কুবি ছাত্রলীগ নেতার হুমকি, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো
আমারবাংলা ডেস্কঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি ও লাঞ্ছিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল এবং মোঃ রাইহান ওরফে জিসান। শুক্রবার রাত দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সংঘর্ষ হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তারা এ হুমকির দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিকরা জানান, এসময় অভিযুক্তরা উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন এবং সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল পুনরায় সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে বলেন, গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।
এসময় তার সঙ্গে থাকা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য স্বদলবলে তেড়ে আসেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ শাখার সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করা চেষ্টা করেন।
তবে সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কালকে কোনো অস্ত্র ছিলো না। অপর ছাত্রলীগ নেতা জিসানকে ফোন দেয়া হলেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন হিমেল। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নং কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এ ছাত্রলীগ নেতা গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ নিয়ে ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল।
অপর ছাত্রলীগ নেতা জিসান গভীর রাতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নাম্বার কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে আসর বসান বলে অভিযোগ আছে। দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই হলের মাদকের ছড়াছড়িতে এই দুই নেতার যোগসাজশ আছে ও তারাই নেতৃত্ব দেন।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া ছাত্রলীগের আদর্শ বিরোধী।
মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন যদি কোন ব্যাবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে শাখা ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পরও সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সাথে যারা অছাত্রসূলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নিব। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
সূত্র কালের কন্ঠ