত।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নৌ ও সড়কপথে যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থ আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে—নৌপথ ও সড়কপথে চলাচলকারী এসব পরিবহনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত আয়করের পরিমাণের শতকরা এক হাজার ভাগ আয়কর এসব যানবাহন রেজিস্ট্রেশনের সময় পরিশোধ করলেই এ সুবিধা পাওয়া যাবে। এসআরওতে উল্লেখ আছে, নৌপথে কার্গো, কনটেইনার, কোস্টার, ডাম্পবার্জারের আয়কর সার্ভে সার্টিফিকেট নবায়নের আগেই পরিশোধ করতে হবে।
মোটরসাইকেল উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই বিডা, বেপজা থেকে উৎপাদক হিসেবে নিবন্ধন এবং বিআরটিএ থেকে উৎপাদনের অনুমোদন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্য সংযোজনের পক্ষে ঘোষণা দিতে হবে। ঘোষিত মূল্যের ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। এসব শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা হবে না। আরো শর্ত দেওয়া হয়েছে—৩০ জুনের আগে যেসব দেশি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সাত বছর বা এর বেশি, পাঁচ বছর বা এর বেশি, তিন বছর বা এর বেশি সময় ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করবে। মোবাইল ফোনসেট বা সেলুলার উৎপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রদান করে ৫ শতাংশের বেশি যেসব রাজস্ব আসবে, তা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জনবলের সংখ্যা কমপক্ষে ২৫০ জন থাকতে হবে।
বাংলাদেশে অবস্থিত ২৯টি দেশের দূতবাস—বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রুনেই, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইরাক, ইতালি, জাপান, জর্দান, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, মরক্কো, নেপাল, ওমান, ফিলিপাইন, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সাউথ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তানের জাতীয় দিবস ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেবা প্রদানে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, ওই সব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও একই সুবিধা দিতে হবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কম্পানি যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করবে কমপক্ষে তার সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে হবে। যদি কম্পানি ঘোষিত স্টক ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তবে ঘোষিত সম্পূর্ণ স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কম্পানিকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড (স্টক ও ক্যাশ) প্রদান করতে হবে। যদি কোনো কম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছরে রিটেইন আয়, ফান্ড, রিজার্ভ ও সারপ্লাসের স্থানান্তরিত মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সুতা সরবরাহের ওপর প্রতি কেজি সুতায় চার টাকা হারে, শিপ স্ক্র্যাপের ওপর প্রতি টনে এক হাজার টাকা, এমএস রডে উপকরণভেদে প্রতি টনে যথাক্রমে এক হাজার টাকা, এক হাজার দুই শ টাকা এবং দুই হাজার টাকা নির্দিষ্ট কর আরোপ করা হয়েছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রি ও রাইড শেয়ারিং (ই-কমার্স) সেবায় ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট, আনকোটেড পেপার, কোটেড পেপার, রিলিজ পেপার, ইনসুলেটেড পেপার ও স্টিকার পেপারে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের পাশাপাশি জিপসাম প্লাস্টার বোর্ড ও শিট আমদানিতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ব্লেন্ডার, মিক্সার গ্রিন্ডার আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কাঁচামাল আমদানির ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও সমজাতীয় পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। কম্প্রেসর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল অ্যালুমিনিয়ান উইন্ড আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ডুপ্লেক্স বোর্ড, কার্ড বোর্ড, সুইডিশ বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।